মানব কল্যাণে মাইক্রোবাইটামের ভূমিকা

লেখক
শ্রী সমরেন্দ্রনাথ ভৌমিক

কার্য অনুযায়ী মাইক্রোবাইটাম  তিন প্রকারের হয় এরা হল---(১) মিত্র মাইক্রোবাইটাম (ফ্রেণ্ড মাইক্রোবাইম), (২) অরাতি মাইক্রোবাইটাম (এনিমি মাইক্রোবাইটাম) ও (৩) নিরপেক্ষ মাইক্রোবাইটাম (নিউট্রাল মাইক্রোবাইটাম) ৷
মিত্র মাইক্রোবাইটামেরা স্বভাব অনুযায়ী মানুষের সঙ্গে মিত্র সুলভ কার্য করে এরা মনুষ্য সমাজকে শুভের পথে চালিত করে ও হিতের ভাবনা মনের মধ্যে যুগিয়ে যায়৷ 
সব মাইক্রোবাইটামই এক ধরণের ন৷য় এদের মধ্যে বর্গগত বিভাজন আছে আবার বর্গ অনুযায়ী গুণগত পার্থক্যও আছে৷ বর্তমান প্রাণীবিজ্ঞানীদের মধ্যে জীবপঙ্কীয় কোষ হল কার্বণ অণুর সমবায়৷ কিন্তু মাইক্রোবাইটাম বিজ্ঞানীরা প্রাণীবিদ্দের এই পুরোনো ধারণা মেনে নেবেন না৷ কারণ মাইক্রোবাইটাম-বিজ্ঞানীদের মতে জীবপঙ্কীয় কোষের উপাদান কার্বণ ঠিকই, জীবপঙ্কীয় কোষগুলির অস্তিত্ব প্রত্যক্ষভাবে কার্বণের উপর নির্ভরশীল হলেও প্রকৃতপক্ষে কার্বণের অণু-পরমাণুগুলি আবার কোটী কোটী মাইক্রোবাইটাম দিয়ে গঠিত হয়েছে৷ অতএব, জীবপঙ্কীয় কোষগুলি পরোক্ষভাবে মাইক্রোবাইটাম দ্বারা গঠিত৷ মনে রাখতে হবে, জীবপঙ্কীয় কোষগুলি কার্বণ সঞ্জাত কিন্তু মাইক্রোবাইটাম্রা কার্বন সঞ্জাত নহে অর্থাৎ নন-কার্বনিক (non-carbonic)৷
মাইক্রোবাইটাম আবিষ্কর্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন---কার্বন ও নন্-কার্বনিক আভোগের (pabulum) মধ্যে যদি এক সুন্দর সামঞ্জস্য, সুসন্তুলিত সামরস্য আনা যায় তাহলে সাম্রাজ্যবাদী ভাবনার অবসান হবে, নব্যনীতিচেতসার(New-Ethics) পথ ধরে মানুষ দ্রুতগতিতে অধিকতর আধ্যাত্মিক উন্নতি করবে৷  আজকের মানুষ মাইক্রোবাইটামকে কাজে লাগাবার কৌশল জানে না৷ কিন্তু খুব শীঘ্রই মানুষ এই মাইক্রোবাইটাম আবিষ্কার করে ফেলবে ও এই ধূলির ধরণীতে নেমে আসবে স্বর্গের সুষমা৷
বহির্জগৎ ও মনোজগতে যে সমস্ত সামাজিক ব্যাধি আজকে আমাদের সমাজকে এক অস্থির পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ও মানসিক ও শারীরিক রোগে জর্জরিত করে তুলেছে৷ তা নিরাময়ের একমাত্র ঔষধ হল এই নব্যনীতি চেতসা(new-Ethics) ৷
নব্যনীতিচেতসা দুটি মূল তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছে একটি হল---এক পরম সার্বভৌম সত্তাকে অর্থাৎ পরমপুরুষকে জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে৷ অপরটি হল---অঙ্গারাত্মক বা জড় আভোগের সঙ্গে নন-কার্বণিক আভোগের একটা সুন্দর সামঞ্জস্য ও সুসন্তুলিত সামরস্য বজায় রাখতে হবে৷ আজকের যুগে এটাই হল নব্যনীতিচেতসা
এই মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব প্রয়েগ করে সমাজের বহুমুখী পরিবর্তন করা সম্ভব হবে ৷
উদাহরণস্বরূপ---(১) জীবপঙ্কীয় কোষের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দ্বারা মানব দেহে বড় বড় পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে ৷
(২) মানুষের সামর্থ্য ও গুণের বড় রকমের উৎকর্ষ ঘটানো সম্ভব হবে৷ 
(৩) মাইক্রোবাইটামের সাহায্যে মানুষের চিত্তাণবিক পরিবর্তন করে উন্নত মানব মন তৈরী করতে পারবে৷ এর ফলে অনুন্নত জৈবী সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে৷ এই পরিবর্তন বহিঃকাঠামোতে ও অন্তর্জগতে ঘটানো সম্ভব হবে৷ মানুষের জ্যোতি(effulgence) বেড়ে যাবে৷ 
(৪) বর্তমানের তুলনায় মানুষের মন অধিকতর উন্নত মানের হবে ও এমনি করে, ধাপে ধাপে মানুষের মন চরম আধ্যাত্মিক ভাবে পুর্ণ হবে ৷
(৫) রাসায়নিক যৌগগুলির ফরমূলার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে আর এই পরিবর্তন মানব সমাজে প্রভূত মঙ্গল ডেকে আনবে ৷
(৬) মানসিক, শারীরিক রোগ নিরাময়ের জন্যে এটি একমাত্র ঔষধ৷ নব্যনীতি চেতসার সম্প্রয়োগে মানব সমাজের সর্বাত্মক বিমুক্তি অর্থাৎ অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক শোষণ ও নির্যাতন, উপধর্মীয় কুশিক্ষার অপসারণ ঘটবে৷ 
তাই সুস্থ মানব সমাজ গড়তে মাইক্রোবাইটাম অপরিহার্য্য৷ মানুষ যতদিন পর্যন্ত না এই মাইক্রোবাইটামের সন্ধান পাচ্ছে ততদিন একটা সুস্থ, এক ও অবিভাজ্য মানব সমাজ গড়তে পারবে না৷ সুস্থ, শোষণহীন মানব সমাজ গড়ার চাবিকাঠি এই মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বেই নিহিত রয়েছে ৷
(৭) বর্তমানে পরমাণুবিজ্ঞানীরা রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি ভারি ধাতুর মৌলের পরমাণুকে বিদীর্ণ(Explosion) করে অফুরন্ত পারমাণবিক শক্তির  সন্ধান পেয়েছেন৷ বর্তমানে বিজ্ঞানীদের হিসাব মত এক কেজি, ইউরেনিয়াম থেকে যে শক্তি নির্গত হয়, ওই পরিমাণ শক্তি পেতে হলে ১০,০০০ টন কয়লাকে পোড়াতে হবে৷ এই পরিমাণ শক্তির চেয়ে বহুগুণ শক্তি পাওয়া যাবে, যদি জীবপঙ্কীয় কোষগুলির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রকে(Nucleus) বিশ্লিষ্ট  করা যায়৷ এর ফলে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হবে তার পরিমাণ বর্তমান পারমাণবিক বোমা(Atom bomb) বিশ্লেষণের ফলে নির্গত শক্তির চাইতে বহুগুণ বেশী৷ জৈব সংরচনা যা কোটী কোটী জীবপঙ্কীয় কোষের সমাহৃত রূপ, তার মধ্যে যে এত বিপুল শক্তি নিহিত রয়েছে, তা সাধারণের বুদ্ধির অগম্য৷ মাইক্রোবাইটামের গূঢ় রহস্য আবিষ্কারের ফলে এইভাবে আমরা আমাদের সমাজকে নোতুন এক অবিভাজ্য সুসভ্য, সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারব৷ তাই মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের আবিষ্কারক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার নিশ্চিতভাবে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, মাইক্রোবাইটাম আবিষ্কারের ফলে জৈব ও অজৈব সংরচনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য৷ বিশ্বের মানুষ এই তত্ত্বকে জানবার জন্যে ও এই তত্ত্বের বৈব্যবহারিক প্রয়োগের দ্বারা বিশ্বে সর্বাত্মক পরিবর্তন আনার জন্যে সাগ্রহে প্রতীক্ষা করছে৷