ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক  বিদ্বেষ ছড়ানো ধর্মের অবমাননা

লেখক
সত্যসন্ধ দেব

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ধর্মের নামে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিষ ছড়াচ্ছে৷ সাম্প্রদায়িক বিভাজন ভিত্তিক এনসিআর ও সিএএ আজ সারা দেশে অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে৷ সমাজের ঐক্য ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে৷ অথচ একতা ও সুবুদ্ধি ছাড়া কোন দেশের, কোন অঞ্চলের উন্নয়ন বা কোনরকম কল্যাণ করা সম্ভব নয়৷

আজ সারা দেশে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সমস্যা৷ সদ্য প্রকাশিত আন্তর্জাতিক স্তরের সমীক্ষায় দেখা গেছে ক্ষুধা সূচকের তালিকায় ভারতের স্থান ১১৭টি দেশের মধ্যে ১০২-এ৷ বাঙলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইরাক ও কম্বোডিয়ার স্থান ভারতের ওপরে৷ কী লজ্জার ও দুঃখের ব্যাপার!

দেশের বেকারত্বের হারও হু হু করে বেড়েছে৷ গত মাসে রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ মানস ভুঁইয়া দেশের বেকারত্ব সম্বন্ধে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী উত্তর দিয়েছেন ২০১৩-১৪ সালে লেবার ব্যুরোর সমীক্ষায় বেকারত্বের হার ছিল ৩.৪ শতাংশ৷ ২০১৫-১৬-তে বেকারত্বের হার হয় ৩.৭ শতাংশ৷ বর্তমানে ন্যাশনাল স্ট্যাস্টিসটিকাল অফিস (এন.এস.ও) ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক পিরিয়োডিক লেবার ফোর্স সার্ভের রেজাল্ট বলেছে গোটা দেশে বেকারত্বের  হার ৬ শতাংশ৷ অর্থাৎ বেকারত্বের  হার দ্রুত বাড়ছে৷

নোট বাতিলের পর ক্ষুদ্র ব্যবসা মার খাচ্ছে অথচ পুঁজিপতিদের আয় কয়েক হাজার গুণ বেড়েছে৷ দেশের সর্বসাধারণ তাদের সামান্য পুঁজি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রেখেছেন নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে৷ আর দেশের এক শ্রেণীর পুঁজিপতি ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না৷ কেউ কেউ ব্যাঙ্কের টাকা শোধ না করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে৷ মোদীজী ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলেন বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে এনে দেশের সমস্ত গরীব মানুষের প্রত্যেকের নামে ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করে দেবেন৷ সেই কালো টাকার কোনমাত্র হদিশ পাওয়া গেল না৷ উল্টে গরীবের আমানতের টাকা ব্যাঙ্ক থেকে জালিয়াতি করে নিয়ে চলে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ দেশের শাদা টাকাই কালো টাকা হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে৷

সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে বেসরকারী মালিকানার কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ভারতীয় রেলকেও বেসরকারী হাতে তুলে দিচ্ছেন৷

দেশের খাদ্য উৎপাদন করছে যে চাষীভাইরা তারা ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে, ঋণ মেটাতে না পেরে, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে৷  সরকার কিছুদিন পূর্বে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস্ ব্যুরোর রিপোর্ট থেকে জানায় ভারতে প্রতি মাসে গড়ে ৯৪৮ জন অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩১ জন চাষী আত্মহত্যা করছে৷

দেশের এই যখন দুরবস্থা সরকারের উচিত  সর্বশক্তি দিয়ে এই অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে সাধারণকে বাঁচানো উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে৷ কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্পের ব্যাপক উন্নয়নের জন্যে অবিলম্বে সরকারের ঝাঁপিয়ে পড়া দরকার ছিল৷ তা না করে সরকার দেশ জুড়ে এন.আর.সি., ,সি.এ.এ.-র নামে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের তাস খেলছেন৷ এরফলে বিজেপি দেশজুড়ে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে৷ এটা খুবই দুঃখের৷ তারা নিজেদের ভারতীয় ধর্মের ধবজাধারী রূপে জাহির করেন৷

কিন্তু প্রকৃত ধর্ম তো এইভাবে মানুষে মানুষে বিভাজন করার কথা বলে না৷ বেদ, উপনিষদ ,গীতা, ভাগবৎ ভারতীয় এইসব প্রধান ধর্মগ্রন্থে মানব প্রেমের কথাই বলা হয়৷ উপনিষদ বলছে---‘শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ’  --- হে অমৃতের পুত্রগণ তোমরা শোন, ঋষি সমস্ত মানুষকে অমৃতের পুত্র  রূপে সম্বোধন করছেন৷ ঋষি বলেছেন---‘বসুধৈব কুটুম্বকম’৷ বিশ্বের সবাই আমাদের পরমাত্মীয়৷ ‘সর্ববিষ্ণুময় জগৎ’---সমস্ত মানুষের মধ্যে, সমস্ত জীবের মধ্যে ঈশ্বর রয়েছেন৷ স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন---

‘জীবে প্রেম করে যেই জন

সেই জন সেবিছে ঈশ্বর৷’

মুখে ধর্মের কথা বলে ধর্মের মূল বাণী সেবা ও মানবপ্রেমের উল্টো পথে গিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ ছড়ানো ধর্মের অবমাননা ছাড়া আর কি!