বাংলা বানান প্রসঙ্গে৷

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

* ও, আর/এবং–সংযোজক ‘ও’–এর পরিবর্ত্তে অনেকে প্রায়শঃ ‘এবং’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন৷ কিন্তু ‘এবং’ মানে ‘ও’ নয়৷ ‘এবং’ বাংলা শব্দও নয় এটি একটি সংসৃক্ত শব্দ, যার মানে ‘এইভাবে’, ‘এইরকমে’৷ যেমন, ‘এবং কুরু’ মানে এইভাবে করো৷ সুতরাং ‘ও’–র পরিবর্ত্তে ‘এবং’ প্রয়োগ করলে চলক্ষে না৷ পরিবর্ত্তে ‘ও’ বা ‘আর’ লিখলেই ভাল হয়৷

* সরব/সোচ্চার–আজকাল বহু শিক্ষিত মানুষও ‘সরব’ (প্সন্তুত্রপ্ত) ক্ষোঝাতে গিয়ে ‘সোচ্চার’ কথাটা প্রায়শঃ লিখে থাকেন বা ক্ষলে থাকেন৷ শব্দটা আগাপাস্তলা ভুল৷ উচ্চারূণঞ্চঔচ্চার৷ ‘উচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা’৷ ‘ঔচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা সম্বন্ধীয়’৷ উচ্চারেণ সহ ইত্যর্থে ‘সোচ্চার’ (তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস) যার মানে হচ্ছে যিনি মলত্যাগ করেছেন কিন্তু এখনও জলশৌচ করেননি৷ মলত্যাগকালে কোঁথ দেওয়াকেও ‘উচ্চার’ ক্ষলা হয়৷ অতএব ‘সোচ্চার’ শব্দের আরেকটি মানে হ’ল যে মলত্যাগ করবার জন্যে কোঁথ দিচ্ছে৷ কেবল সংসৃক্ত বা ৰাংলা ব্যাকরণেই নয়, ৰাংলা ভাষায় অন্য ভাষার যে সব শব্দ আছে সেগুলো একটু মানে ক্ষুঝে ব্যবহার করলে ভাল হয়৷

* ক্ষেত/ক্ষুদে–তৎসমে ‘ক্ষ’ যথারীতিই থাকে৷ তবে তা কোথাও ঋগ্বেদীয় রীতিতে, কোথাও যজুর্বেদীয় রীতিতে উচ্চারিত হয়৷ তদ্ভবে শৌরসেনী প্রাকৃতে ‘ক্ষ’ ‘খ’–য়ে রূপান্তরিত হয় যেমন ক্ষেত্রঞ্ছখেত্তঞ্ছখেত্৷ মাগধী প্রাকৃতে ‘ক্ষ’ অক্ষরটির উচ্চারণ ‘ক্খ’ তাই যদিও মাগধী প্রাকৃতে তদ্ভবে ‘খ’ উচ্চারণ করা হয়, বানানে ‘ক্ষ’ রাখাই সঙ্গত, যেমন ক্ষেত্র>ক্ষেত্তঞ্ছক্ষ্ ক্ষুদ্রিকঞ্ছক্ষুদ্দিঞ্ছ্৷ বাংলা মাগধী প্রাকৃতজাত ভাষা, তাই বাংলায় ‘ক্ষেত’৷ কিন্তু হিন্দী শৌরসেনী প্রাকৃত–জাত ভাষা, তাই হিন্দীতে ‘খেত’ শৌরসেনী বানান লিখতে হবে৷ অনেকে বাংলায় ‘খেত’, ‘খুদে’ বানান লেখেন৷ এর সংশোধন দরকার৷

উচিত–মূল ধাতুর আদিতে অন্তঃস্থ ‘ব’ থাকলে তার সঙ্গে ‘ক্ত’, ‘ক্তিন্’ প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রত্যয়ান্ত শব্দ অন্তঃস্থ ‘ব’ থাকে না, সেই স্থানে ‘উ’–এর আগম হয়৷ যেমন, বচ্  ক্ত ঞ্চ ‘বচ্ত’ বা ‘বত্ত’ হবে না, হবে ‘উক্ত’৷ বচ্  ক্তিন ঞ্চ ‘বচ্তি’ বা বত্তি হবে না, হবে ‘উক্তি’৷ বদ্  ক্ত ঞ্চ বাদিত হবে না, হবে ‘উদিত’৷ তাই যা অনুবাদ করা হয়েছে তা ‘অনুবাদিত’ না হয়ে হবে অনু  উদিত ঞ্চ অনূদিত৷ বপ্  ক্ত ঞ্চ বপ্ত না হয়ে হবে ‘উপ্ত’ (যা বপন করা হয়েছে)৷ বচ্  ণিচ্  ক্ত ঞ্চ বচিত না হয়ে হবে ‘উচিত’৷ মনে রাখা দরকার ‘ক্ত’ প্রত্যয়ান্ত শব্দে খণ্ড ‘ত’ (ৎ) বা হসন্তযুক্ত ব্যঞ্জন হয় না৷ তাই ‘উচিত’ বানান পুরো ‘ত’ দিয়ে লিখতে হবে, খণ্ড ‘ত’ (ৎ) দিলে চলবে না৷ দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অনেক নামজাদা সাহিত্যিকও বানান–জ্ঞান না থাকায় লিখছেন ‘উচিৎ’৷ এতে জনসাধারণ বিভ্রান্ত হন৷ আলোচিত, আপ্যায়িত, গৃহীত, বর্ধিত প্রভৃতির মতই ‘উচিত’–ও একটি পুরো ‘ত’–এর শব্দ৷ এতে খণ্ড ‘ত’ (ৎ)–এর কোন অবকাশ নেই৷ ‘উচিত’ শব্দটির ভাবারূঢ়ার্থ হচ্ছে, যা বলানো হয়েছে৷ আর ‘উক্ত’ মানে যা বলা হয়েছে৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘উচিত’ শব্দের মানে যথোপযুক্ত, ঠিকঠাক৷ ‘উক্ত’ শব্দের ভাবারূঢ়ার্থ–যোগারূঢ়া একই৷ তবে ঋগ্বেদের খণ্ডকে বলা হয় এক একটি ‘মণ্ডল’৷ এক একটি মণ্ডলে থাকে কয়েকটি ‘সূক্ত’৷ এক একটি সূক্তে থাকে কতকগুলি ‘ঋক্’ (শ্লোক)৷ তাই ‘সূক্ত’ মানে ভাবারূঢ়ার্থে ‘যে ভাল কথা বলা হয়েছে’ আর যোগারূঢ়ার্থে ‘সূক্ত’ মানে কয়েকটি ঋকের সমষ্টি৷

 

উৎস

(সূত্র ঃ ‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যাকরণ বিজ্ঞান’)