‘চোর’ বলে চোর ধরো

লেখক
প্রভাত খাঁ

যদি আমাদের জন্মভূমি পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করতো  বিদেশী শাসক ইংরেজদের বিতাড়িত করে তাহলে হয়তো আমরা এক সুন্দর পূর্ণ স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশ পেতুম ও তখন এই বিশাল ভারতবর্ষ হতো পূর্ণ স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশ৷ তা কি হয়েছে? হয়নি৷ কিন্তু দেশকে রক্তাক্ত করে খণ্ড খণ্ড করে যে অধিকার পেয়েছি সেটি প্রশ্ণাতীত নয়৷ যাঁরা দেশ শাসনের অধিকার পায় তাঁরা নিজেদের মতো করে দেশের সাধারণ মানুষদের বুঝিয়েছেন! প্রথমে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস কয়েকবছর, তারপর ১৯৫০শের ২৬শে জানুয়ারী নিজেদের সংবিধান মোতাবেক দেশ খণ্ডিত সেই ভারত তার যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়, কিন্তু ইংরেজের কমনওয়েলথের বিশ্বস্ত এক সদস্য হয়ে৷ ইংরেজ শাসকদের তৈরী করা আইন কানুন আজও চলে৷ প্রথম দিকে চাকুরী পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার ছিল৷ তবে চাকরী আর বেতন তথৈবচ৷ এটা আমরা ভুক্তভোগী৷ এসব কথা আজকের নাগরিকদের স্মরণেই নেই৷  সেদিন যারা  কংগ্রেস বিরোধী ছিল তাদের চাকরী হতো না৷ পশ্চিম বাংলায় বামফ্রন্ট শাসনে এটা তুলে দেওয়া হয়৷

তাই কিছু লেখার আগে বার বার মনে পড়ছে হঠাৎ যাঁরা দেশ শাসনের দায়িত্ব পান তাঁরা তো  ইংরেজের দেওয়া একটি  খণ্ড দেশের শাসন অধিকার পান সেটা নাকি গান্ধীজী চাননি৷ মিঃ জওহরলাল ইংরেজদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই দেশ শাসনের কংগ্রেস প্রতিনিধি হিসেবে দাযিত্ব নেন৷ আজ কেন্দ্রে যাঁরা শাসনে আছেন তাঁরা পরিবারতন্ত্রের সমালোচনা করে যাচ্ছেন কিন্তু তাঁরা কি ভেবেছেন একবার সেদিন তাঁরা কোন অবস্থায় ছিলেন? আজ সেদিনের সব দলই ভেঙে দলছুট দল হয়েছে৷ তাদের শাসনে আমরা আছি যদি প্রশ্ণ করা হয়  দেশের কোটি কোটি গরিব  দরিদ্র মানুষ কেমন আছে? তারাই সিংহভাগ নাগরিক! তারাতো চরম বেকার, দু’বেলা অনেকে খেতেই পায় না, আর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ করে শোষণে তারা তা রক্তশূন্য৷ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে শাসন পেয়ে যা ইচ্ছে তাই করছে কারণ সেই শতকরা দশভাগ ধনীরাই তো দেশের মালিক আর  তারাই তো জনতার নামে নির্বাচনে ছলবল কৌশলের করে টাকার কেনামূল্যে হচ্ছে এম.এল.এ আর এমপিদের৷ কেনাবেচা করছে৷ এই তো  কুৎসিৎ গণতন্ত্রের নোংরা দলবাজি! এটাকে কি বলা যায় গণতন্ত্র? এটা তো চরম দুর্নীতি পরায়ণ একদল লোভী  রাজনীতির নামে রাজনৈতিক দলের একনায়কতন্ত্র শাসকগণ সেই দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরেই নানাদলের নামে জনগণকে শোষণ করেই চলেছে কি না৷ বেকার সংখ্যা এদেশে সবচেয়ে বেশী৷ তারা দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পায় না৷  তাদের বাঁচত তো বিকেন্দ্রীক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিতে হবে শাসককে৷ তার ফলে তারা স্বনির্ভর হয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে  ঘরে বাঁচতে  পারে৷ তা না করে কেন্দ্র সরকার আমেরিকার  মতো ধনী দেশ গড়তে দিবা স্বপ্ণই দেখছে! অধিক লোকসংখ্যার দেশ ভারতে লোকের কর্মোদ্যোগকে বাড়াতে হবে৷ দৈত্যাকৃতি কারখানা নয়৷ এখানে ব্লকস্তরে, গ্রামগঞ্জ সমবায় পদ্ধতিতে কৃষিভিত্তিক ও কৃষিউন্নয়ন সহায়ক , সমবায় পদ্ধতিতে সহায়ক শিল্পগুলি হবে স্থানীয় লোকদের উৎসাহেও  নিয়ন্ত্রনে সেখানে বাহিরের লোকের নাকগলানো চলবে না৷ যেখানে যা যা কাঁচামাল পাওয়া যায় তা ওপর ভিত্তি করে সেখানেই শিল্প গড়ে তুলে   স্থানীয় ভিত্তিতে বেকার সংখ্যা কমাতেই হবে৷ এদেশের  কেন্দ্র সরকার সরকারী সংস্থাগুলিকে যেগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেগুলিকে ধনীদের হাতে বিক্রি করে দিচ্ছে এটা কিন্তু গণতন্ত্রে অচল কারণ সরকার জনগণের ৷ বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার নিছক বেচারাম সরকার  হয়ে দেশকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিচ্ছে৷ এরা সংবিধানকে অস্বীকার করে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে এক অনিশ্চিতের পথে দেশকে টেনে নিয়ে চলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার আইনসিদ্ধ সংবিধানের ভিত্তিকেই অগ্রাহ্য করে বিরোধী দলের  সরকারগুলি ফেলে দিতে নির্লজ্জের মতো এইসব রাজ্যের এম.এল এ ও এমপিদের টাকা দিয়ে ছড়িয়ে দল ভাঙ্গিয়ে নিজেদের দলের সরকার গড়ার খেলায় মেতেছে৷ তাছাড়া বিরোধী দলের শাসকদের ন্যায্য প্রাপ্য টাকা দেওয়াটা আটকে রেখে তাদের জনগণের চোখে ব্যর্থ সরকার হিসাবে জাহির করতে ছলাকলায় মত্ত৷ এমন ধরনের কেন্দ্র সরকার এদেশে  আগে দেখা যায়নি৷ এরা দুর্নীতি দূর করবে! বিরোধী দলগুলিকে ফেলতে এটা যে কাণ্ড করছে কিন্তু নিজেদের দলের শাসকগণ যে কতটা দুর্নীতিগ্রস্থ সেটা দেখেও দেখছে না, শুনেও শুনছে না! মোদ্দা এই কেন্দ্রের সাম্প্রদায়িক সরকারকে সবক শেখাতে আজ অতি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সকল বিরোধীদলকে এক ছাতার তলায় এসে দাঁড়ানো৷ কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক দলগুলিই নোংরা দলবাজিতেই মত্ত৷ যারা জনগণের সমর্থন হারিয়ে একেবারে জন সমর্থনে শূন্যে হয়ে পড়েছে তারা শুধু ন্যায়নীতি ভুলে সেই গদীর স্বার্থে ধান্দাবাজি করে চলেছে যা বর্ত্তমানে দেশের যুক্তিবাদী বোটারগন এর চরম অপছন্দ৷ এরা খেয়ো খেয়ী করছে  আর আবোল তাবোল মন্তব্য করে পরিহাসেরই পাত্র হচ্ছে৷

ইন্দিরাগান্ধী যেমন সিবিআই (খাঁচায় পোষাতোতা পাখি) ও ইডিকে দলীয় স্বার্থে কাজে লাগিয়ে ছিলো৷ তেমনই এই সরকার স্বপ্ণের নোতুন ভারত গড়তে ইন্দিরারই মত একনায়কতন্ত্রের ভূমিকা গ্রহণ করেছেন৷ থেকে বেশ কিছু রাজ্য  বিরোধীদের ওপর খবরদারী করছে৷ ধীরে ধীরে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধির করে  কিছুটা সাবধানতা গ্রহণ করছেন৷ মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের জনৈক প্রধান বিচারপতি  রামান্না যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনকে বিশেষ করে গণতন্ত্রে প্রয়োজন৷ সিবিআই ও ঐধরণের জংশনগুলিকে শাসকদের হাতে না রেখে জনগণেরই স্বার্থে নিরপেক্ষতা রক্ষার স্বাধীন সংস্থার অধিকার দেওয়া উচিত তবে তাঁরা নিরপেক্ষ হিসাবে কাজ করা সাহস পাবেন৷ তা না হলে ‘ইয়েসম্যান’ হয়ে পড়বেন৷ মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় প্রভাতরঞ্জন সরকার বলেন যে পুলিশ বিভাগ বিচার বিভাগের হাতে থাকাটাই যুক্তিযুক্ত৷ তাতে সততা বজায় থাকে ও ন্যায়ধর্ম পালিত  হয়৷ ধরা পড়লেই চোর তা না হলে সবাই ধোয়া তুলসীপাতা৷ চোর বলে চোর ধরো৷ গণতন্ত্রটাই ধান্দাবাজদের স্বর্গ রাজ্য দলবাজিটাই হলো ভণ্ডামী! ভারতকে বাঁচাতে হলে কিছু সৎনীতিবাদী দেশ সেবক জরুরী৷