মানবতার মুক্তিকল্পে বাঙালী জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হোক

লেখক
প্রভাত খঁ

যখনই নির্বাচন আসে তখনই সব রাজনৈতিক দলগুলো নেতাজী সুভাষচন্দ্রকে হাতিয়ার করে বোটে জয়ী হতে চেষ্টা করে৷ অথচ কংগ্রেস কম্যুনিষ্ট আর এস এস মার্র্ক বিজেপি কেউ সেদিন সুভাষচন্দ্রের পাশে থাকেনি৷ বরং সুভাষচন্দ্রকে জব্দ করতে ব্রিটিশের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে---কেউ প্রকাশ্যে কেউ গোপনে৷ আজ তারা নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে চায় সুভাষচন্দ্রকে অবলম্বন করে৷ কিন্তু তাঁর মতাদর্শ ও তাঁর চিন্তাভাবনাকে তিলমাত্র বাস্তবায়নে কি সচেষ্ট হয়েছেন? না হয়নি৷ এটাই হলো দলীয় রাজনৈতিক দ্বিচারিতা৷

আজ গণতন্ত্রের নামে যারা শাসনের গদিতে বসে কোটি কোটি মানুষকে শোষণ করে,ধনীর পদলেহন করে তাদের হাত থেকে বাঁচতে কি জনগণ এক হতে পেরেছেন? যদি না পেরে থাকেন তাহলে  আগামী নির্বাচনে একবার সেইসব দ্বিচারিতাদের উচিত শিক্ষা দিতে এক হউন৷ যারা গদীতে বসে স্বৈরাচারিতার শীর্ষে উঠে দেশের চরম ক্ষতি করে চলেছে তাদের দেশের কল্যাণে উচিত শিক্ষা দিতে যেন জনগণ পিছু পা না হন৷

আজ এরা সমাজগুলিকে ছিন্ন ভিন্ন করে নিছক দলীয় স্বার্থে৷ পশ্চিমবাঙলার মানচিত্রের দিকে তাকালে বড়ই কষ্ট হয়৷ দক্ষিণবঙ্গটাকে বাদ দিলে উত্তরবঙ্গের যে ধরণের সীমানা চিহ্ণিত করা হয়েছে যা একেবারে চরম বৈষম্য ও অন্যায়৷ বহু এলাকা জোর করে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে ঢোকানো হয়েছে যার দরুণ সরাসরি উত্তরবঙ্গে যাতায়াতে চরম অসুবিধা৷ এটা যারা করেছে আমরা আজও তাদেরকে ভুলতে পারিনি৷ কারণ এটাতো মীরজাফরদের দেশ৷ তাই সেই মীরজাফরদের কিন্তু অদ্যাবধি উচিত শিক্ষা দেশের জনগন দেয়নি৷ তাই অতি সাবধানে তাদের বংশধরদের বুঝে নিয়ে বাঙালীদের এগোতে হবে৷

আজ দেশমাতাকে সাম্প্রদায়িকতার জঘন্য ভাবনা-চিন্তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে, হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদকে মন থেকে নির্বাসিত করে বাঙালী হিসাবে এক হয়ে আমাদের চলতেই হবে, কারণ সেই ধনীরাই নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দিয়ে এই একটুকরো ভূখণ্ডকে  ধবংসের দিকে নিয়ে যেতে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ একথাটা যদি আজও  বাঙালী জনগোষ্ঠী বুঝতে না পারে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে তারা তাদের অস্তিত্বই রক্ষা করতে পারবে না৷ রাজ্যগুলির সুবিধা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় অত্যাচারিত,নির্যাতিত বাঙালী সমাজ আজ সারা পূর্বভারতে চরমভাবে লাঞ্চিত হচ্ছে নিজেদের জন্মভূমিতে৷ তাই বলি অনেক হয়েছে আর নয়৷ এই বাঙালী জনগোষ্ঠী সারা পৃথিবীকে বাঁচার পথ দেখাতে পারে৷ যদি তারা ঐক্যবদ্ধভাবে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বিষাক্ত সাম্রদায়িক বিভাজনকে বর্জন করে বঙ্গ জননীর সন্তান হয়ে দাঁড়াতে পারে৷

তাই সার্থক বাঙালী কবি মহান বিপ্লবী কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন --- ‘‘বাঙালী যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে ‘বাঙালীর বাঙলা’---সেদিন সে অসাধ্য সাধন করবে৷’’ তাই বাঙলা মায়ের সন্তানগণ আজ এক হয়ে বাঁচার লড়াই কর৷ কবি সত্যেন্দ্রনাথ বলেছেন---

‘‘মিলনের মহামন্ত্রে  মানবে দীক্ষিত করি ধীরে

মুক্ত হইবো দেব ঋণে মোরা মুক্তবেণীর তীরে৷’’

তাই পৃথিবীতে বাঙালী জাতির সৃষ্টি হয়েছে শত বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে সমগ্র মানবসমাজকে মুক্তির বাণী শোনাতে,সমগ্র পৃথিবীকে সার্বিক শোষণ মুক্তির বাণী শুনিয়ে তাদের  বিশ্বৈকতাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে৷ আর কালক্ষয় না করে সমগ্র বাঙালী জনগোষ্ঠী জাগ্রত হোক৷ ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়েছে অখণ্ড ভারতবর্ষকে টুকরো টুকরো করে রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে স্বীকার করা! নেতাজী মোটেই চাননি৷ জহরলাল, মিঃজিন্না ইংরেজের প্ররোচনায় এটা করে  দেশের প্রতি চরম বেইমানী কি করেন নি? সেদিন কোন রাজনৈতিক দলই প্রতিবাদ করেনি৷ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ অনেক দুঃখে বলে গেছেন৷

বাঙলার মাটি, বাঙলার জল, বাঙলার বায়ু, বাঙলার ফল

পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান৷

..................................................

বাঙলার ঘরে যত ভাইবোন

এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান৷’

বর্ণ সংকর এই জাতির প্রাণশক্তির অন্য জনগোষ্ঠীর চেয়ে বেশী৷ তাই এই জনগোষ্ঠী যখনই নোতুন কিছু দেখে তাকে গ্রহণ করতে দ্বিধা করে না৷ তাই এই প্রাণচঞ্চল জনগোষ্ঠীতে অনেক নোতুন নোতুন প্রতিভারও জন্ম হয়৷ তাই এই জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এগোতে থাকে৷ এতে একদিকে বিপদও আছে৷ আবার অন্যদিকে নোতুনের আশ্বাদও আছে৷ তাতে নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে বাঙালী জনগোষ্ঠীকে এগোতে হয়৷

শুধু তাই নয়,বাঙলার পূণ্যভূমিতে অনেক মহামানবেরও আবির্ভাব ঘটেছে৷ এ জনগোষ্ঠী বেশীদিন কিছুতে আটকে থাকতে পারেনা৷ তাই তাতে বিপদও আছে আবার নোতুনের সুখও আছে৷ যাকে ‘অনুকূল বেদন’ বলে যা ক্ষণস্থায়ী৷ চিরকালই সমস্যায় জর্জরিত এই জনগোষ্ঠী তাই তারা চিরকালই অনৈক্যবোধ৷ তাই এই তথাকথিত রাজনৈতিক অনৈক্য ও দাপাদাপি বেশী৷ দল ভাঙা ভাঙীটা বড় বেশী, তাই সমস্যাও বেশী৷ সবাই এরাজ্যে নেতা তাই দলীয় বিরোধিতাটাও যেন বেশী৷ কিন্তু নোতুনকে বরণ করে নিতে এরা বড়ই পটু ও আগ্রহশীল বিশেষ করে যারা একটু তথাকথিত বুদ্ধিমান৷

তাই দেখা যায় এই ভূমিতে যুগে যুগে এদের সঠিক পথে ফেরাতে মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে৷ রবীন্দ্রনাথের যে প্রতিভা ছিল তার ৪০ শতাংশ তিনি কাজে লাগাতে পেরেছেন৷  আর ৬০ শতাংশ বিরোধিতায় তিনি প্রকাশ করতে সক্ষম হননি৷ তাই আজ এই জনগোষ্ঠীকে অনেক হারাতে হয়েছে৷ আশাবাদীরা আশা করে এই উচ্ছ্বাস কালধর্মে নিয়ন্ত্রিত হবে৷ জগৎসভার এই প্রাণোচ্ছ্বল জনগোষ্ঠী অদূর ভবিষ্যতে এমন কিছু মহামূল্যবান কাজ করবে যা মানবজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ মানবিক মূল্যবোধকে জাগরণের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে এক শুভ নবজাগরণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তুলবে৷ সেই কারণে আজ চরম সংকটের দিনে সমগ্র বাঙালী জনগোষ্ঠীকে জাতিধর্মবর্ণ দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাঙালী জাতিসত্তাকে জীবন্ত করে তুলে নব্যমানবতার জাগরণে

সামিল হতেই হবে৷ যেটির অপেক্ষায় আছেন স্বয়ং পরমপুরুষ৷ তাতে সারা বিশ্বে নোতুন প্রভাতের উদয় হবে৷ একাগ্রতা নিষ্ঠা জরুরী, সংকীর্ণতা দূর করে ঐক্যবদ্ধ হও সার্বিক মানবকল্যাণে৷ একালে যেটির বড়ই অভাব৷ 

এটি হল শ্রী চৈতন্যদেবের লীলাভূমি৷ মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রী আনন্দমূত্তিজী ওরফে মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার যিনি প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা তিনিও ইচ্ছা করেন  সার্বিক জগৎকল্যাণে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল জীবের কল্যাণে এই বাঙালী জনগোষ্ঠীই হবে অগ্রদূত৷