কেশরোগ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

কেশরাজ / ভৃঙ্গরাজ ঃ

            ভৃঙ্গরাজবর্গীয় কেশ–ঔষধীয় গাছ হচ্ছে এই কেশরঞ্জন বা কেশরাজ৷ ক্ষাংলার শহরে–গ্রামে বর্ষার জল পেয়ে প্রচুর পরিমাণে কেশরঞ্জন গাছ জন্মায়৷ বর্দ্ধমানের গ্রামের ভাষায় ভৃঙ্গরাজকে ৰলে ‘ভীমরাজ’ ও কেশরঞ্জনকে ৰলে ‘কেশরাজ’৷ চব্বিশ পরগণার গ্রামাঞ্চলে আমি কেশরঞ্জনকে ‘কেশুত’ বলতে শুণেছি৷ বাজারে পাওয়া ভৃঙ্গরাজ তেল চুলের গোড়ার ও মস্তিষ্কের ঔষধ৷ তেলটি খুবই ঠাণ্ডা৷ তাই মাথা গরম ও বায়ু বিকারের ঔষধ হিসেবে এর ব্যবহার আছে৷ উন্মাদ রোগেও ভৃঙ্গরাজ (তেল) ব্যবহূত হয়৷ মাথা–ঠাণ্ডা সুস্থ মানুষ অধিক ভৃঙ্গরাজ ব্যবহার করলে অনেক সময় সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে যায়৷ ভৃঙ্গরাজ–জাত তেলকে সংক্ষেপে কেউ কেউ ‘ভৃঙ্গর’ বলে থাকেন৷

কেশরাজ/কেশরঞ্জন/কেশুত চুলের গোড়ার ঔষধ, চুলকে চকচকে করে রাখার ঔষধ৷ ঈষৎ শীতল আবহাওয়ায় কেশরাজ বা কেশুত তেল প্রস্তুত করে শুকনো স্থানে শিশিতে ভরে রাখলে তা কেশ–রোগের ভাল রকমের ঔষধের কাজ করে থাকে৷ ভৃঙ্গরাজের মত কেশরাজও ইন্দ্রপতন–এর (কেশাঘ্ন বা টাকপড়া–baldness) প্রাথমিক স্তরের ঔষধ৷ চুলপড়া ৰন্ধ করতে বজ্রাসন ও উৎকট বজ্রাসন কার্যকর যা আচার্য শেখাবেন৷

তিল তৈল ঃ

প্রাচীন আর্যেরা তৈল ক্ষীজের মধ্যে তিলের সংস্পর্শে প্রথম এসেছিলেন৷ আর তৈল শব্দটিও তিল থেকেই এসেছে৷ তৈল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থই হ’ল–যা তিলসঞ্জাত৷ ভারতীয় তিল সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে–শাদা তিল, লাল তিল ও কৃষ্ণ তিল৷ খাদ্য হিসেবে সবচেয়ে ভাল শ্বেততিল (তিলকুট, তিলুয়া, তিলখাজা, রেউড়ী)৷ রন্ধন তৈল হিসেবে লাল তিলই সবচেয়ে ভাল৷ তবে সব ধরনের তিলই সব কাজে লাগানো যেতে পারে৷

মাথার পক্ষে সবচেয়ে ভাল হচ্ছে কৃষ্ণতিল চ্প্ত্ত্রন্তুন্স ব্দন্দ্বব্দ্ত্রপ্পন্দ্ব– নুস্তুন্ন্তুব্ভপ্প ড্ডড্রগ্গ৷ কৃষ্ণতিলের তেল চুলের গোড়াকে মজবুত রাখে৷ তিল তৈলের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে তিলের তেল কোন গন্ধ বস্তুর সংস্পর্শে এলেই সেই গন্ধকে টেনে নিতে পারে ও দীর্ঘকাল ধরে সেই গন্ধকে নিজের মধ্যে আটকে রাখতে পারে৷ ভারতীয় পদ্ধতিতে, বিশেষ করে আয়ুর্বেদে যে সমস্ত কেশ তৈল প্রস্তুত করা হয় তাদের বেশীর ভাগই করা হয় তিল তৈল থেকে৷

চুলের যত্ন ঃ

চুল চামড়ার নীচ থেকে ঠেলে ওঠে ও সেই ভাবে ক্ষাড়ে৷ চুলের শেষাংশ ক্ষাড়ে না৷ কাঁচা হলুদ–ক্ষাটা মাথায় মেখে স্নান করে, মাথা মুছে নিয়ে, তারপর শুকনো গামছা মাথায় ১৫/২০ মিনিট চেপে ক্ষেঁধে রাখলে চুল মজবুত হয়, চুলপড়া বন্ধ হয় চুল একটু ঢেউ খেলানো বা কোঁকড়ানো হয়৷

উকুনের উপদ্রব ঃ

বড় উকুনকে ড্যাঙর বলে, উকুনের ডিমকে বলে নিকি৷ ড্যাঙর উকুনেরা চুলের ভেতরে চলে বেড়ায়৷ চুলের গোড়ার দিককার স্নেহজাতীয় বস্তু (চুলের গোড়ার চর্বি) এদের খাদ্য৷ এরা চুলের গোড়ার স্নেহজাতীয় বস্তু যখন খায় তখন মানুষ মাথায় চুলকানি অনুভব করে৷ ড্যাঙরের বেশী উৎপাত হলে মাথায় ঘা–ও হয়ে যায়৷ চুলের মধ্যে যে চলে বেড়াচ্ছে (কেশেষু অটতি) ইত্যর্থে কেশট৷

ড্যাঙ্গর উকুন দারুণ ছোঁয়াচে রোগ, মাথায় ড্যাঙ্গর উকুন থাকলে সরু দাঁড়ার চিরুনি ব্যবহার করবে৷ আর যতদূর সম্ভব দিনে ঘুমোবে না৷ যারা চুলের যত্ন নেয় না সেই সকল নোংরা লোকেরা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই উকুনের আক্রমণের শিকার হয়ে এসেছে৷

এই জন্যে তিনের চার ভাগ কেরোসিন তেল ও একের চার ভাগ খাঁটি নারকেল তেল মিশিয়ে রগড়ে রগড়ে ঘষে ঘষে (মাথার চুলে) লাগালে, তারপর মিনিট পনের রোদ্রের দিকে পিঠ করে বসে থাকলে, তারপর স্নান করলে–পরপর কয়েকটা দিন এভাবে লাগালে ড্যাঙ্গর উকুন সবংশে শেষ হয়ে যাবে ও মাথার চামড়ার ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসবে৷

মধ্যে মধ্যে অথবা মাসে একবার মাথায় সাবান মেখে নিলে বা চুলে শ্যাম্পু করে নিলে ঙ্মবাজারে প্রচলিত অজস্র প্রকারের শ্যাম্পু মাথা হয়তো পরিষ্কার করে কিন্তু তার সঙ্গে মাথার চুলকেও লোপাট করতে থাকে৷ তাই বিজ্ঞানসম্মতভাবে বা আয়ুর্বেবদ মতে প্রস্তুত শ্যাম্পুই খুঁজে নিয়ে ব্যবহার করা উচিত৷ উকুনের উপদ্রব ৰড় একটা হবে না৷

খুসকী ঃ

মাথায় যদি উকুন না থাকে তাহলে ভাল ভাবে সর–ময়দা (দুধের সর) সমপরিমাণে আঙ্গুলে করে ফেটে ফেনিয়ে মাথায় মাখলে মাথার খুসকী ও মরামাস দূর হয়৷ তিক্তস্বাদযুক্ত এক প্রকার লাউ আছে যা খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয় না৷ ঔষধ হিসেবে ব্যবহূত হয়৷ এর বীজের তেল মাথার খুশকী রোগের উত্তম ঔষধ৷

(‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ ঃ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার)