বিজন সেতুর সন্ন্যাসী হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে আনন্দমার্গের জনসংযোগ সচিব আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূত এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, ১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল কলকাতার বিজন সেতু ও বণ্ডেল গেট এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, এ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে, গায়ে পেট্রোল ঢ়েলে জীবন্ত জ্বালিয়ে আনন্দমার্গের ১৭ জন সন্ন্যাসী–সন্ন্যাসিনীক্ হত্যা করেছিল সি.পি.এমের ঘাতক বাহিনী৷
শুধুমাত্র বিজন সেতু বন্ডেলগেট নয়, ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ পুরুলিয়ার আনন্দনগরে আনন্দমার্গের পাঁচজন সন্ন্যাসীকে এরা খুন করেছিল৷ ১৯৬৯ সালে কোচবিহারে রবি সরকারকে, ১৯৯০ সালে ২রা এপ্রিল আনন্দনগরে কৃষিবিজ্ঞানী অসীমানন্দ অবধূত সহ পাঁচজনকে খুন করে সিপিএম হার্মাদরা৷ পুরুলিয়ার মতো টাঁড় জমিতে কী করে অর্থকরী ফসল লাগিয়ে আর্থিক সমস্যার সমাধান করা যায় তার শিক্ষা দিচ্ছিলেন অসীমানন্দজী৷ সেই কারণেই তাঁকে খুন হতে হয়৷
এক প্রশ্ণের উত্তরে আচার্য দিব্যচেতনানন্দ বলেন–আনন্দমার্গীদের ওপর বার বার সিপিএম আক্রমণ চালিয়েছে৷ এর প্রধান কারণ হচ্ছে আনন্দমার্গের অর্থনৈতিক দর্শন প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব)৷ ‘প্রাউট’যেখানে আধ্যাত্মিকতাকেই জীবনের ভিত্তি করেছে, সিপিএম সেখানে জড়বাদকেই জীবনের ভিত্তি মেনেছে৷ মানুষের সামাজিক–র্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্যে প্রাউটপ্রবক্তা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী পুঁজিবাদ ও মার্কসবাদকে খণ্ডন করে দিয়েছেন প্রাউট–তত্ত্বে৷ প্রাউট তত্ত্বের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী বলেছেন, ‘আমি চাই প্রতিটি মানুষ জীবনের নূ্যনতম প্রয়োজন–পূর্ত্তির গ্যারাণ্টি পাক৷ প্রতিটি মানুষ তার মানসিকক্ষেত্রের সমস্ত সম্ভাবনার পূর্ণ সুযোগ পাক৷ প্রতিটি মানুষ শাশ্বত সত্য উপলব্ধির সমান সুযোগ পাক ও বিশ্বের সকল উৎকর্ষ ও গৌরবের অধিকারী হোক৷’
কম্যুনিষ্টরা বুঝেছিল শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী এই ‘প্রাউট’দর্শনের কথা যদি সাধারণ মানুষের কাণে যায় তাহলে তারা কম্যুনিজমকে আস্তাকঁুড়ে ছুঁড়ে ফেলে প্রাউটকেই গ্রহণ করবে৷ তা যাতে আনন্দমার্গীরা করতে না পারে সেজন্যে আনন্দমার্গকে সিআইএর দালাল, সমাজবিরোধী, জমি দখলকারী বলে ও দু’–দুবার আনন্দনগরে দশ জনকে ও কোচবিহারে এক জনকে হত্যা করেও যখন আনন্দমার্গের গতিকে স্তব্ধ করতে পারছিলো না তখন আনন্দমার্গের বিরুদ্ধে ‘ছেলেধরা’গুজব রটিয়ে বিজন সেতুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করলো৷ যদিও কলকাতার তদানিন্তন পুলিশ কমিশনার ও অবিভক্ত ২৪ পরগণার এস. পি. হত্যাকাণ্ডের পরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন কোথাও কোন ছেলে হারায়নি, কোথাও কোন ছেলেধরার রিপোর্ট নেই৷
আচার্য দিব্যচেতনানন্দ বলেন–মানুষ কম্যুনিষ্টদের ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখান করেছে, যারা সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনী খুন করে আনন্দমার্গকে শেষ করতে চেয়েছিল তারাই আজ শেষের পথে– তবু মানব সমাজের সার্বিক স্বার্থেই প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে এই সত্য উন্মোচিত ও প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন৷ কারণ ওদের পাশবিক চরিত্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সার্বিক ধারণার অভাবের জন্যেই বাঙলায় ওরা ৩৪টি বছর দাদাগিরি করতে পেরেছে৷ এখনও কিছু মানুষের ওদের প্রতি মোহ রয়েছে৷ যথার্থ তদন্তের মাধ্যমে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হলে বাঙলার মানুষ বুঝতে পারবেন যে, কম্যুনিষ্টরা কত নিষ্ঠুর, কত পাষণ্ড৷ তাই আমরা চাই প্রকৃত সত্যের উন্মোচন ও যথার্থ বিচার৷ এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামী সিপিএমের নেতা কান্তি গাঙ্গুলী সহ অনেকেই কমিশনে হাজিরা না দিতে নানারকম বাহানা করেছিল, এমনকি হাইকোর্টেও গিয়েছিল৷ কিন্তু মহামান্য আদালত মানবতার ওই শত্রুদের আবদারকে পত্রপাঠ খারিজ করে কমিশনের সামনে সশরীরে হাজিরা দিতে বাধ্য করেন৷ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যষ্টিরা সাক্ষ্য দিয়ে কমিশনের কাজকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছেন৷ আমরা আশা করি খুব দ্রুত প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হবে৷