এ লজ্জা রাখি কোথায়!

সংবাদদাতা
কণিকা দেবনাথ
সময়

হিন্দী ভারতের রাষ্ট্রভাষা নয়৷ ভারতের সংবিধানে কোন নির্দিষ্ট ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করা হয়নি৷ কিন্তু ছোট্ট থেকে আমাদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে হিন্দী রাষ্ট্র ভাষা৷ এমনকি  ত্রিপুরা বোর্ডের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর হিন্দী পাঠ্য বইয়ের নামই দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রভাষা হিন্দী৷ বই দুটি যে বা যাঁরা লিখেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই শিক্ষিত সমাজের খুব উঁচুদরের মানুষ৷ তাঁরা না জেনে এটা করেনি৷ ভাবতে লজ্জা হচ্ছে আমাদের শিক্ষিত সমাজেরও কিছু মানুষ নির্লজ্জ ভাবে হিন্দীর তাঁবেদারি করছে৷

এমনকি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতেও শিশুদের মগজে ইংরাজীর বদলে হিন্দী ঢোকানো হচ্ছে যাতে ছোট থেকেই শিশুরা হিন্দী বলতে বাধ্য হয়৷ খুবই খারাপ লাগে যখন শুনি ছোট ছোট শিশুগুলো নিজেদের মধ্যে হিন্দীতে কথা বলছে৷ অথচ এরা সবাই বাঙালী ঘরের ছেলে৷

ঠিক একইভাবে ত্রিপুরার ভূমিপুত্র বাঙালীদের বোঝানো হচ্ছে ত্রিপুরা বাঙালীদের ভূমি নয়৷ বাঙালীরা এখানে আশ্রিত৷ কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে৷ হাজার হাজার বছর ধরে এ মাটি বাঙলার মাটি৷ টিপরারাই কয়েকশ’ বছর আগে ব্রহ্মদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে এসে আশ্রয় নেয়৷ তারাই আজ এ মাটির ভূমিপুত্র হয়ে গেল আর বাঙালীরা বিদেশী!

ভোটের স্বার্থে বাম-কংগ্রেস উভয়েই টিপ্রাদের তোয়াজ করে চলেছে৷ বাম আমলে ত্রিপুরার মোট আয়তনের ৬৮ শতাংশ উপজাতিদের জন্যে সংরক্ষিত করে দেওয়া  হয়৷ তৈরী হয় উপজাতি স্বশাসিত অঞ্চল৷ কী অদ্ভুত ব্যাপার! ৭৮ শতাংশ ভূমিপুত্রদের জন্য রাজ্যের ৩২ শতাংশ অঞ্চল আর ২২ শতাংশ উপজাতির জন্যে  ৬৮ শতাংশ অঞ্চল৷

এইভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে ত্রিপুরার মাটিতে বাঙালীদের বিদেশী বানাবার চক্রান্ত চলছে৷  এন.আর.সি., সি.এ.এ. সবই বাঙালী বিদ্বেষী চক্রান্তের অঙ্গ৷ বিপুল সংখ্যক বাঙালী জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক দল উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই করে মরছে৷ পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের ভূমিপুত্র বাঙলীদের অবস্থাও কতকটা একই৷

ইতিহাস ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় খুঁজলে পাওয়া যাবে ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িষ্যার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বাঙলার মাটি৷ বাঙালীরা এখানকার ভূমিপুত্র৷ আর যারা চক্রান্ত করে বাঙলীকে বিদেশী বানাতে চাইছে তাদের পূর্ব পুরুষের ইতিহাস খঁুজতে চলে যেতে হবে সাইবেরিয়া থেকে শুরু করে সুদূর ইয়ূরোপের দেশগুলোতে৷

সত্য সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশ! কি বিচিত্র এই জাতি! এত বিপুল সংখ্যক একটা জনগোষ্ঠী, যার আঘাতে ব্রিটিশ ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়েছে সে আজ একতার অভাবে পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে আর আত্ম-কলহে নিমগ্ণ থাকছে৷ হায় বাঙালী! এ লজ্জা রাখি কোথায়!