শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’’

লেখক
সুকুমার সরকার

পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন নয় একুশ শতকের নোতুন পৃথিবীর দাবী ‘‘আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা’’! পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন যেখানে বিশ্বের সকল বৈচিত্র্যকে ধবংস করে মানুষের চাহিদা  ও যোগানকে একই স্তরে নামিয়ে আনতে মরিয়া বিশ্বৈকতাবাদ সেখানে বৈচিত্র্যের মধ্যে মিলনের প্রয়াস করতে সচেষ্ট৷ বর্তমান বিশ্ব আজ এই দুই দ্বন্দ্বের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে৷ আর এই দ্বন্দ্বের নিস্পত্তির ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব কোন্‌ দিকে ধাবিত হবে বৈচিত্র্যহীন পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের দিকে, নাকি আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদ প্রতিষ্ঠার  দিকে? মানুষের ভাষা-সংস্কৃতিও আজ এই প্রশ্ণের মুখোমুখি৷

ভাষা প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের একটি বড় উদাহরণ৷ একই মানব প্রজাতির বোধের ভাষা এক হওয়া সত্বেও প্রকাশরূপের ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে ভাষার নানান পার্থক্য ঘটে গেছে৷ এই পার্থক্য ঘটেছে প্রথমত সোসিও-রেসিকো কালচারাল ইনফ্লুয়েন্স’-এর  কারণে৷ দ্বিতীয়ত আবহাওয়াগত পার্থক্যের কারণে৷ এই দুই পার্থক্যের কারণে মানুষে মানুষে ভাষার এত পার্থক্য ঘটে গেছে৷ এত বিভিন্ন ভাষার সৃষ্টির হয়েছে৷ পার্থক্যের এই নানান ভাষা পৃথিবীর বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনজাতির মানুষের নানান সাংবেদনিক উত্তরাধিকারের দলিল হয়ে আছে৷ একে একই স্তরে নামিয়ে আনার কোনো মানে হয় না৷ তাই একক কোনো ভাষা বা লিপি দিয়ে বিশ্বের সকল মানুষের সাংবেদনিক উত্তরাধিকারকে প্রতিনিধিত্ব করা যাবে না৷ যদিও তা করার চেষ্টা করা হয় তার জন্য এমন কোনো ভাষা বা লিপির সাহায্য নিতে হবে যে ভাষার শব্দ, অক্ষর, উচ্চারণের প্রভাব জননীর মতো সকল ভাষার মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে আছে৷ একই ভাবে লিপির ক্ষেত্রে এমন কোন লিপির সহায়তা নিতে হবে যে লিপির প্রকাশ ক্ষমতা ও উচ্চারণ স্পষ্টতা সর্বাধিক৷ আর সেই লিপির প্রকাশ ক্ষমতা ও উচ্চারণ স্পষ্টতা সর্বাধিক৷ আর সেই লিপিকে বিশ্বের সকল মানুষের মানস-বোধাত্মক ধবনিবিজ্ঞানগত অভিব্যক্তির সকল সাংবেদনিক উত্তরাধিকারকে তুলে ধরতে সক্ষম হতে হবে৷

ভাষার ক্ষেত্রে লিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ লিপি হলো কোনো ভাষার শব্দ অক্ষরের প্রতীকী চিহ্ণ মাত্র নয় মানস-বোধাত্মক ধবনিবিজ্ঞানগত অভিব্যক্তির সাংবেদনিক উত্তরাধিকারও বটে৷ অর্থাৎ লিপির সাহায্যে আমরা যে চিহ্ণ আঁকি, তা আমাদের মনের বিভিন্ন ভাবের বহিঃপ্রকাশ৷ যা চিত্রের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলি৷ বস্তুত লিপির আবিষ্কারই হয়েছে মনের এই চিত্র আঁকতে গিয়ে৷ আর তাই পৃথিবীর প্রথম লিপি এসেছে চিত্রলিপি৷ আজ  থেকে প্রায় সাত হাজার বছর আগে চীনা ভাষায় প্রথম লিপি আবিষ্কার হয়েছে৷ চীনা ভাষার সেই লিপি বোধাত্মক চিত্রলিপি৷ চিত্র লিপির পর এসেছে বোধের রেখা লিপি৷

আবার মানস-ধবনির উচ্চারণই শুধু নয় মনের রঙ বা বর্ণও প্রকাশ পায় লিপির সাহায্যে৷ তাই লিপিমালাকে বর্ণমালাও বলা হয়৷ ‘ক’ অক্ষর উচ্চারণের সঙ্গে ‘ক’ যেমন একটি ধবনিতরঙ্গের সৃষ্টি করে, তেমনি সেই ‘ক’ ধবনিতরঙ্গের সঙ্গে ‘ক’ বর্ণতরঙ্গও সৃষ্টি হয়৷ অর্থাৎ প্রতিটি লিপির সঙ্গে বোধের শব্দ তরঙ্গ যেমন থাকে, তেমনি বর্ণ তরঙ্গও থাকে৷

মনের ভাবকে মানুস ব্যক্ত করেছে শব্দ অক্ষরের সাহায্যে৷  সেই ব্যক্ত ভাব-ভাষা মানুষের মুখে এসেছে লিপি আবিষ্কার হবার অনেক আগে থেকেই৷ কিন্তু লিপি না থাকায় মানুষ তা গ্রথিত করতে পারেনি৷ লিপি আবিষ্কারের পর থেকে  মানুষ মুখের ভাষাকে গ্রথিত করেছে৷ সুতরাং মানব সভ্যতার যাত্রাপথে লিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ সময়ের বিবর্তনে লিপিরও নানান বিবর্তন হয়েছে৷ চিত্রলিপির চেয়ে লেখা লিপির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে৷ আবার লিপি শুধু ভাষাকেহ গ্রথিত করেনি বিশ্বের বিভিন্ন মানুষকেও এক সূত্রে গ্রথিত করেছে৷ এই গ্রন্থিত করণে যে লিপি যত সহজ সরল ও অধিক মনের ভাব প্রকাশে সক্ষম হয়েছে, সেই লিপি তত বেশি ভাষার প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে৷ সেদিক থেকে বিচার করলে একদিকে বৈদিক-সংস্কৃত জাত ভারতীয় ভাষাগুলির লিপি ও অন্যদিকে রোমান লিপি পৃথিবীর বেশি  সংখ্যক ভাষাগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে৷ মাঝখানে চৈনিক চিত্রলিপিও উত্তর-পূর্ব এশীয় দেশগুলির ভাষাকে যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে৷ আবার যেকোন কারণেই হোক ইংরেজি ভাষা বিশ্বের লিঙ্গুয়াফ্রাঙ্কা হয়ে ওঠার কারণে ইংরাজি ভাষার রোমান লিপিও বিশ্বের প্রতিনিধিত্বমূলক লিপি হয়ে উঠেছে৷ অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাভাষী মানুষ নিজের নিজের মাতৃভাষার লিপি (যদি থেকে থাকে) ছাড়া দ্বিতীয় যে লিপিটা প্রায় শিক্ষিত সকল মানুষই জানেন, তা হলো রোমান লিপি৷

এখন প্রশ্ণ হচ্ছে, ইংরেজি ভাষা যে গ্রহণীয় মানসিকতা ও উচ্চপ্রকাশ ক্ষমতার কারণে বিশ্বের সকল ভাষার শব্দ অক্ষর নিয়ে সমৃদ্ধ ভাষা হয়ে উঠতে পেরেছে ইংরেজি ভাষার সেই রোমান লিপির কি সেই ক্ষমতা আছে যা সকলের ভাষার মানস-বোধাত্মক ধবনিবিজ্ঞানগত অভিব্যক্তির উচ্চারণ প্রকাশ করতে পারে?

ইংরেজির A’ অক্ষরের একুশ রকমের উচ্চারণ আছে৷ কিন্তু লিপিমালায় একটি  মাত্র A’ বর্ণ৷ আরা ফরাসি, স্পেন সব অন্য অনেক ভাষায় ইংরেজির H’ অক্ষরের উচ্চারণ হয় না৷ তাঁরা লেখেন H’ কিন্তু উচ্চারণ করেন O’৷ যেমন, লেখেন Honer’ (হনার) উচ্চারণ করেন ‘অনার’৷ লেখেন Hotel’ (হোটেল) উচ্চারণ করেন ‘ওতেল’৷  লেখেন Paris’ উচ্চারণ করেন ‘পারী’৷ এক্ষেত্রে ফরাসি বা স্পেন বা অন্য ভাষার উচ্চারণ যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার  জন্য রোমান লিপি নেই৷ তাই রোমান লিপি সর্বাংশে ভারতীয় ভাষাগুলি সহ বিশ্বের অনেক ভাষার শব্দ-ধবনি উচ্চারণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না৷ রোমান লিপির এই অপূর্ণতার  কথা মাথায় রেখে বলা যায়, শুধু রোমান লিপি দিয়ে বিশ্ব সকল ভাষার প্রতিনিধিত্ব সম্ভব নয়, এব্যাপারে ভাষাতাত্ত্বিকরা প্রায় নিশ্চিত৷ আবার আরবি, ফার্সী, হিব্র, লাতিন, ইংরেজি সহ অনেক ভাষার উচ্চারণ ভারতীয় ভাষার লিপির সাহায্যে তুলে ধরা যায় না৷ যেমন, ‘কোরাণ’ ‘খোদা’, ‘হক’, হাফিজ, হজ্ব, ‘জোডিয়াক’, ‘জ্যোমাটো,  ইত্যাদি৷

তবে এ কথা ঠিক সমগ্র বিশ্বের একদিকে রোমান লিপি বা একটু এদিক ওদিক করে রোমান লিপির সমগোত্র লিপি ও অন্যদিকে বৈদিক-সংস্কৃত ও দেশীয়-সংস্কৃত সঞ্জাত ভারতীয়  ভাষার লিপিগুলিই সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাকে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে৷ মাঝখানে চীনা ভাষা ও সেমেটিক ভাষায় চিত্র লিপিগুলির লিখন পদ্ধতি ভিন্ন রকমের হলেও মানস-বোধাত্মক  ধবনিবিজ্ঞানগত অভিব্যক্তি বৈদিক ভাষাগুলির মতোই৷

বিশ্বের সকল লিপিগুলির মধ্যে আবার ভারতীয় লিপিগুলি অধিক মানস-বোধাত্মক ধবনিবিজ্ঞানগত সম্পন্ন৷ ফলে এই লিপির মাধ্যমে অধিক মনোভাব ব্যক্ত করা যায়৷ ভারতীয় বর্ণমালাগুলি সিন্ধি বা সিন্ধু লিপির বিবর্তিত ব্রাহ্মী, খরোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত সারদা, নারদা, কুটীলা ও তৎপরবর্তী কালে এই সারদা, নারদা, কুটীলা থেকে উদ্ভূত কাশ্মীরী, ডোগরী, পাঞ্জাবী, গুজরাতী, নাগরী, দেবনাগরী, মোড়ী, চুরুবালী, উড়িয়া, আসামী বাংলা প্রভৃতি লিপিগুলির উদ্ভব হয়েছে৷ উল্লেখিত এই ভাষাগুলির প্রত্যেকটিতেই মাতৃকা বর্ণসঞ্জাত পঞ্চাশটি লিপি বা বর্ণমালায় বিধৃত হয়ে আছে৷ এর মধ্যে আবার ‘নাগরী’ ‘দেবনাগরী’ অধিক বিজ্ঞান সম্মত ভারতীয় ভাষার পঞ্চাশটি মাতৃকা  বর্ণের সবকটি  বর্তমানে উচ্চারিত বা ব্যবহৃত না হলেও এগুলি অধিক মানস-বোধাত্মক ধবনিবিজ্ঞানগত অভিব্যক্তি সম্পন্ন৷ সম্প্রতিকালের একজন প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ  ডক্টর পবিত্র সরকারও এ কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘দেবনাগরী ও ভারতীয় কয়েকটি বর্ণমালা যে  অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক রীতিতে বিন্যস্ত সে সম্বন্ধে পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরাই মুক্তকন্ঠ৷ বস্তুতপক্ষে ভারতীয় বর্ণমালার বৈজ্ঞানিক প্রথায় সজ্জিত  বর্ণমালা পৃথিবীতে আর একটিও নেই৷

(১) সুতরাং বিশ্বলিপি তৈরি করতে গেলে অধিক প্রকাশক্ষম ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সজ্জিত কোনো লিপি মালার সহায়তাই নিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে মাতৃকা বর্ণসঞ্জাত ভারতীয় বর্ণমালার দাবীই অগ্রগণ্য৷ কিন্তু, রোমান লিপিও  বর্তমানে একটি বিরাট সংখ্যক মানুষের ভাষাগত প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে৷ সেক্ষেত্রে এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে যদি নোতুন কোনো লিপি  তৈরি করা যায় তবে তা হবে অধিক যুক্তিসঙ্গত ও সকলের কাছে গ্রহণীয়৷ এতে  করে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাগুলির মধ্যে একটি  ভাষাগত  ঐক্য গড়ে উঠবে৷

প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, ভাষা ও লিপির ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনের কথা ভেবে এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ভাষাতত্ত্ববিদ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার ‘রোমান সংস্কৃত বর্ণমালা’ নামে নোতুন এক বিশেষ লিপি প্রবর্তন করেছেন৷ নতুন এই ‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’য় রোমান বর্ণমালার ছাবিবশটি লিপির সঙ্গে  সংস্কৃত বর্ণমালার পঞ্চাশটি লিপির পারমুটেশান কম্বিনেশন করে এই ‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’ তৈরি করা হয়েছে৷ সংস্কৃত বলতে  এখানে  সংস্কৃত ভাষাকে বোঝানো হয়নি৷ সংস্কারজাত বৈদিক ভাষা ও সংস্কারজাত ভারতীয় প্রাকৃত  ভাষাগুলির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সর্বভারতীয় সংস্কৃত ভাষাকে বোঝানো হয়েছে৷ অতীতে এই সংস্কৃত ভাষার নিজস্ব কোনো লিপি ছিল না৷ যখন যে প্রাকৃত ভাষার মানুষ সংস্কৃত ভাষাকে লিপিবদ্ধ করেছেন, তাঁরা তাঁদের  নিজেদের প্রাকৃত ভাষার লিপিতে তা  করেছেন যাইহোক, রোমানলিপির সঙ্গে ভারতীয় সংস্কারজাত লিপির  এই পারমুটেশান কম্বিনেশনের ফলে নতুন এই ‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’র সংখ্যা দাঁড়িয়েছে বাষট্টিটি৷ কিন্তু লিপিচিহ্ণ ওই রোমান হরফের ছাবিবশটিই থেকে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ নতুন এই ‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’য় লিপিচিহ্ণ থাকছে ছাবিবশটিই৷ কিন্তু বর্ণ থাকছে বাষট্টিটি৷ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের মতে, বাষট্টিটি ‘রোমান -সংস্কৃত বর্ণমালা’ বা ধবনির সাহায্যে ও ছাবিবশটি ‘রোমান লিপির সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনো ভাষা বা উপভাষার দ্রুত পঠন, লিখন ও যথাযথ উচ্চারণ করা সম্ভব৷

প্রশ্ণ উঠতে পারে, ভারতীয় লিপিমালায় পঞ্চাশটি আর রোমান লিপিমালার ছাবিবশটি লিপি বা অক্ষর বা বর্ণের কথা হয়েছে সেখানে মাত্র বাষট্টিটি ও লিপির সাহায্যে কী করে বিশ্বের সকল ভাষার মানুষের মানস-বোধাত্মক  ধবনিবিজ্ঞানগত অভিব্যক্তির প্রতিফলন ঘটবে?

আসলে এটা সম্ভব হয়েছে আর্যভারতীয় লিপি ও রোমান লিপির মিশ্রণে নোতুন এই ‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’ তৈরির কারণে৷

বহু বছর আগে ‘বাঙলা অক্ষর’ নামক প্রবন্ধে যোগেশচন্দ্র রায় লিখেছিলেন, ইংরাজির (রোমান লিপির বিবর্তিত রূপ ইংরেজি লিপি) দোষ আবশ্যক অক্ষরের অভাব বাঙলার দোষ  অনাবশ্যক অক্ষরের সদ্‌ভাব৷

শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার এই কাজটিই করেছেন৷ তাঁর এই ‘রোমান-সংস্কৃত’ লিপির মাধ্যমে উভয় লিপির খামতিগুলো দূর হয়েছে৷ কেননা, এই উভয় লিপিতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মানস-বোধাত্মক ধবনিবিজ্ঞানগত অভিব্যক্তির প্রতিফলন আছে৷ উভয়ের লিপির সম্মিলিত শক্তিতে ‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’ অধিকতর প্রকাশক্ষম হয়ে উঠেছে৷

আজ একজন বিদ্যার্থীকে অনেকগুলি ভাষা শিখতে হয়৷ সেক্ষেত্রে প্রতিটি ভাষার জন্য আলাদা আলাদা লিপি না শিখেও এই একটি মাত্র ‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’র ছাবিবশটি রোমান লিপি শিখে বিশ্বের যে কোনো ভাষায় সেই বিদ্যার্থী পঠন-পাঠন করতে পারবেন৷ যথাযথ উচ্চারণ করতে  পারবেন৷ তার জন্য আলাদা অলাদা অনেকগুলি লিপি শেখার দরকার পড়বে না৷ দ্বিতীয়ত, ‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’র দ্বারা  ভৌম-বৈচিত্র্যের  কোনো নৃতাত্ত্বিক জনজাতির মাতৃভাষাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না৷ বরং বৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে মিলনের একটি প্রয়াস শুরু হবে৷ কালের প্রবাহে যে ভাষাই বিশ্বলিপি থাকলে সেই ভাষাকে দ্রুত বিশ্বের সকলকে মানুষের কাছে গ্রহণীয় গড়ে তোলা সম্ভব হবে৷