আদর্শ নেতৃত্বের প্রয়োজন

লেখক
রত্নেন্দু দাশ

উনবিংশ শতাব্দীতে মহাসদবিপ্র শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আবির্ভূত হয়েছিলেন জগত থেকে শোষণ, অত্যাচারকে সরিয়ে দিয়ে এক নোতুন পৃথিবী তৈরি করতে, তার সঙ্গে চাই কিছু জনের উপর দায়িত্ব দেওয়া যারা সমাজকে পরিচালিত করবে, যারা হচ্ছে সৎ ও আদর্শবাদী  নেতৃত্ব তাদেরকে প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব দর্শনে বলা হয়েছে সদ্‌বিপ্র, এরা কেমন হবে তার বিশদ ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন তাঁর প্রাউট দর্শনে, সেটা অবশ্যই আমাদের সবাইকে জেনে নেওয়া উচিত, সাথে আমাদেরও চেষ্টা  করে যেতে হবে৷

মহাসম্ভূতি শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন কর্ম করে যাওয়ার জন্যে কিন্তু ফলের আশা না করতে৷ কর্ম অনুযায়ী আমরা ফলওপাবো৷ যদি আমরা ভালো কাজ করি তবে প্রতিদানস্বরূপ সুনাম হবে, পার্থিব দেহ ছেড়ে দিলেও আজীবন অমর হয়ে থাকব ও মানুষ দুঃখ প্রকাশ করবে আর খারাপ কাজ করে থাকলে সমাজের জন্য অভিশাপ হয়ে দাড়াব, এটাই বাস্তব৷

মূল কথায় আসা যাক, বলা হয়েছে আদর্শ নেতৃত্বের প্রয়োজন, কিন্তু কেন? আদর্শ নেতার কি আদৌ প্রয়োজন আছে? হ্যাঁ, আছে নিশ্চয়৷ সমাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দু-একজনকে তার দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে নিতে হয় যাতে সমাজের সকলের কল্যাণ সাধন হয়, সমাজের কেউ যেন শোষিত, অত্যাচারিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার তথাকথিত নেতৃস্থানীয় মানুষ দেখতে পাচ্ছি? যদিও নেতাদের আজ অভাব নেই৷

এখন প্রশ্ণ হচ্ছে নেতা কেমন হবে যাঁকে দেশ কিংবা রাজ্য পরিচালনার জন্যে প্রতিনিধিত্ব করতে দেবো, তাঁর আচরণ কেমন হবে যাঁকে আমরা মন থেকে মেনে নেব ও বিশ্বাস করতে পারবো৷

নেতা হতে গেলে সর্বপ্রথম থাকতে হবে ত্যাগ ও সেবার ভাবনা যা আমরা নেতাজীর মধ্যে দেখতে পাই, কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় আজ এই ভাবনা দেখতে পাই না বর্তমান নেতাদের মধ্যে এর কারণ হচ্ছে অসাধু ব্যষ্টিকে বিরাট দায়িত্বের জন্য নির্বাচন করা বা প্রতিনিধিত্ব দেওয়া৷ যদি কারুর মধ্যে সেবা করার ভাবনাই না থাকে তবে সে সমাজের কল্যাণ করবে  কিভাবে? আর এমন মানুষকে বিরাট দায়িত্ব দেওয়া মানে বিপদকে ডেকে আনা, এছাড়া আর কিছু নয় যা আজকে হচ্ছে চতুর্দিকে৷

দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে যে প্রতিনিধিত্ব করবে তাকে অবশ্যই আধ্যাত্মিক নীতিবাদী হতে হবে কেননা আমাদের মধ্যে লোভ বৃত্তিটি থাকার জন্য কেউ কেউ (যারা সৎ) একশ - হাজার -লক্ষ-দশ লক্ষ টাকা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারলেও যদি আধ্যাত্মিক নীতিবাদী না হয় তবে তার সামনে কোটি টাকা রাখা হলে তার পক্ষে লোভ সংবরণ করা অনেক মুস্কিল হয়ে দাঁড়াবে৷  একজন নিষ্ঠাবান নেতাকে আধ্যাত্মিক নীতিবাদী হতেই হবে৷

তৃতীয় হচ্ছে শুচির্দক্ষ ও সুবুদ্ধিমান হতে হবে, শিক্ষিত তো হতেই হবে কারণ শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আলোর সন্ধান পাই তবে তথাকথিত বর্তমান শিক্ষা নয় যেখানে কেবল আত্মসার্থের চিন্তা করার ভাবনা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, হতে হবে নব্যমানবতা ভিত্তিক ভাবে শিক্ষিত যার মাধ্যমে কেবল মানুষ নয়, পশু, পক্ষী, উদ্ভিদেরও উন্নতিরও যত্ন নেওয়া হবে, এর কারণ হচ্ছে এদের বাঁচার অধিকার আছে যেমন আমাদের আছে৷

চতুর্থ যম-নিয়মে প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে৷ যমনিয়মের প্রত্যেকটা নীতি মানতে হবে এদের মধ্যে যেমন অহিংসা নীতির   পালন (অহিংসা কথার অর্থ হচ্ছে কাউকে মন, বাক্য ও শরীর দ্বারা আঘাত না করা), চুরি না করা, সত্যের পথ অনুসরণ করা,  অপরের সম্পদের প্রতি লোভ না করা যতটুকু সম্পদ রয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা, ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করা অর্থাৎ সমাজের  সবাইকে এক ব্রহ্মের বিকাশ ভেবে সেবা করা ও সর্বদা ব্রহ্মচিন্তায় রত থাকা সাথে দশের কল্যাণের চিন্তা করা৷

পঞ্চম গুণ হল মন, বাক্য ও কথার মাধ্যমে সামঞ্জস্য বজায় রাখা৷ আজ অধিকাংশ মানুষকে দেখা যাচ্ছে মনে মনে ভাবে এক, বলে আরেকটা আর করে পুরো ভিন্ন তাই তার মধ্যে এই তিনটির সামঞ্জস্য দেখা যায় না, তাই তাকে নেতৃত্বের দায়িত্ব উচিত নয়৷

আরেকটি গুণ হচ্ছে নিজের জীবনকে কাপড়ের মত ভাবতে হবে৷  কাপড় যেমন সময়ে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি সমাজের কল্যাণে নিজের জীবন দিতেও পিছ পা হবেন না৷

সমাজের নেতৃত্ব দিতে পারেন এমন মানুষ যারা মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দেখেন না বা মানেন না, সকলের জন্য মঙ্গল চিন্তা করেন শুধুমাত্র এমন মানুষ৷

আরেকটি গুণ হচ্ছে অবশ্যই যোগী বা বিদ্যাতন্ত্রের সাধক হতে হবে ও লক্ষ্য থাকবে আত্মার মুক্তি ও জগতের কল্যাণ৷