ভারতের সমাজগুলিকে  বাঁচাতে বিকেন্দ্রীক অর্থনৈতিক আন্দোলন জরুরী

লেখক
প্রভাত খাঁ

প্রথমেই বলি ভারতে যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের নির্দ্দেশ মতাবেক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম আছে৷ এখানকার কেন্দ্রীয় শাসকগণ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ব্যবহার করে৷ছলে-বলে কৌশলে  কেন্দ্রের শাসক রাজ্যের  সরকারকে ভেঙ্গে দিয়ে নিজেদের অধীনে এনে শাসন ক্ষমতা কায়েম রাখে৷ স্বৈরাচারিতার এই নজির রেখে গেছে বিগত কংগ্রেস সরকার ইন্দিরা গান্ধীর আমলে৷ কিন্তু কংগ্রেসের পরিণতি মোটেই উজ্জ্বল ও গৌরবের নয়৷ বর্ত্তমানে যে দল শাসনে এসেছে  তাদেরও শাসন ব্যবস্থায় দেশবাসী সন্তুষ্ট নয় ৷ কারণ তাদের আর্থিক সংস্কার  জনগণকে  পথে বসিয়েছে৷ তাছাড়া বিদেশী তাড়ানোর নামে যা কান্ড করছে সেটা মানবতাকে ও গণতন্ত্রকেই ধবংস করবে৷ সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে রেখে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ও বিশ্বৈকতাবোধকেই বিনাশ  করছে৷ ধনীদেরই তোষণ করে  গরীব কোটি কোটি  সাধারণ নাগরিকদের  জীবন অতিষ্ট করে তুলছে৷ মানুষের  মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে তারা গণতন্ত্রকে এক নক্কারজনক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে ৷ এরা নিজেদের ব্যর্থতাকে চাপা দিতে গিয়ে পরিহাসের  পাত্রই হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের চোখে৷ এতে ক্ষুদ্ধ  হয়ে  শাসক দলের  মন্ত্রী এমনকি কিছু  তাঁবেদার দলের নেতা, নেত্রী ও এই বাংলার বড়োমাপের নেতা নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জীকে শুধু হেয় করেননি৷

এমনকি তাঁর ব্যষ্টি জীবনকে নিয়ে অতি নিম্নমানের বক্তব্য রেখে বাঙালী জনগোষ্ঠীর মুখ পুড়িয়ে বসেছেন৷ এই রাজ্যের  কিছু মানুষ অতীতেও  নেতাজীর মতো মহান ব্যাষ্টিকে কুৎসিতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে নিজেদেরই সংকীর্ণতা ও নীচতাকে প্রকাশ করে গেছেন৷ তাতে দেশের ও দশের ক্ষতিই হয়েছে আর ভারতের  তথা বাংলায় সর্বনাশ হয়েছে৷

আজ সমস্যা সংকূল পশ্চিম বাংলায় শত শত মীরজাফরের জন্ম হয়েছে যারা নিজেদের কুৎসিৎ ও সঙ্কীর্ণ স্বার্থকে চরিতার্থ করতে সাম্প্রদায়িকতার ধবজাধারীদের  হয়ে ২ কোটি বাঙালীকে  বিতাড়ণের হুমকী দিয়ে চলেছে এন.আর.সির  মতো কালাকানুনের অস্ত্রের আঘাতে৷ অসমের হাজেল তো ১৯ লক্ষ হতভাগ্যকে নাগরিকত্ত্বহীন করে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে৷ মানুষের ক্ষোভের হাত থেকে বাঁচাতে  তাঁকে  ভিন রাজ্যে বদলি করা হয়েছে৷ এই পশ্চিম বাঙলায় বিজেপির রাজনৈতিক নেতা দিলীপবাবু  তো হুংকার দিয়ে বলেছেন যে তারা পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পালটিয়ে আগামী ২০২১-এ রাজ্য নির্বাচন করবে৷ অর্র্থৎ যেন তেন প্রকারেণ রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাজনৈতিক হত্যা, আরো অনেক অভিযোগ  কেন্দ্রের হাতে তুলে দিয়ে  অতীতের মতো এরাজ্যে  রাষ্ট্রপতি শাসন রাজি করারই ফিকির  প্রতিদিনই আটছে ও সে সবের  নজির দিল্লিতে পাঠাচ্ছে৷ কেননা এ রাজ্যের  সরকারকে ফেলে পশ্চিমবাঙলার কেন্দ্রীয় শাসন ক্ষমতা কায়েম করতে পারলে বাঙলাকে লুণ্ঠন করা অনেক সহজ হবে আর বাঙালীকে বিদেশী বানিয়ে দেশছাড়া করার পথ প্রশস্থ হবে৷ তবে ‘‘বাংলার মাটি শক্ত ঘাঁটি’’ এটা মনে রাখতে হবে ধান্দাবাজ বিজেপি নেতাদের৷

ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ‘বাঙলা চিরকালই একটু  ভিন্নপথেই চলে৷ তাই এখানে কেন্দ্রের সরাসরি শাসন অন্তত ৭২ বছরে কংগ্রেস ছাড়া কেন্দ্রে আসীন কোন  দলই সুযোগ পায়নি৷ ‘বাঙলাকে বশে আনতে হলে বাঙলার কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে  মান্যতা দিতে হবে, বাংলাভাষাকে মর্য্যাদা দিতে হবে আর বাঙলার হিন্দুও মুসলমান জনগোষ্ঠী এক কথায়  বাঙালী জনগোষ্ঠীকে মর্য্যাদা ও সম্মান দিতে হবে৷

তাছাড়া জঘন্য সাম্প্রদায়িকতাকে এই পশ্চিম বাঙলার জনগণ কোনদিন গ্রহণ করেনি ও করবে না৷

তাই বাঙলার বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর কবিতা ও গানে লিখেছেন ---

‘‘হিন্দু না ওরা মুসলিম

ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন?

কান্ডারী, বলো ডুবিছে মানুষ

সন্তান মোর মার’’৷

এখানে মা বলতে ভারত তথা বাঙলা আর

কান্ডারী বলতে দেশনেতাকে বোঝানো হয়েছে৷

অত্যন্ত বেদনার ও লজ্জার কথা দেশ নেতারা তো স্বার্থের লোভে সাম্প্রদায়িকতা ভিত্তি ভারত ভাগ করেছেন--- হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান৷ আজ লড়াই করে ধবংস হচ্ছে দুটো দেশই৷

তাই সমগ্র ভারতবাসী যেন এইসব নিয়ে  মাথা না  ঘামিয়ে হিন্দু মুসলমান সকলেই যেন ভারতীয় হয়ে চলতে পারে৷  মানবতাকে মর্য্যাদা দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলতে শেখে, আর রাজনৈতিক স্বার্থে গঠিত রাজ্যগুলোকে নতুন করে স্থানীয় সম্পদের ওপর ভিত্তি করে স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে৷  সেই সঙ্গে প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ তবেই মানুষ সুখের মুখ দেখবে৷ দেশে  শান্তি  প্রতিষ্ঠা  হবে৷ ভারত বাঁচবে আর সেই সঙ্গে গণতন্ত্র স্বীকৃতি পাবে!