৩০শেএপ্রিল

সংবাদদাতা
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত
সময়

সেদিন বিজন সেতুর বুকে প্রকাশ্য দিবালোকে

অকস্মাৎ নেমে এসেছিল সূর্যহারা অরণ্যের অন্ধকার

শাসককুলের যত কুলাঙ্গার

ষড়যন্ত্রের নিশ্চিদ্র জালে করেছিল বিস্তার৷

মানব সেবায় নিবেদিত প্রাণ সপ্তদশ

অবধূত অবধূতিকা---

মিথ্যা গুজব অপবাদ তাদের জীবন

গ্রাস করেছিল আগুনের লেলিহান শিখা৷

কি যন্ত্রণা, কি নিষ্ঠুরতা, সাহায্যার্থে

চৌত্রিশ হাতে আকূল আবেদন হ’ল নিষ্ফল৷

পিশাচের অট্টহাসি, নরঘাতকের দল

তখন জড়বাদীদের জমানা,

ওরা ‘ধর্মেন হীনা’ তাই ‘পশুভি সমানা’৷

মনে পড়ে মহাভারতের সেই কলঙ্কিত অধ্যায়?

দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ---

নারী নির্যাতন?

সভায় উপস্থিত রথী-মহারথী বীর পুঙ্গব

বড় বড় যোদ্ধারা

দ্রৌপদীর কাতর কান্নায় কারো বিবেক কাঁপেনি৷

দুর্যোধনের পৈশাচিক অট্টহাসি

ত্রস্ত বিহঙ্গরা শুধু ডানা ঝাপটেছিল যন্ত্রণায় লজ্জায়

আর বীর যোদ্ধারা ভয়ে মূক৷

রাষ্ট্র মাঝে মাঝে দেশকে এমনই ভাবে দমিয়ে রাখে৷

শুভবুদ্ধিকে পাঠায় কবরে৷

কী দরকার ছিল জরুরী অবস্থার?

আসলে দরকার ছিল একমাত্র স্বৈরতন্ত্র কায়েম,

নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ৷

সেদিনও দেশের গণ্যমান্য দেশবরেণ্যরা

রাষ্ট্রের ভয়ে বাক্যহারা৷

দেশের চারিদিকে পাহাড়, সমুদ্র, মরুভূমি

যেন লুপ্ত,

শুধু কারাগার আর বিচারহীন অন্ধকার৷

সেই ধারাবাহিকতারই চিত্ররূপ বিজন সেতু

ছিল না কোনও যুক্তিগ্রাহ্য হেতু

তথাপি আধিভৌতিক, আধিৈেদবিক আধ্যাত্মিক

সমস্যা-সমাধানকল্পে সরল মনের চলমান

সপ্তদশ সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীর

অগ্ণিদহনে হ’ল অসময়ে মর্মান্তিক মৃত্যু৷

সাহায্যার্থে সেদিনও কেউ আসেনি এগিয়ে৷

ভীতচিত্ত সুশীল সমাজ আতঙ্কে নিশ্চুপ৷

মুখে কুলুপ,

নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান, জানলা দরজা বন্ধ৷

শাসকের রক্তচক্ষুর তির্যক দৃষ্টিতে ত্রাস

তাই প্রতিবাদ নয়, সুখী গৃহকোণে রসে বসে বসবাস৷

প্রতিবাদ করেছিল শুধু রাস্তার কয়েকটি কুকুর

প্রহারের ভয় না পেয়ে পশু হয়েও

পাশবিকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল---ঘেউ-ঘেউ

তথাপি অন্ততঃ তাদের দেখেও এগিয়ে আসেনি কেউ!

আর মুখ্য শাসক?

রাজদণ্ড ধূলায় লুণ্ঠিত, রাজধর্মচ্যুত দলদাস৷

অমানবিকতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত,

ভালমানুষের নকল ভাবমূর্ত্তির ঘেরাটোপে

চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় সহযোগে আরামে দিনযাপন৷

উনি না হাসেন, না কাঁদেন নির্বিকার,

শোন রে ভণ্ড, যত পাষণ্ড, তোদের দণ্ড অনিবার্য৷

সন্নাসী হত্যাকারীর বংশে কেউ থাকবে না বাতি দিতে৷

এ নয় আমার নিদান

এ শাস্ত্রের বিধান৷