স্মৃতির অন্তরালে--- ‘‘বাড়ী আমার ভাঙন-ধরা অজয় নদীর বাঁকে’’

লেখক
কণিকা দেবনাথ

‘‘কুমুদরঞ্জনের কবিতা পড়লে বাঙলার  গ্রামের তুলসী মঞ্চ, সন্ধ্যা প্রদীপ, মঙ্গল শঙ্খের কথা মনে পড়ে৷’’ পল্লী কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক সম্পর্কে কথাগুলি বলেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷

গ্রাম্যজীবনের সহজ সরল নৈসর্গিক প্রকৃতির ছবি পল্লী কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকে কবিতার বিষয় ছিল৷ ১৮৮৬ সালের ১লা মার্চ অবিভক্ত বাঙলার বর্ধমানের কোগ্রামে মামার বাড়ীতে জন্ম কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের৷ কবির পৈতৃক বাড়ী ছিল বর্ধমান জেলারই বৈষ্ণবতীর্থ খ্যাত শ্রীখণ্ড গ্রামে৷ তাই হয়তো তাঁর কবিতার মধ্যে পল্লী বাঙলার প্রাকৃতিক বৈচিত্রের সাথে বৈষ্ণব ভাবধারা যুক্ত হয়ে কবিতার ভাব ও ভাষাকে  আলাদা মাধুর্য দিয়েছে৷

কবি এন্ট্রান্স পাশ করে ১৯০১ সালে, ১৯০৩ সালে রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে এফ.এ পাশ করেন৷ বঙ্কিমচন্দ্র সুবর্ণ পদক পেয়ে বি.এ পাশ করেন বঙ্গবাসী কলেজ থেকে ১৯০৫ সালে৷ তিনি বর্ধমান জেলারই মাথরুন নবীনচন্দ্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন৷ ওই স্কুলেই পল্লী-কবি কুমুদরঞ্জনের ছাত্র ছিলেন বিদ্রোহী কবি নজরুল৷ কবির গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অজয় আর কুনুর নদী৷ এই নদীই তার কবিতার প্রেরণা ছিল৷ এই নদীকে নিয়ে তিনি লিখেছিলেন---

বাড়ী আমার ভাঙন

ধরা অজয় নদীর বাঁকে,

জল যেখানে সোহাগ

ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে৷

সামনে ধূসর বেলা,---জলচরের মেলা,

সুদুরগ্রামে ঘর দেখা যায়

তরুলতার ফাঁকে৷

তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে শতদল, বনতুলসী, উজানী, একতারা  বনমল্লিকা রজনীগন্ধা প্রভৃতি৷ কপিঞ্জল ছদ্মনামে তিনি লেখেন ব্যঙ্গ কাব্য-‘চুন ও কালি’৷ ১৯৭০ সালে ১৪ই ডিসেম্বর ৮৭ বছর বয়সে  কবি দেহত্যাগ করেন৷