সাপ্তাহিক ধর্মচক্র ও মাইক্রোবাইটাম

লেখক
সমরেন্দ্রনাথ  ভৌমিক

আনন্দমার্গের সাধনা পদ্ধতি কতকগুলি ক্রমানুসারে শেখানো হয়৷ এই সাধনাক্রমগুলি হ’ল--- প্রারম্ভিক যোগ, সাধারণ যোগ, সহজ যোগ, বিশেষ যোগ ও সবশেষে হ’ল পজিটিভ মাইক্রোবাইটাম সাধনা৷ এই সাধনাগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ সাধনা হ’ল ‘মাইক্রোবাইটাম সাধনা’৷ আর এই মাইক্রোবাইটা সাধনা ‘ৰাৰা’-র বিশেষ কৃপা জড়িত সাধনা৷  এ পর্যন্ত ‘ৰাৰা’ ১৫৫ জনকে এই  মাইক্রোবাইটাম সাধনা দিয়ে গেছেন৷ মাইক্রোবাইটাম হ’ল এক অতীব সূক্ষ্ম রহস্যজনক সত্তা৷ এই মাইক্রোবাইটাম এতটাই সূক্ষ্ম যে, একে ‘ৰাৰা’ বলেছেন---‘‘মাইক্রোবাইটাম এক প্রকার শক্তি  energy)৷ তবে এই শক্তি অন্ধশক্তি Blind energy) নয়, এর বিবেক আছে৷’’ সুতরাং এই সূক্ষ্ম মাইক্রোবাইটামের নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োগ একমাত্র পরমপুরুস তথা সদ্‌গুরুই জানেন৷ তথাপি ‘ৰাৰা’ বলেছেন---‘‘এই মাইক্রোবাইটামের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ খুব শীঘ্রই মানুষ জেনে ফেলবে৷’’ এই দৃঢ় আশ্বাস আমাদের পরমারাধ্য ‘ৰাৰা’ আমাদের দিয়েগেছেন৷ শুধু যে আশ্বাস দিয়েছেন তা নয়৷ এই সূক্ষ্ম মাইক্রোবাইটামকে কিভাবে আমরা সহজে পেতে পারি এবং ঐ মাইক্রোবাইটাম আমাদের জাগতিক,মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে কাজে লাগাতে পারি, তার জন্য তিনি (‘ৰাৰা’) সমাজ জীবনের সকলের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থার প্রচলন ক’রে গিয়েছেন৷ এই বিশেষ ব্যবস্থাটি হ’ল--- সাপ্তাহিক ধর্মচক্র D.C) এই সাপ্তাহিক ডি.সি করা, এটা হল ‘ৰাৰা’-র অহৈতুকী কৃপা আমাদের উপর৷

নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত স্থানে মিলিত ঈশ্বর প্রণিধান ও ধর্মীয় আলোচনার নাম ‘ধর্মচক্র’ Dharma Chakra), সংক্ষেপে ডি.সি বলে৷ ১৯৫৫ সালে জামালপুরে মার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রমে ধর্মচক্রের প্রথম প্রচলন শুরু হয়৷  জামালপুরে এই ধর্মচক্র D.C) শুরু হবার অল্পদিন পরে মুঙ্গির ও ভাগলপুরে ধর্মচক্র শুরু হয়েছিল৷ তারপর এইভাবে মার্গের সকল শাখাতেই ধর্মচক্র প্রবর্তন হ’ল৷ এই সাপ্তাহিক ধর্মচক্রে অনেক সাধকের একত্রে যোগদানের ফলে একটা সম্মিলিত আধ্যাত্মিক স্পন্দন Collective Spiritual Vibration) হয়, তেমনি সমবেত সাধকের মধ্যে একটা সামাজিক বোধ Collective social awareness) ও ভ্রাতৃত্ব চেতনা জেগে ওঠে৷ মার্গগুরুদেব এই সাপ্তাহিক ধর্মচক্রের উপর অত্যন্ত জোর দিতেন৷ এ বিষয়ে তাঁর (‘ৰাৰা’-র) সুষ্পষ্ট নির্দেশ ছিল ঃ

‘‘সুস্থ অবস্থায়, সাপ্তাহিক ধর্মচক্রে যোগদান করতেই হবে৷ রাজকার্য্য কিংবা রোগীর সেবার জন্যে যদি কেউ নির্দিষ্ট সময়ে ধর্মচক্রে যোগদান করতে না পারে, তবে ওইদিন যে কোন সময়ে জাগৃতিতে এসে ঈশ্বর প্রণিধান করে নেবে৷ যদি তাও সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহন্তে একবেলা উপবাস করবে৷৷’’

সাধারণতঃ রবিবারধর্মচক্রের দিন নির্ধারিত হ’য়ে থাকে৷ যাইহোক, সাধক একা কিংবা মিলিতভাবে কয়েকজন সাধক যদি নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে সঙ্গীত, কীর্ত্তন করার পর সাধনা করেন তা হলে সেই পরিবেশে পজিটিভ মাইক্রোবাইটাম অবশ্যই সৃষ্টি হবে৷ অর্থাৎ, পরমপুরুষ তথা সদ্‌গুরু কৃপা ক’রে আমাদের পজিটিভ মাইক্রোবাইটাম দিয়ে বিভিন্ন দিকের কল্যাণ সাধন করেন৷ ডি.সি এর পরিমণ্ডলে কোটি কোটি পজিটিভ মাইক্রোবাইটামের সমাবেশ হয়৷ এর ফলে যে প্রবল আধ্যাত্মিক স্পন্দন শুরু হয় তা ঐ ডি.সি তে উপস্থিত সকলের জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রগতি অবশ্যই হবে৷ ইষ্ট-মন্ত্র জপের মাধ্যমেও কোটি কোটি পজিটিভ মাইক্রোবাইটামের সমাবেশ ঘটে৷ তাই প্রভাত সঙ্গীতে ‘ৰাৰা’ এই ইষ্টমন্ত্র সংক্রান্ত গান দিয়েছেন---

ভজরে ইষ্ঠ নাম, মন আমার, ভজ ইষ্টনাম৷

সৃষ্টি-স্থিতি তাতেই নিহিত, তাহাতেই শেষ পরিনাম৷৷

দিলেন যে পুরুষ এ অমৃত নাম,

তিনিই জানেন এর নবধাম৷

ধরার ধূলায় এই অভিরাম শুনে’ যাও অবিরাম৷৷

                                      (৪৬৭৩ নং প্রভাত সঙ্গীত)

ভজন, কীর্ত্তন ও ইষ্টমন্ত্র হ’ল ধনাত্মক শব্দ Positive Sound)৷ যে শব্দ বা ধবনি বা সঙ্গীত ‘নন্দন’ স্তর থেকে ‘মোহন’-বিজ্ঞানের স্তরে নিয়ে যায় তাকে পজিটিভ সাউন্ড বলে৷ সে বিচারে ‘ৰাৰা নাম কেবলম্‌’ কীর্ত্তন হ’ল সর্ব উৎকৃষ্ট পজিটিভ সাউণ্ড৷  এই কারণেই আমাদের পরমারাধ্য ‘ৰাৰা’ এই কীর্ত্তনের পর সাধনার ব্যবস্থা রেখেছেন৷

সৎকর্ম, সদ্‌ আলোচনা ও স্বাধ্যায়ের মাধ্যমেও পজিটিভ মাইক্রোবাইটামের আগমন ঘটে৷ তাই ‘ৰাৰা’ আমাদের ডি.সি শেষে স্বাধ্যায়ের ব্যবস্থা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন৷ ডি.সিতে  যে কোটি কোটি মাইক্রোবাইটামের উপস্থিতি ঘটে তাতে যে শুধুমাত্র জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রগতিই হয় তা নয়, এছাড়া এই উৎপন্ন পজিটিভ মাইক্রোবাইটামCancer---এর মত দুরারোগ্য রোগের নিরাময় ঘটে৷ শুধুCancer-ই নয় এর চাইতে অতি ভয়ংকর জীবানু ‘করোনা’ কিংবা আগামী দিনে বহু দূরদূরান্তের গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু প্রভৃতি হ’তে আগত বহু অজানা ভয়ংকর, ভয়ংকর রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুকেও প্রতিহত করতে এই পজিটিভ মাইক্রোবাইটামই একমাত্র মহঔষধ হ’য়ে সমাজকে রোগমুক্ত করতে অবশ্যই এক বিশেষ ভূমিকা নেবে৷

কীর্ত্তনে যে শুধু মাত্র মানুষেরই হিত বা কল্যাণ সাধিত হবে তা নয়৷ এই কীর্তনের স্পন্দনে পশুপক্ষী এমন কি গাছপালারাও উপকৃত হবে৷ বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন গাছপালাদেরও প্রাণ আছে৷ সুতরাং এই কীর্ত্তন স্পন্দনে এরাও স্পন্দিত হয়,তা বোধ হয় অনেকেরই অজানা৷ এই স্পন্দন যে উদ্ভিদ্‌ জগতকেও স্পন্দিত করে এমন একটি বাস্তব ঘটনার উল্লেখ করছি৷

একবার ‘ৰাৰা’ মার্গীদের নিয়ে ফিলিপাইনসের একটি বেশ বড়সড় কবরখানায় যান৷ সেখানে ‘ৰাৰা’ ও উপস্থিত মার্গীরা একটি প্রাচীন বটবৃক্ষের নীচে  বসেন৷ তারপর ‘ৰাৰা’-র সামনে সমবেত মার্গীরা উচ্চৈস্বরে ‘ৰাৰা নাম্‌ কেবলম্‌’ কীর্ত্তন গাইতে শুরু করেন৷ কিন্তু কীর্ত্তন শুরু হবার  পর এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে৷ কিছুক্ষন পরেই দেখা গেল বটগাছটির পাতাগুলি খুব ধীরে ধীরে কাঁপতে শুরু করেছে৷ এতে উপস্থিত মার্গীরা বিস্ময়াভিভূত হয়ে ‘ৰাৰা’-কে এর কারণ জিগ্যেস করেন৷ তখন ‘ৰাৰা’ এর উত্তরে বললেন---‘‘মানুষেরই মত পশুপক্ষী তথা গাছপালারাও আধ্যাত্মিক স্পন্দনে স্পন্দিত হয়৷

তোমাদের সমবেত কীর্ত্তনের মধুর ধবনি যে আধ্যাত্মিক তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে তাতে গাছটির মনে হর্ষ উৎপন্ন হয়েছে আর তাই এই আনন্দেরই অভিব্যক্তি সে তার পাতাগুলি নাড়িয়ে প্রকাশ করছে৷

এই পজিটিভমাইক্রোবাইটাম্ উপর ‘ৰাৰা’ বহু ডেমোনেষ্ট্রেশন দিয়ে দেখিয়েছেন৷ এসব ‘ৰাৰা’-র অহৈতুকী কৃপা ছাড়া আর কি বলব৷

সবশেষে পাঠকগণকে আমার আন্তরিক আবেদন--- তাঁরা যেন ‘ৰাৰা’-র দেওয়া এই ডি.সি নিয়মিতভাবে ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলেন৷