একদিনের ক্রিকেটে ভারতীয় অধিনায়কগণ ঃ কিছু কথা

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের ভারতীয় ক্রিকেট দলের একদিনের ম্যাচের সাফল্য তেমন আলোচনার মধ্যে ছিল না৷ বিশ্ব ক্রিকেটে তখন ওয়েষ্ট ইণ্ডিজের অসামান্য দাপট৷ ’৮০-র দশকে একজন ভাল অলরাউণ্ডার পেল ভারত৷ কপিল দেব নিখাঞ্জ৷ ১৯৮৩-র সেই স্বপ্ণের ফাইনাল৷ ফাইনালে ওঠার আগে লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ৩৬ রানে ৫টি উইকেট পড়ে যায়৷ ওই জায়গা থেকে কপিল দেব অপরাজিত ১৭৫ রানের একটি দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেন৷ উইকেট পড়ার মুখে কোনঠাসা হয়ে ম্রিয়মান থাকা নয়, নিজের খেলাটা খেলে নিজেদের চাপমুক্ত রাখার পদ্ধতি প্রয়োগ করে সাফল্য এসেছিল৷ ফাইনালে ৬০ ওভারে ১৮৬ রানের টার্গেট রিচার্ডস, ক্লাইভ, দুঁজোদের সামনে৷ দুর্ধর্ষ ও ব্যাটিং লাইন-আপের সামনে কপিল-বিনি-মহিন্দর-বলবিন্দররা ম্যাচ বের করে নিলেন৷ ইতিহাসে বিশ্বকাপ জয়ী হিসেবে ভারতের নাম উঠে এল৷ কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেটে তখন অনেক ভাল খেলোয়াড় এসেছে৷ প্রত্যেকেই প্রতিভাবান৷ তার সাথে যোগ হয়েছে আক্রমণাত্মক ও ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার চেষ্টা৷ ১৯৮৩ থেকে আজ পর্যন্ত ক্রিকেটে ভারতের খারাপ সময় খুব কমই গেছে৷ কারণ শেষ ৩০-৩৫ বছরে উঠে এসেছেন অনেক ভাল ব্যাটস্ম্যান-বোলার-অলরাউণ্ডার৷ এই সময় অধিনায়কত্ব করেছেন কবিল দেব, শচীন তেণ্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিঢ়, মহেন্দ্র সিং ধোনীরা৷ এঁরা সকলেই মাঠে নিজেদের সেরা খেলাটা যেমন খেলেছেন তেমনি সহ খেলোয়াড়দের সেরাটা বের করার কাজটা ভাল ভাবে করতে পেরেছেন৷ আসলে ক্রিকেটের ফরম্যাটটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটাররা নিজেদের সেরা দিতে পেরেছেন৷ অবশ্য একথা স্বীকার্য যে সুনীল গাভাসকার, পঙ্কজ রায়, দিলীপ বেঙ্গসরকার, বিষেণসিং বেদী প্রমুখ খেলোয়াড়রা যে দেশের সেই দেশ থেকে কপিল, সৌরভ, শচীন, দ্রাবিঢ়, যুবরাজ, হরভজন প্রমুখরা তো উঠে আসবেনই৷ স্বাভাবিকভাবেই আজকের প্রজন্মের বিরাট-রোহিত-বুমরা-পাণ্ডিয়া- ধাওয়ানরা মাঠে বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠবেনই৷ আর ঠিক সময়ে ঠিক অধিনায়ক নির্বাচন যখনই হয়েছে তখনই এক ঝাঁক তরুণ প্রতিভা ভারতীয় দলে যুক্ত হয়েছে৷ ব্যাটে বলে বিশ্বকে শাসন করেছে৷ যেমন সৌরভ গাঙ্গুলী অধিনায়ক থাকাকালীন ধোনী, সেহবাগ, জাহির খান, শ্রীনাথরা ভারতীয় দলের সম্পদ হয়ে উঠল৷ সেই সময় খারাপ ফর্মে থাকা দ্রাবিঢ়, হরভজনের পাশে থেকে তাঁদের সেরাটা বের করে আনার অনেকটাই কৃতিত্ব অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর৷ সৌরভের পর মহেন্দ্র সিং ধোনীর নেতৃত্বে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমার প্রমুখেরা আবিষ্কৃত হলেন৷ ঠাণ্ডা মাথার ধোনী অনেক তরুণ খেলোয়াড়কে উৎসাহ যুগিয়ে তাঁদের সেরাটা বের করেছেন৷ বলা চলে তিনি যেন কপিল, সৌরভের পথকেই অনুসরণ করেছেন৷ ভারতীয় দলে শচীন-অনিল কুম্বলেরা খুব বেশী দিন নেতৃত্ব দেননি কিন্তু দলের সঙ্গে থেকেছেন, ভাল পারফরমেন্স করেছেন৷ ফলে সিনিয়র হিসেবে ভারতীয় জুনিয়র ক্রিকেটাররা যাঁদের পাশে পেয়েছেন তাঁরা ভাল ছুড়িতে শান দেওয়ার কাজটা সুনিপুনভাবে করে গেছেন৷ আর কপিল-সৌরভ-ধোনীর অধিনায়কত্ব বিপক্ষের ত্রাসের কারণ হয়ে উঠেছে বহুবার৷

বর্তমানে ভারতীয় দলের অধিনায়কের কাজটা করছেন বিরাট কোহলি ও কোন কোন সময় রহিত শর্মা৷ দুজনেই প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে থাকেন৷ চলতি এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রোহিত বুমরা-ভুবি-কেদারকে দিয়ে প্রথমে পাকিস্তানকে ১৬২ রানে বেঁধে ফেললেন৷ তারপর ধাওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে নিজে অর্ধশতরানের একটি বিধবংসী ইনিংস খেলে অবলীলায় পাকিস্তানকে হারিয়ে দিলেন৷ এশিয়া কাপে বিরাট কোহলীহীন ভারতীয় দলের দুর্বলতা কোথায় তা অন্যান্য দেশগুলির দূরবীন দিয়ে খঁুজতে হবে৷

একজন প্রখ্যাত অষ্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় মন্তব্য করেছিলেন---মাঠে শচীন আর বিরাটকে দেখে মনে যেন জেতাটাই স্বাভাবিক, হারাটা অস্বাভাবিক---সে বিপক্ষ যতই ভাল খেলুক না কেন! এই ব্যাপারটাই ধরে রেখেছেন ভারতের ক্রিকেট অধিনায়করা৷