‘২১-এর নির্বাচনে কেন্দ্রের মন্ত্রীগণ পশ্চিমবাঙলায় রাষ্ট্রীয় শক্তির আস্ফালন দেখাচ্ছেন দলছুটদের হাত ধরে

লেখক
প্রবীর সরকার

পশ্চিম বাঙলায় রাজ্যস্তরে ২১-এর যে নির্বাচন হচ্ছে সেটিকে  প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছি একটা অতি বিসদৃশ ঘটনা৷ সেটি হলো এই রাজ্যে যে নির্বাচন হচ্ছে সেটা যেন মমতার  তৃণমূল দলের সরকার আর বিজেপি--- যে দলটা গড়ে উঠেছে প্রথম থেকে  দলছুট নেতাদের নিয়ে তৃণমূলের সদস্যগণই এখানে জড়ো হয়ে সরাসরি নির্বাচনে লড়ছে যাকে সম্পূর্ণ মদৎ দিয়ে চলেছেন রাজ্যের বাহির থেকে আসা বিজেপি দলের নেতারা কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যান্য হিন্দি বলয়ের কেন্দ্রীয় নেতারা৷ তাঁরা রাজ্যের বোটে ঢাকে কাঠি পড়ার আগে থেকেই যেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মতো সাজ রবে চিৎকার করছেন৷ কতবার যে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীগণও অন্যান্য নেতাগণ এসে করোনার মধ্যে  মাঠে লোক জড়ো করে মিটিং মিছিল করে চলেছেন তার হিসেব নেই৷ এঁদের একটাই লক্ষ্য তৃণমূল দলের শাসনকে বাঙলা থেকে উৎখাত করা  যেন তেন প্রকারেণ৷ নির্বাচন চলছে, তার যে দশা আমরা  দেখছি সেটা মোটেই একটা সভ্য দেশের শক্তিপূর্ণ নির্বাচন বলে মনে হয় না! যেন সব কিছু ভুলে জোর করেই একটা রাজ্য সরকার উৎখাত করার একধরণের  কৌশল৷ পশ্চিম বাঙলাকে যেন জয় করতে প্রায় ২০০ কোম্পানী আধা সামারিক বাহিনী এনে জড়ো করা হয়েছে৷ এই পশ্চিম বাঙলায় খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোট হওয়ার  দ্বিতীয় দিল্লীতে ঘোষনাই করেন আমরা পশ্চিমবঙ্গে ২০০টি আসনে  জিতছি৷ এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে মানায় না সেটা তাঁর মনেই হল না৷ এতে ধারণাটা কি হবে৷ বোট চলছে আর একজন দায়িত্বশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করছেন ২৯৪টার মধ্যে ২০০ আসলে জিতে আসছি৷ দিদিকে বাঙলা থেকে তাড়াবো৷ এ কেমন কথা? দিদি এই পশ্চিম বাংলার মাটিতে  জন্মেছেন৷ বোটে হারজিৎটা তো সব নয়, তাঁকে তিনি তাড়াবেন! তিনি তো ভিনরাজ্যের মানুষ৷ বাঙলার মাটিতে দাঁড়িয়ে তাঁর এতো কিসের স্পর্র্দ্ধ যে তিনি তাঁকে তাড়াবেন?

তিনি দিল্লির বুকে বসে আছেন প্রধানমন্ত্রী হয়ে, ভারতের শাসক৷ তিনি এমনকি দেশসেবা করেছেন যার জন্য তাঁর দৌলতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একজন আজীবন সমাজসেবী দেশসেবক তাঁকে তাড়াবেন! নির্বাচন মানে এই নয় যে মুখে যা আসবে তাই বলে হাততালি কুড়োবে৷ দেশটা কারোও পৈতৃক সম্পত্তি নয়, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসকের  এই ঔদ্ধত্য স্বৈরাচারের বিকৃতরূপ৷ দেশের জনগণ ও বিশ্বের মানুষ দেখেছেন সেই প্রথম থেকে অনেক প্রধানমন্ত্রী যেমন স্মরণীয় জওহরলাল, অটলবিহারীকে আর  ইন্দিরাকে৷ তাঁরা ঐপদে বসে রাজ্যের নির্বাচনে এসে এ ধরণের কথা কোনদিন বলেননি৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য নির্বাচনে রাজ্যের নেতারা খুব জোর কেন্দ্রের দলীয় নেতারা বক্তব্য রাখতে আসতেন ও মার্জিত ভাষায়  কথা বলতেন৷ দেশ শাসনটা কী ছেলের হাতে মোয়া৷ অদ্যাবধি কেন্দ্রের শাসনে বসে শাসক হিসাবে বিজেপি সারা ভারতের কতটা উন্নতি ঘটিয়ে  সার্থক হয়েছেন? দেশটাকে তো ভিখারীতে পরিণত করেছেন৷ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চেয়েও তো ভারতের আর্থিক দশা তলানীতে! আপনারা কিসের জোরে পশ্চিম বাঙলার জনগণকে বলে যাচ্ছেন যে এই পশ্চিম বাঙলাকে ‘‘সোনার বাঙলা গড়বো’’? বাঙালীরা কি  এতই ছেলে মানুষ যে এইসব ছেঁদো কথায় ভুলে গিয়ে উজাড় করে মতদান করে বসবেন বিজেপির সোনার বাঙলা গড়তে! সারা ভারতের চরম সর্বনাশ হয়েছে আবার নোতুন করে করোনার আক্রমণ৷ তার উপর ৮ দফা বোট এই পশ্চিম বাঙলায়! মানুষগুলোকে রোগে আক্রান্ত করে মেরে ফেলার ব্যবস্থা হয়েছে৷ যেখানে অন্যরাজ্য ১,২,৩ দিনে বোট এখানে কি এমন ঘটেছে কাঁড়ি কাঁড়ি আধা সামরিক বাহিনী এনে ৮দিন ধরে বোট করতে হচ্ছে? এটাই যে একধরণের  কূটচাল সেটা এ রাজ্যের  সবাই বোঝে৷

এই পশ্চিমবাঙলা সুভাষচন্দ্রের, রবীন্দ্র নাথের জন্মভূমি৷ মহান বিপ্লবীদের জন্মভূমি৷ বাঙালীরা বোঝেন কত ধানে কতো চাল৷ তাই এই মাটিতে দল ভাঙ্গিয়ে  দল করে ২০০ আসনে বাঙলার রক্ত শোষণ করাটা সোজা হবে বলে মনে হয়না৷

তবে অত্যন্ত লজ্জার কথা  এই বাংলাই হলো মীরজাফরদের  মতো  কুলাঙ্গারদেরও দেশ৷ তাই তাদের জন্য বাঙলার ক্ষতি যে কিছু হবে না  তা নয়, কিন্তু সেই ক্ষতিটা হতভাগ্য এই সমস্যা সংকূল বাঙলা প্রয়োজনে সহ্য করে নিতে বাধ্য হবে৷ পবিত্র নির্বাচনকে কিন্তু কলঙ্কিত করাটা দেশ নেতাদের পবিত্র কর্ত্তব্য নয় বলেই বাঙলা মনে করে৷ যার দরুণ জগৎসভায় সারা ভারত মাথাতুলে  দাঁড়াবে অদূঢ় ভবিষ্যতে৷ গণতন্ত্রের নামে সেই সাম্প্রদায়িকতার  জুয়া এই চরম সত্য কথাটি যেন আজকের শাসকদের স্মরণে থাকে৷ মহান ঈশ্বর রাজনীতিতে ভণ্ডামী, দ্বিচারিতাকে সহ্য কোন দিনই করবেন না৷