কলা

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

যদিও সাধারণ অর্থে ‘কদলী’ বলতে সব কলাকেই বোঝায়, তবু বিশেষ অর্থে ‘কদলী’ অর্থে কাঁচকলা আর ‘রম্ভা’ মানে পাকা কলা৷ এখানে কাঁচকলা বলতে আমরা সেই কলাকে বোঝাচ্ছি যা কাঁচা অবস্থায় তরকারী রেঁধে খাওয়া হয়, আর পাকা অবস্থায় সাধারণতঃ খাওয়া হয় না৷ কলা সমস্ত গ্রীষ্মপ্রধান দেশেই জন্মায়৷ তবে কলার আদি নিবাস পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ– East Indies Archipellagoঅর্থাৎ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশ৷ ভারতও অন্যতম কলা–উৎপাদনকারী দেশ৷ কেবল ভারতেই শতাধিক প্রজাতির গাছ রয়েছে৷ ভারত ও বহির্ভারত নিয়ে সমগ্র বিশ্বে কলার প্রজাতির সংখ্যা দেড় হাজারের মত৷ ভারতের কেরলেই সবচেয়ে বেশী প্রজাতির কলা পাওয়া যায়৷ বাংলায় সবচেয়ে বেশী কলার চাষ হয় হুগলী জেলায়৷ এছাড়া হাওড়া, মেদিনীপুর, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, চব্বিশ পরগণা, জলপাইগুড়ি ও ত্রিপুরায় প্রচুর পরিমাণ কলা জন্মায়৷

কলার কোন অংশই পরিত্যাজ্য নয়৷ কলার খোলাও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের লোকেরা বিভিন্ন ভাবেই খেয়ে থাকেন৷ ফলন্ত কলা গাছের কাণ্ডের অভ্যন্তরভাগ যাকে বাংলায় থোড় বলা হয়, তাও মানুষের খাদ্য৷ থোড়ের বেশির ভাগ অংশই জল৷ তবে থোড়ে কিছু মূল্যবান খনিজ লবণও রয়েছে৷ সেই হিসেবে থোড়ের একটা খাদ্যমূল্যও রয়েছে৷ যারা রক্তাল্পতায় ভোগে অথবা যাদের চর্ম কিছুটা বিবর্ণ, থোড় তাদের পক্ষে মোটামুটি বিচারে ভাল৷ কলাপাতা ভোজনপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ কলাগাছ পোড়ালে যে ক্ষার পাওয়া যায় তা দিয়ে এককালে কাপড় কাচা হত৷ এই কলাগাছের ক্ষার–সোডিয়াম কার্বনেট (হল) যা কাপড় কাচা সোডার মূল উপাদান৷ কলাগাছের সূতোতে পৃথিবীর অনেক দেশে বস্ত্র প্রস্তুত করা হয়৷ যেমন বস্তু প্রস্তুত হয় আনারসের সূতো দিয়ে৷

কদলী একটা খুব পুষ্টিকর খাদ্য৷ পালা জ্বর বলে এক রকমের যে জ্বর হয় একদিন অন্তর বা দু’দিন অন্তর–তার ঔষধ কদলী৷ যকৃত, অগ্ণ্যাশয়, কিডনী এই তিনের কাজ ভাল রাখে কদলী৷ আমাশয় রোগেরও খুব ভাল ঔষধ কদলী৷ আবার মৃতবৎসা নারীর পক্ষে খুব ভাল খাদ্য কদলী৷

(আগেই বলেছি) খাদ্য হিসেবে কলা বেশ পুষ্টিকর৷ তবে যেসব কলায় অম্লভাব বেশী (যেমন চাঁপা কলা) সেগুলি সন্ধ্যার পর খেলে অম্লদোষ হতে পারে৷  যদিও সব প্রজাতির কলাতেই পুষ্টিমূল্য প্রায় সমান, তবুও কাঁটালী কলার পুষ্টিমূল্য তুলনামূলক ভাবে একটু বেশী৷ বিশেষ করে ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে–আমাশয় বা রক্ত–আমাশয়ে ঘিয়ে ভাজা বা দুগ্ধক্ষীরার রস সহ পাকা কলা–এক্ষেত্রে কাঁটালী কলাই ব্যবহার করা উচিত৷  (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে সংগৃহীত)