যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্রে এক দলীয় শাসনের প্রবণতা-স্বৈরাচারিতার পরিচয়

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্ত্তমানে বিরাট জনবহুল, নানা ভাষাভাষী ও ধর্মমতাম্বলম্বীদের্ দেশ৷ ভারত সেখানে আসমুদ্র হিমাচলে বৈচিত্র্যভরা একটি বিরাট মানব সমাজের অবস্থান৷ সেখানে অনেক গুলি  রাজ্যের সমাবেশে ১৩৫ কোটি মানুষের বাস৷ সেই মানুষগুলির বিভিন্ন ধরনের অভাব অভিযোগ রয়েছে৷ সেগুলির প্রয়োজন মেটানোর দায় রাজ্যগুলির৷ সেই রাজ্যগুলির অবশ্যই আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে সাবলম্বী হয়ে ওঠা একান্ত জরুরী, যাতে সেই সেই  এলাকার স্থায়ী আঞ্চলিক মানুষগুলি অবশ্যই অন্ন, বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা ও বাসস্থানের নূ্যনতম প্রয়োজনটুকুর পূর্ত্তি ঘটে৷ সেই সেই দিকগুলির পূরণের আবশ্যিকতা জরুরী৷ তাই আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির দিকে সবচেয়ে বেশী নজর দিতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে৷ সেইদিকে অদ্যাবধি যুক্ত রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় নজরই দেওয়া হয়নি কয়েক গণ্ডা রাজনৈতিক দলীয় শাসনে৷ দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির নেতা ও নেত্রীগণ শুধু দলীয় কোন্দল লড়াই করে যাচ্ছে ৷ দেখা যাচ্ছে সমাজগুলিকে নানা সেন্টিমেন্টে জাতপাতের, সাম্প্রদায়িকতার ধর্মমতের ভিত্তিতে টুকরো টুকরো করে সেই কিছু জমিদার ওধনী ব্যষ্টিরা সেই শুরু থেকে দল উপদল গড়ে, দল ভাঙ্গাভাঙ্গী করে শাসন ক্ষমতা  কায়েম করতেই ব্যস্ত৷ কোটি কোটি হত দরিদ্র নাগরিকদের সেবার দিকে নজর নেই! গত ৭৪ বছর  ধরে সেই কংগ্রেস, বামদলগুলি কিছু দলছুট আঞ্চলিক দল শাসন ক্ষমতা কায়েম করে বিরাট উপমহাদেশে যেন বর্ত্তমানে এক অচলাবস্থার  সৃষ্টি করেছে৷ সবচেয়ে বড়ো অভিশাপ ঘটিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার৷  ভারতবর্ষকে হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশভাগ করে৷ আর সেটাকে কিছু ইংরেজের ইয়েসম্যান শাসন ক্ষমতার লোভে লুফে নেয়৷ তাই এদেশের রাজনীতি বলতে সেই ডিভাইড এ্যান্ড রুল ও  বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতাটাই শাসনের মূলনীতি হয়েই চলেছে৷ যদিও কাগজে কলমে এদেশে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ হয়েই শাসন ব্যবস্থা কায়েম আছে৷ আর কেন্দ্রের শাসকগণ দলীয়  স্বার্থে ভারতের সংবিধানকে অসংখ্যবার সংশোধন করে ও  স্বৈরাচারিতার পরিচয় দিয়ে কেন্দ্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বার বার গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে চলেছে! যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা তাই দুটি সরকার রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার প্রতি বছর আয় ব্যয়মাত্রিকা (বাজেট) পেশ করে দরিদ্র জনগণকে সাঁড়াসী আক্রমণ করে আর্থিক শোষনে জেরবার করে৷  আর নিত্যপ্রয়োজন ভিত্তি জিনিসগুলির কোন দর নিয়ন্ত্রিত করা হয় বলে মনে হয় না৷ জিনিসের দাম বছরে কয়েকবার বাড়ে৷ বাজার দরের কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় একই স্থানে যে যেমন পারে জিনিস সেই দামে বিক্রি করে৷ চরম বেকার সমস্যার মানুষ ওষ্ঠাগত৷ বর্ত্তমানে করোনায় দেশ ক্ষত বিক্ষত! লকডাউন, কল কারখানায় তালাবন্দী, রুজি রোজগার,যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় দেড়বছর একেবারই অচল অবস্থায় দেশ ভুগছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো জোর কদমে গদীর লড়াইতে ব্যস্ত বিশেষ করে শাসক দলগুলি৷ কেন্দ্রে আসীন, বর্ত্তমানের শাসকদল এমন সব আইন পাশ এক তরফাভাবে যেটা মোটেই জনকল্যাণ মুখী নয়৷ তাই  দেখা গেল নির্বাচনে অনেকদল নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেছে আর উঠতি দলছুটদের দাপাদাপিটা যেন গণতন্ত্রের মুখে  থাপ্পড় দিচ্ছে৷ দলবাজিতে ওস্তাদ এই পশ্চিম বাঙলায় তৃণমূল ও দলছুট তৃণমূল দল৷ স্মরণে রাখা দরকার গণতন্ত্রে দেশ সেবকদের অংশগ্রহণটা জরুরী৷ সেটাই ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হয়ে পড়েছে৷ বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যদি গণতন্ত্র রক্ষায় এগিয়ে  আসে তাহলে বিরাট দেশের পক্ষে মোটেই অকল্যাণকর নয়৷ ভারতের মতো দেশ একদলীয় শাসন কি রাজ্যে ও কি কেন্দ্রে  মোটেই কাম্য নয়৷

অত্যন্ত লজ্জার হলো ভারত যে ভাবাদর্শে পৃথিবীতে গৌরবামন্বিত সেই মানবিক মূল্যবোধকে  অধিকাংশ শাসকদল চরমভাবে অগ্রাহ্য করে বিচ্ছিন্নতাবাদকেই হাতিয়ার করে শাসন ক্ষমতা কায়েমেই ব্যস্ত৷ তাই দেশের তরুণ তরুণীদের দেশকে রক্ষায় ভারতের সেই ত্যাগ,নিষ্ঠা সেবায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ তবে ভারতের মর্য্যাদা রক্ষা পাবে তা না হলে দেশের উন্নয়ন শুধু ব্যাহত হবে না লুটেরা দেশকে লুটে পুটে খাবে৷ কেন্দ্রে অবশ্যই জোট সরকারের প্রয়োজন৷