৫ই মার্চের দিনটিকে সারা বিশ্বের সমস্ত আনন্দমার্গীরা পরম শ্রদ্ধাভরে ‘দধীচি দিবস’ হিসাবে পালন করে৷ এদিন তাঁরা বিশ্ব মানবতার বেদীমূলে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন সবাইকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন ও বিশ্ব মানবতার প্রতিষ্ঠার জন্যে সমস্ত পাপশক্তির বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের শপথ গ্রহণ করবেন৷
এখানে স্মরণীয়, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত বাগলতা এলাকায় যেখানে আধুনিক সভ্যতার কোনও আলো প্রবেশ করেনি, ছোট ছোট পাহাড় বন-জঙ্গলে ভরা, যোগাযোগ বা রাস্তাঘাটের কোন ও ব্যবস্থাই নেই, ওই এলাকাটি ছিল গড় জয়পুরের রাণীর৷ আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ ওই জায়গাটি চাইলে উনি সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে যান৷ যদি আনন্দমার্গ ওই এলাকার কোনও উন্নতি করতে পারে৷ সেই পাণ্ডব বর্জিত এলাকাটিকে ‘আনন্দনগর’ নাম দিয়ে মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী তার শত শত সর্বত্যাগী সন্নাসী-সন্ন্যাসিনী ও গৃহী শিষ্যদের নিয়ে এই আনন্দনগরের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু করেন৷ এখানে প্রাইমারী থেকে হাইসুকল, কলেজ, অনাথ শিশুদের জীবন গড়ে তোলার জন্যে চিলড্রেন হোম, অন্ধ-মূক-বধিরদের জন্যে আনন্দমার্গ একাডেমী অব লাইট, কুষ্ঠাশ্রম, হাসপাতাল প্রভৃতি গড়ে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যায়৷ তখন ছিল যুক্তফ্রণ্টের রাজত্ব৷ সর্বত্র সিপিএম ও হার্মাদ বাহিনীর পৈশাচিক নৃত্য৷ যারা দরিদ্র মানুষদের নিয়ে রাজনীতির নামে শোষণ ও আধিপত্য বিস্তার করার জন্যে সদাব্যস্ত, তারা চেয়েছিল এই আশ্রমটিকে পুরোপুরি কব্জা করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে৷ আনন্দমার্গ থেকে তা করতে না দেওয়ায় স্থানীয় বিডিও ও কিছু সমাজবিরোধীদের দিয়ে ও বাইরে থেকে বিশাল হার্মাদ বাহিনী আনিয়ে সুপরিকল্পিত ভাবে আনন্দনগরের ওপর আক্রমণ চালায়৷ নরপিশাচদের সেই আক্রমণ থেকে আনন্দনগরের সুকল, শিশুসদন শিশুদের বাঁচাতে ও আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে জল্লাদ বাহিনীর হাতে আনন্দমার্গের পাঁচজন সর্বতাগী সন্ন্যাসী নিহত হন৷ এঁরা হলেন আচার্য অভেদানন্দ অবধূত, সচ্চিদানন্দ অবধূত, প্রভাস কুমার, ভরত কুমার, অবোধ কুমার---প্রথম দু’জন ছিলেন সন্ন্যাসী ও অপর তিনজন ব্রহ্মচারী৷ কমিউনিষ্ট গুণ্ডারা আনন্দমার্গ আশ্রমটিকে পুরোপুরি ধবংস করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু তা সম্ভব হয়নি৷ কমিউনিষ্টদের হিংস্র আক্রমণকে প্রতিরোধ করে আবার আনন্দমার্গের সমস্ত সেবামূলক ইয়ূনিটগুলিকে গড়ে তোলা হয়৷ কিন্তু সিপিআই, সিপিএম আজ নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাওয়ার পথে৷
ন্যায়-ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘আত্মোৎসর্গকারী’ দধীচি ঋষিযাঁরা ন্যায়ধর্ম ও মানবতার জন্যে আত্মোৎসর্গ করেন---তাঁরা সবাই দধীচির মহিমায় মহিমান্বিত৷ এই কারণে ৫ই মার্চ এই মহান আত্মোৎসর্গের দিনটিকে সারা বিশ্বের আনন্দমার্গের অনুগামীরা ‘দধীচি দিবস’ হিসাবে পালন করেন৷ বিশ্ব মানবতার সেবার যজ্ঞে যাঁরা আত্মোৎসর্গ করেছেন তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে এই দিনটিতে সারা দিন উপবাসে থেকে সন্ধ্যাবেলা মিলিত সাধনার পর বিশ্ব মানবতার প্রতিষ্ঠার জন্যে ও যারা ন্যায়নীতি মানবতার বিরোধী তাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের শপথ নেন৷