১০ লক্ষ পাখির সঙ্গে দ্বীপ ভাগ করে থাকেন ২০ জন মানুষ!

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

এ এক আশ্চর্য দ্বীপ৷ ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন, নির্জন এক এলাকা৷ আইসল্যান্ডের উত্তর উপকূল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট্ট দ্বীপ গ্রিমসে৷ মাত্র সাড়ে ছয় বর্গকিমি আয়তনের এই দ্বীপটি প্রায় জনমানবহীন৷ মেরুবৃত্তের উপর অবস্থিত এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে খানিকটা আলাদা হওয়ার কারণে গ্রিমসেয় মানুষ বসবাসের সংখ্যা হাতেগোনা৷ মানুষের বদলে সবুজে ঘেরা এই দ্বীপটিতে রাজত্ব করে পাখিরাই৷ বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, মেরুবৃত্তের মধ্যে এটি আইসল্যান্ডের একমাত্র বাসযোগ্য অঞ্চল৷ গ্রিমসে দ্বীপে অধিবাসীর সংখ্যা চমকে ওঠার মতো৷ মাত্র ২০ জন মানুষ বাস করেন আইসল্যান্ডের এই অতি ক্ষুদ্র এই দ্বীপে৷ গ্রিমসের দখল নিয়ে রেখেছে নানা প্রজাতির পাখি৷ জনসংখ্যার ৫০ হাজার গুণ পাখি থাকে মূল শহর থেকে বহু দূরের এই দ্বীপে৷ দ্বীপ জুড়ে ১০ লক্ষ সামুদ্রিক পাখির বসবাস৷ এ ছাড়াও বেশ কিছু স্থানীয় প্রজাতির ঘোড়া ও ভেড়ার পাল দেখা যায় আইসল্যান্ডের এই দ্বীপে৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর গ্রিমসের নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে পর্যটকেরা বার বার ছুটে আসেন৷ নাম না জানা অসংখ্য পাখি ও প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি খাড়া পাহাড়ের সৌন্দর‌্যের টানেই মূলত এখানে পা পড়ে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের৷ বিশেষ করে বসন্ত এবং গ্রীষ্মে এই দ্বীপটিতে বাসা বাঁধে পাফিন নামের এক ধরনের পাখির প্রজাতি৷

পাখিদের রাজত্বের কারণেই বিখ্যাত গ্রিমসে৷ বিশেষত, যাঁরা পাখি দেখতে পছন্দ করেন, পাখির ছবি তুলতে পছন্দ করেন, এমন পর্যটকদের জন্য গ্রিমসে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য৷ পাফিন ছাড়াও সামুদ্রিক পাখির মধ্যে ‘আর্কটিক টার্নস’, ‘রেজারবিল’, ‘গিলেমোটস’ এবং ‘ব্ল্যাক ফুট কিটিওয়াক’-সহ আরও পাখির মেলা বসে গ্রিমসে৷ এখানকার হাতেগোনা অধিবাসীদের গ্রিমসে বসবাসের জন্য প্রচুর ঝক্কি পোহাতে হয়৷ প্রথমত, আইসল্যান্ডের থেকে দূরত্ব অনেকটাই বেশি হওয়ায় যোগাযোগ হল প্রধান সমস্যা৷ বিবিসির একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এক সময় গ্রিমসে পৌঁছনো একটি দুঃসাধ্য কাজ ছিল৷ ১৯৩১ সাল পর্যন্ত একটি ছোট নৌকা বছরে মাত্র দু’বার চিঠি সরবরাহ করত৷

যাতায়াতের সেই কষ্ট আজ কিছুটা হলেও কমেছে৷ পর্যটকেরা আকুরেরি থেকে মাত্র ২০ মিনিটের বিমানযাত্রায় বা ডালভিক থেকে তিন ঘণ্টার লঞ্চ বা জাহাজ সফরে এই দ্বীপে পৌঁছতে পারেন৷ বর্তমানে এই দ্বীপে একটিই বিমানবন্দর রয়েছে৷ যে ২০ জনের একটি সম্প্রদায় পাকাপাকি ভাবে আইসল্যান্ডের রাজধানী রিখিয়াভিক ছেড়ে গ্রিমসে চলে আসেন, তাঁদেরই একজন হলেন হাল্লা ইঙ্গলফসডত্তির৷ তিনি স্থানীয় ট্যুর গাইড৷ মেরুভ্রমণের আয়োজন করে সংসার চালান৷ তিনি সংবাদমাধ্যমে জানান, এই দ্বীপের প্রেমে পড়েই তিনি এখানে বরাবরের মতো থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তাঁর কথায় প্রকৃতি এখানে নির্মম হলেও প্রতিটি ঋতুই এই দ্বীপে স্বতন্ত্র বৈচিত্র বহন করে৷ এই দ্বীপে রয়েছে একটিই গ্রাম৷ গ্রিমসের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত স্যান্ডভিকই হল এখানকার প্রধান বসতি এলাকা৷ একে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম হিসাবে ধরা হয়ে থাকে৷ এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে এটি একমাত্র আশ্রয়স্থল৷

বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এই দ্বীপটিতে বিদ্যুৎ সংযোগের কোনও ব্যবস্থা নেই৷ একটি মাত্র ডিজেল জেনারেটরই ভরসা৷ মূল ভূখণ্ড থেকে সাহায্য না আসা পর্যন্ত সঙ্কট মোকাবিলা করার জন্য স্থানীয়দের জরুরি পরিষেবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ উপকূলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতেই৷ এখানে নেই কোনও হাসপাতাল, ডাক্তার, পুলিশ স্টেশন৷ তিন সপ্তাহ অন্তর এক জন চিকিৎসক এই দ্বীপে এসে সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যান৷ গ্রিমসেতে একটি ক্যাফে, লাইব্রেরি, সুইমিং পুল এবং গির্জাও রয়েছে৷ স্থানীয় স্কুলঘরটি এখন একটি কমিউনিটি সেন্টার হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ স্থানীয়দের জিনিসপত্রের চাহিদা মেটানোর জন্য রয়েছে একটি মাত্র ডিপার্টমেন্টাল স্টোর৷ সেটিও দিনে মাত্র এক ঘণ্টা খোলা থাকে৷