আর কত দিন---এই আন্দোলন আন্দোলন খেলা!

লেখক
মনোজ দেব

গণতন্ত্রের জন্য প্রচলিত প্রবাদ---জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের সরকার৷ এটাকে ব্যাঙ্গাত্মক করে বলা হয় বোকাদের জন্য, বোকাদের দ্বারা,বোকাদের সরকার৷ ব্যাঙ্গাত্মক হলেও এটাই নির্মম সত্য৷ স্বাধীনতার ৭৫ বছরে  সরকার যখন দেশজুড়ে স্বাধীনতার অমৃত মহা-উৎসবে মেতে উঠেছে তখন দেশের সেই সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার অমৃতের কতটুকু আস্বাদন করতে পেরেছেন? অথচ এই সাধারণ মানুষেই বছর বছর ভোট দিয়ে স্বাধীন দেশের সরকার নির্বাচন করে৷ সরকার কি জানার চেষ্টা করে দেশের  স্বাধীনতার জন্যে যারা জীবন দিয়েছে, রাজনৈতিক  নেতাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে দেশ ভাগের বলি হয়ে চৌদ্দপুরুষের ভিটে মাটি ছেড়ে নিশ্বঃ-রিক্ত হয়ে যারা পথের ধারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের ঘরে স্বাধীনতার  অমৃত কতটুকু পৌঁচেছে? বরং আজ তারা আবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের কোপে পড়ে নূতন করে ভিটে মাটি ছাড়ার আতঙ্কে ভুগছে৷ অর্থনীতির ক্ষেত্রেও চরম বৈষম্য৷ মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের  হাতে দেশের সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে৷ সাধারণ মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা৷ করোনাকালেও যখন কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে অর্ধাহারে ধুঁকছে তখনও ধনকুবেররা শত শত কোটি টাকা  মুনাফা লুটেছে৷ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থার প্রতিবেদনে ভারতে শেষ কয়েক বছরে বেকারত্ব যেমন বেড়েছে, অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে, গরীব আরও হয়েছে, ধনকুবেরদের ধন সম্পদ আরও আরও বেড়েছে৷ রাজনৈতিক দাদারা এসব চিন্তা থেকে জনগণকে  দূরে রাখতে নিত্যনূতন আন্দোলনের খেলা খেলছে৷

সুভাষচন্দ্র বোস কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর একটা  গুপ্ত তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন, তা হল ভারতে দেশীয় পুঁজিপতিদের দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ শক্তি অর্জন করছে৷ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট মধ্যরাতের অন্ধকারে ক্ষমতা হস্তান্তরের কেলেঙ্কারির পর স্বাধীন ভারতে অর্থনীতির কর্তৃত্ব ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ওই দেশীয় পুঁজিপতিদের হাতেই চলে যায়৷ ফল যা হবার তাই হচ্ছে৷ মধ্যরাতের অন্ধকারে পাওয়া স্বাধীনতা জনগণকে আজও অন্ধকারেই রেখে দিয়েছে৷

স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন৷ কিন্তু ওই যে দেশীয় পুঁজিপতি৷ তাই স্বাধীনতার পর আন্দোলন কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে৷ একদলকে সরিয়ে আরেক দল ক্ষমতায় আসে, জনগণের ভাগ্য কিন্তু তাতে বদলায় না৷ রাজনৈতিক স্বাধীনতার মোরা খেয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আজ পুতুল নাচের দলে পরিণত হয়েছে৷ বাজিগর সেই ধনকুবেরের দল৷ নাচায় পুতুল যথা দক্ষ বাজি করে৷’’

পুতুল নাচে দলে দলে বাজিগর কিন্তু একজনই৷ সব রকম আন্দোলনের দিকনির্দেশ বাজিগরই করে৷ বোকা জনগণ শুধু আন্দোলন করে৷ আন্দোলন যখন হওয়া উচিত ছিল দু’কোটি চাকরির দাবিতে, পেট্রোল ডিজেল গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, তখনই শাসকদলের এক নেত্রী ধর্মীয় উস্কানিমূলক মন্তব্য করে বসলেন৷ এটা কোন বেআক্কেলে কাজ নয়, অনেক ভেবে চিন্তে সুচতুর পরিকল্পনা৷ হারে রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ল উন্মাদের দল৷ তার রেশ কাটতে না কাটতেই সেনাবাহিনীতে চার বছরের চুক্তির চাকরি আবার সেই হা রে রে রে রে .... এই ভাবেই চলছে৷ প্রাউট প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় প্রভাত রঞ্জন সরকার এটাকে বলেছেন---‘Metamarphose sentimental strategy’’

মূল্য লক্ষ্য থেকে জনগণকে দূরে রাখতে নানা ধরনের সেন্টিমেন্ট তুলে আন্দোলনের উৎসমুখ ঘন ঘন পরিবর্তন করা৷ বোকা জনগণ শোষক শত্রুকে চিনতে না পেরে বুঝতে না পেরে অকারণ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছে৷ গরীব দিন দিন  আরও গরিব হচ্ছে, নিঃস্ব রিক্ত হচ্ছে, ধনি আরও ধনি হচ্ছে৷ রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা পরিচালিত বোকা জনগণ আন্দোলন খেলছে৷