২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকেই একটার পর একটা বিশ্বকাপ জয়ের দাবীদার দলগুলির পরাজয় বলে দিচ্ছিল এই বিশ্বকাপটি ‘অঘটনের বিশ্বকাপ’ বলে চিহ্ণিত হতে চলেছে৷ আসলে ব্রাজিল, জার্মানী, আর্জেণ্টিনা, পর্তুগাল নিজেদের ‘সেরা’র তকমাটা শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই রেখেছেন৷
মাঠে নেমে নিজেদের ‘সেরা’ হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি দর্শকদের কাছে৷ লিগ পর্যায়ের খেলাগুলিতে কেমন যেন সাধারণ ফুটবল খেলা হচ্ছিল৷ বিশ্বকাপের আস্বাদ দর্শকরা পাচ্ছিলেন না৷ সেই সময়ই জার্মনির বিদায়, নেইমার, রোনাল্ডো, মেসিদের বার বার আটকে যাওয়া---ঘটে চলেছিল৷ একের পর এক খেলা হতে লাগল, আর দর্শকের মধ্যে আলোচনায় উঠে এল যে এই বিশ্বকাপে তথাকথিত কোনও স্টার ফুটবলারের কপালে বিশ্বকাপ নেই৷ প্রতিটি ম্যাচেই নজরে পড়ল তাবড় তাবড় খেলোয়াড়দের আটকে দেওয়ার ফুটবল৷
বিশ্বকাপের আসরে মাঠে বড়-ছোট ফারাক ঘুচিয়ে যখন দলগত সংহতিকে পাথেয় করে বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যাণ্ড জাপানের মতো দলগুলি অসাধারণ ফুটবল উপহার দিতে লাগল৷ এই দলগুলি ইয়ূরোপ, আমেরিকার বড় বড় দলগুলির সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিয়ে লড়ে গেল এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে জয় ছিনিয়ে নিল৷
বিশ্বকাপ ফুটবলে হেভিওয়েট দল হিসেবে যাদের ধরা হয়েছিল যেমন জার্র্মনি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পর্তুগাল স্পেন---এই দলগুলি তো সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিতে বাধ্য হ’ল৷ যে চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছিল তাদের মধ্যে দুটি দল বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া এখনও বিশ্বকাপ জয় করতে পারেনি৷ ক্রোয়েশিয়া এই প্রথম সেমিফাইনাল খেলল৷
২০১৮-এর বিশ্বকাপ কারও একার বিশ্বকাপ বলে চিহ্ণিত হয়ে রইল না৷ এই বিশ্বকাপ ইঙ্গিত দিয়ে গেল একক কৃতিত্বে একটি দলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা ছাড়তে হবে ফুটবলবোদ্ধাদের৷ কোনও সন্দেহ নেই লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেইমার, সুয়ারেজরা যে কোনও দলের সম্পদ৷ কিন্তু একক কৃতিত্বে নিজ নিজ দলকে তাঁরা কেউই ম্যাচ জিতে নিতে পারেননি৷ আসলে তারকা খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভরতা হেভিওয়েট দলগুলিকে ডুবিয়েছে৷ ফলস্বরূপ আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল ও ব্রাজিল শেষ চারে আসার আগেই বিদায় নিতে হয়েছে৷ নক আউট পর্যায়ের আগেই বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪-র চ্যাম্পিয়ন দল জার্র্মনি৷ শেষ চারের দলগুলি দলগত সংহতির ফুটবল খেলার নজির রেখে সফল হয়েছে৷
অভিজ্ঞ প্রাক্তন ফুটবলারা মনে করেন একসঙ্গে অনেকদিন একই দলে খেলার সুফল পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া৷ ফুটবলে স্কিলের কোন বিকল্প নেই---একথা ঠিক, কিন্তু তিনচার জন মেসিকে বা রোনাল্ডোকে ঘিরে ধরলে মেসি বা রোনাল্ডোর সহ খেলোয়াড়দের আনমার্কড থাকার সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে নচেৎ সাফল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে৷ ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার কোথায়? আসলে তারুণ্যে ভরা এই দলটিকে দেখে মনে হয়েছে দলের প্রত্যেকেই তারকা ফুটবলার৷ প্রত্যেকেই দারুণ চনমনে আর দারুণ গতিসম্পন্ন৷ এবারের সেমিফাইনালিষ্টরা যোগ্য দল হিসেবেই সাফল্য পেয়েছে৷ অঘটন ঘটানোর জন্যেই তো ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়রা মাঠে বিপক্ষের ত্রাস হয়েজয় ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটান৷ এ ধরণের ঘটনা না ঘটলে বিশ্বকাপের মজাটা কোথায়! তাই সব মিলিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮ জানান দিল আগামী দিনে গতিময় তরুণ ফুটবলারদের জয় ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাবহুল ঘটনা অনেক অঘটন ঘটাবে৷ এতে জয় হবে ফটবলের৷ মান বাড়বে ফুটবলের৷