রাজ্য প্রশাসনে রাজ্যপালের ভূমিকা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

রাজ্যশাসন বিভাগে শুধুমাত্র মন্ত্রিপরিষদ নয়, রাজ্যপালের  ভূমিকাও আছে৷ রাজ্যপাল নিয়মতান্ত্রিক শাসনকর্র্ত৷ তাঁকে দায়িত্বশীল মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ মেনেই শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়৷ কেন্দ্রে এরই প্রতিচ্ছবি দেখা যায়৷ রাষ্ট্রপতিকেও কেন্দ্রের মন্ত্রী মণ্ডলীর পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়৷ তবে পার্থক্য একটু আছে৷ সংবিধানে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার  সুষ্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে তা নেই৷

রাজ্যপালকে নির্বাচিত করেন রাষ্ট্রপতি৷ রাজ্যপালের শাসনকার্যের মেয়াদ পাঁচবছর৷ রাজ্যপালের  বয়স ৩৫ ও ভারতীয় নাগরিক  হওয়া চাই৷ কার্যকালের সময়সীমার মধ্যে তিনি কোন বিচারালয়ের  কাছে জবাব দিহি  করতে বাধ্য হন৷ গ্রেপ্তারী পরোয়ানা তো দুরের কথা তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা যায়না৷ আর কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে বরখাস্ত করতে পারেন না৷ তা তিনি মুখমন্ত্রীর যতই চক্ষুশূল হন৷ একমাত্র  রাষ্ট্রপতি যখন খুশি রাজ্যপালকে পদচূ্যত করতে পারেন৷ তবে হ্যাঁ, রাজ্যপাল স্বেচ্ছায়  পদত্যাগ করতে  পারেন৷

মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল৷ মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ রাজ্যপালের স্বেচ্ছধীন ক্ষমতা৷ সে ব্যাপারে তিনি কারো পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য নন৷ চতুর্থবার নির্বাচনের পর  রাজস্থানের বিধানসভায় কংগ্রেসের সন্দেহাতীত সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও রাজ্যপাল কংগ্রেস পার্র্লমেন্টীয় নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন৷ আবার পরিস্থিতি বিশেষে মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ তে অপসারণ করার ক্ষমতা ও রাজ্যপালের আছে৷ ১৯৬৭ সালে রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গের যুক্তফ্রন্ট সরকারকে অপসারণ করে ডক্টর প্রফুল্ল ঘোষকে মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত করেছিলেন৷ এটি রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা৷

আবার মুখ্যমন্ত্রী যদি কখনো বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ রাজ্যপালকে দেন রাজ্যপাল সে পরামর্শ অগ্রাহ্যও করতে পাবেন৷ ১৯৬৭ সালের জুলাই  মাসে এমন ঘটনা ঘটেছিল মধ্যপ্রদেশে৷ সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমিশ্র বিধানসভা ভেঙে দিয়ে ফের নির্বাচন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজ্যপালকে৷ কেন্দ্রের অসম্মতিতে রাজ্যপাল বিধানসভা ভাঙেন নি৷

রাজ্যপাল শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয়, মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মতো অন্যান্য মন্ত্রীদেরও নিয়োগ করেন৷ এছাড়াও রাজ্যপাল রাজ্যের মহা-ব্যবহারিক অর্থাৎ এ্যাডবোকেট  জেনারেল কে নিযুক্ত করেন৷ রাজ্যের মহাধর্মাধিকরণের (হাইকোর্ট) বিচারপতি নির্বাচিত করার সময় রাষ্ট্রপতি অবশ্যই রাজ্যপালের সাথে পরামর্শ করেন৷

রাজ্যকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য রাজ্যপাল কিছু নিয়মকানুন প্রণয়ন করতে পারেন৷ অপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন দণ্ডাদেশ স্থগিত, দণ্ডহ্রাস ইত্যাদি করার ক্ষমতা রাজ্যপালের আছে৷ কিন্তু মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অপরাধীর ক্ষেত্রে দণ্ডাদেশ স্থগিত, দণ্ডহ্রাস রাজ্যপাল করতে পারলেও ক্ষমা করতে পারেন না৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতি৷

বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান, স্থগিত করা ও বিধানসভা ভেঙে দেওয়া---এসব ক্ষমতা রাজ্যপালের আছে৷ তবে বিধানসভার আয়ু রাজ্যপাল বৃদ্ধি করতে পারেন না৷  বিধানসভায় বাণী বিতরণ ও উদ্বোধনীসভায় তিনি বত্তৃণতা দিতে পারেন৷

বিধানসভায় পাস হওয়া কোন বিলকে রাজ্যপালের সম্মতি  ছাড়া আইনে পরিণত করা যায় না৷ বিলে সম্মতি জ্ঞাপন করা  না করা তাঁর ইচ্ছাধীন৷ তবে অর্থবিল ব্যতীত অন্য কোন বিলের ক্ষেত্রে বিধানসভায় পুনর্বিবেচনার জন্যে রাজ্যপাল পাঠাতে পারেন৷ দ্বিতীয়বারও যদি বিলটি বিধানসভায় গৃহীত হয় সেক্ষেত্রে উক্ত বিলে রাজ্যপাল সম্মতিজ্ঞাপনে বাধ্য৷ রাজ্যপালের অর্ডিন্যান্স অর্থাৎ জরুরী অস্থায়ী আইন জারি করার ক্ষমতা আছে৷ রাজ্য পালই মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন৷ অনির্বাচিত প্রার্থীকে  রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করতে পারেন৷ সংবিধানে সে-ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ নেই৷ যেমন এবারে নির্বাচনে পরাজিত হয়েও মমতা ব্যানার্জী মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন৷ তবে ৬মাসের মধ্যে কোন কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হতে হবে তাঁকে৷ নচেৎ রাজ্যপাল তাঁকে অপসারণ করতে পারবেন৷ শ্রী রাজাগোপালচারী শ্রীসিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, শেখ আবদুল্লারা নির্বাচিত না হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন৷ পরে নির্বাচনে জয়লাভ  করে আইনসভার সদস্য হন৷ তবে রাজ্যপালকে সংখ্যাগরিষ্ঠদলের সমর্থন প্রাপ্ত ব্যষ্টিকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করতে হয়৷