মাইক্রোবাইটাম অনুসন্ধান পরিক্রমা

লেখক
সমরেন্দ্রনাথ  ভৌমিক

‘মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব’-এর আবিষ্কার বিশ্বের বুকে এই প্রথম৷ এই তত্ত্বের উদ্ভাবক হ’লেন--- দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার৷ শ্রী সরকার তাঁর মাইক্রোবাইটামের তত্ত্ব নিয়ে মানব কল্যাণের জন্য জাগতিক, রাসায়নিক, চিকিৎসা, ঔষধ-প্রস্তুত সংক্রান্ত ব্যাপারে সমাজের এরূপ বহুমুখী সমস্যার সমাধান, এমনকি প্রাণের উৎস কী, তাও ‘তিনি’ (শ্রী পি.আর.সরকার) ব’লে গিয়েছেন৷ শুধু বলে গেছেন, তাও না, যাতে আমরা এই সম্পূর্ণ অজানা তত্ত্বটিকে মানব সমাজের কল্যাণ কাজে লাগাতে পারি তার জন্য এই মাইক্রোবাইটাম সংক্রান্ত গবেষণার জন্য বেশ কিছু নীতি-নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন৷

শ্রীসরকার তাঁর তত্ত্বের মধ্যে বলেছেন---‘‘এই মাইক্রোবাইটাম নিয়ে ব্যাপক গবেষনা হওয়া দরকার৷ কাজটি অবশ্যই বিরাট৷ তবুও বলব অবিলম্বে এই বিষয়ে গবেষনার সূত্রপাত হওয়া দরকার৷ নইলে আজকের সমাজের বহুবিধ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা যাবে না৷’’ তাই, শ্রীপি.আর সরকার বলেছেন---‘বুদ্ধিমান ও সমাজ কল্যাণকামী মানুষেরা যেন এই মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের প্রতি অবহেলা না করেন৷’ আবার তিনি একথাও বলেছেন--- এই কাজটা খুবই দুরহ কাজ, তবুও আমি এ বিষয়ে স্থির নিশ্চিত যে, সে দিন আর খুব দূর নয় যখন মানুষ এই মাইক্রোবাইটামের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ এনে ফেলবে৷

 

আজকের আলোচনার বিষয় হ’ল--- শ্রী পি.আর. সরকার নির্দেশিত কয়েকটি গবেষণা সংক্রান্ত নীতি --- নির্দেশনাকে নিয়ে৷

এখন, মাইক্রোবাইটাম উদ্ভাবক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের অভিমত হ’ল--- মাইক্রোবাইটাম সংক্রান্ত গবেষণায় ভৌতিক, রাসায়নিক, চিকিৎসা, ঔষধ-প্রস্তুত সংক্রান্ত গবেষণাগারে ও মানসিক গবেষণাগারেও করা যেতে পারে৷ এখন প্রশ্ণ হচ্ছে, মাইক্রোবাইটামকে নিয়ে ভৌতিক গবেষণাগারে গবেষণাও করতে হবে আবার এদের নিয়ে মানসাধ্যাত্মিক স্তরেও গবেষণা করতে হবে, কেন?

এই প্রশ্ণের উত্তরের পরিপেক্ষিতে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন বলেছেন--- পরমাণুর যেমন দুটি অংশ---স্থূল ও সুক্ষ্ম, তেমনি মাইক্রোবাইটামরও আছে দুটি অংশ--- স্থূল ও সূক্ষ্ম৷ এ যাবৎ পরমাণু গবেষণায় পরমাণুর স্থূল অংশকে নিয়ে করা হয়েছে কিন্তু পরমাণুর সূক্ষ্মত্বের অংশকে নিয়ে কোন অনুসন্ধান করা হয়নি৷’’ তাই গবেষণার ব্যাপারে মাইক্রোবাইটাম প্রবক্তার অভিমত হচ্ছে, পরমাণু ও মাইক্রোবাইটাম উভয়কে নিয়েই গবেষনা যুগবৎ এগিয়ে চলা উচিত৷ আর যুগবৎ গবেষণার ফলে সমগ্র সৃষ্টির অনেক উপকার সম্ভব হবে৷

একথাও শ্রী সরকার বলেছেন, এই মাইক্রোবাইটাম নিয়ে যাঁরা গবেষনা করবেন তাঁদের মানবীয় মনস্তত্ব অবশ্যই খুব ভালভাবে জানতে হবে৷ তাছাড়া পরমাণুর সূক্ষ্ম অংশidea-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, আবার স্থূলতর অংশ জড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ সুতরাং এ ব্যাপারে বর্তমানে যাঁরা পরমানু গবেষণা করবেন, তাঁদের অবশ্যই এই গবেষণার জন্য এগিয়ে আসতে হবে এবং এই সব গবেষকদের মানবীয় মনস্তত্বকে বেশ ভালভাবেই জানতে হবে৷

যেহেতু, মাইক্রোবাইটাম জীবিতসত্তা living being), তাই এদেরও সূক্ষ্মদেহ Subtle physical) আছে কিন্তু এই দেহ ভাব idea)-এর মত সূক্ষ্ম৷ সুতরাং মাইক্রোবাইটামের উপর ভৌতিক গবেষনাগারে Physical laboratory) গবেষনা করতে হবে৷ আবার, মাইক্রোবাইটা আত্মা Spirit)-কে জড়ের কাছাকাছি নিয়ে আসে, অর্থাৎ যে তত্ত্ব জীবন সৃষ্টির সহায়ক, তা আসে আধ্যাত্মিক বা আধিদৈবিক Supra-psychic) শক্তির পরিভূর মধ্যে৷ সুতরাং এই অংশের গবেষনা ভৌতিক গবেষণনাগারে সম্ভব নয়, এর জন্যে প্রথমে মানসিক গবেষনাগার প্রয়োজন৷

তাহ’লে দেখা যাচ্ছে---পরমাণু ও মাইক্রোবাইটাম উভয়েরই স্থূলতর ও সূক্ষ্মতর অংশ আছে৷ যে, অংশটুকুভাবের নিকটবর্তী তা হ’ল সূক্ষ্মতর অংশ, আর যে অংশটুকু জড়ের নিকটস্থ,সেই অংশ হ’ল স্থূলতর৷ অতএব, পরমাণু ও মাইক্রোবাইটাম উভয়েরই এই স্থূলতর অংশ গবেষণার জন্য ভৌতিক গবেষণার দরকার, আর উভয়েরই সূক্ষ্মতর অংশকে অর্থাৎ ভাবের idea) নিকটবর্তী অথবা পরমানুর সূক্ষ্মতর অংশকে সাধনার মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব৷ এই অংশের জন্যে ভৌতিক গবেষনা করা যাবে না৷ শুধুমাত্র সাধনা করেই যে মাইক্রোবাইটামকে মানব কল্যাণের কাজে লাগাতে পারবো, তাও সম্ভব না৷ এক্ষেত্রে মাইক্রোবাইটা নিয়ে ভৌতিক গবেষনা, আর সেই সঙ্গে মানসাধ্যাত্মিক সাধনা পাশাপাশি করতে হবে৷ এই যদি করা যায়, তা হ’লে ‘ৰাৰা’ বলেছেন---‘‘গবেষনার ফল হবে বিস্ময়কর ৷’’

এখন, যদি আমরা জড়ের সূক্ষ্মতর অবস্থা বাস্তবের সম্পর্কে জানতে চাই, তবে জপ, ধারণা ও ধ্যানের মাধ্যমে আমাদের মনকে একাগ্র করতে হবে৷ আর যদি মাইক্রোবাইটামের স্থূলতর অংশের সম্পর্কে জানতে চাই বা কাজে লাগাতে চাই, তা হ’লে মানসিক গবেষণার প্রয়োজন হবে৷ সুতরাং ভৌতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক এই তিন স্তরেই গবেষনা চালিয়ে যেতে হবে৷

এখন এরপর প্রশ্ণ হচ্ছে যে, এই তিন স্তরেই গবেষনা সংক্রান্ত কাজ করার জন্য কারা আগিয়ে আসবেন? এই প্রশ্ণের পরিপ্রেক্ষিতে আমার অভিমত হচ্ছে--- বর্তমানে যাঁরা পরমানু বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন অর্থাৎ গবেষনা করছেন, কিংবা রসায়ন বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করছেন, তাঁদের অথবা তাঁদের মত উৎসাহী ব্যষ্টিবর্গকে ‘মাইক্রোবাইটাম’---গবেষনায় আত্ম নিয়োগ করতে হবে৷ তবেই হয়ত বা আমরা ‘ৰাৰা’ (শ্রীপি.আর.সরকার)-র নির্দেশানুসারে মাইক্রোবাইটাম গবেষনাকে বাস্তবায়িত করতে পারবো৷