পুরুলিয়া জেলার আনন্দনগরে, যেখানে ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ স্থানীয় কায়েমী স্বার্থবাদী পুঁজিবাদী গোষ্ঠী ও জড়বাদী গোষ্ঠী সংঘটিত হয়ে আনন্দমার্গের এই আশ্রমের ওপর বর্বরভাবে আক্রমণ ক’রে ৫ জন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল৷ কম্যুনিষ্ট ঘাতকদের হাতে সেদিন আনন্দনগরে নিহত হয়েছিলেন আচার্য অভেদানন্দ অবধূত, আচার্য সচ্চিদানন্দ অবধূত, আচার্য অবোধ কুমার ব্রহ্মচারী, আচার্য প্রবোধ কুমার ব্রহ্মচারী, আচার্য ভরত কুমার ব্রহ্মচারী৷
তবে ঘাতকদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে৷ সেদিন ওই ঘাতকদের উদ্দেশ্য ছিল আনন্দমার্গকে শেষ করে দেওয়া কিন্তু নিখিলের অমোঘ নিয়মে সেই কম্যুনিষ্টরা আজ বিনাশের পথে৷ কিন্তু আনন্দমার্গ সব বাধার প্রাচীর ভেঙে দুর্র্বর গতিতে এগিয়ে চলেছে৷ আইনের বিচারে সেদিনের ঘাতকরাও সাজা পেয়েছে৷
পুরাণের কাহিনী অনুসারে অসুর নিধনে নিজের প্রাণ ত্যাগ করে অস্থি দান করেছিলেন দধীচি মুনি৷ তাঁর অস্থি দিয়ে তৈরী বজ্রেই সেদিন পাপশক্তির বিনাশ হয়েছিল৷ সেদিন আনন্দনগরেও পাপশক্তির বিনাসে পাঁচজন সন্ন্যাসী প্রাণত্যাগ করেন৷ তাঁদের স্মরণে প্রতিবছর আনন্দমার্গীরা ওইদিন দধীচি দিবস হিসেবে পালন করেন ও পাপশক্তি বিনাশের শপথ নেন৷ সেই আনন্দনগরে গত ৫ই মার্চ দধীচি দিবস পালিত হ’ল৷
এই উপলক্ষ্যে আনন্দমার্গের সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী কর্মী ও অনুগামীরা সারাদিন উপবাসে থাকেন৷ এরপর সবাই আনন্দনগরের ফার্ম হাউসে মিলিত হয়ে অখণ্ড কীর্ত্তনে যোগ দেন৷ বিকেলে সেখান থেকে কীর্ত্তন করতে করতে সবাই ‘দধীচি হিলে’--- যেখানে আনন্দমার্গের ৫জন সন্ন্যাসীকে হত্যা করা হয়েছিল --- সেখানে পৌঁছে পঞ্চ দধীচির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ও দধীচি-বেদীতে মাল্যদান করেন৷ সেখানেও কিছুক্ষণ কীর্ত্তন করার পর সবাই মিলিত সাধনা করেন৷ অতঃপর আচার্য মোহনানন্দ অবধূতকে অনুসরণ করে সবাই শপথ গ্রহণ করেন, ‘‘যে পাপশক্তির কারণে আমাদের পাঁচ ভাইয়ের হত্যা সংঘটিত হয়েছে, যতক্ষণ সেই পাপশক্তির বিনাশ না করছি, ততক্ষণ আমরা আরাম করব না, আরাম করবো না, আরাম করবো না৷’’
ওই দিন কলকাতা সহ গোটা বিশ্বেই আনন্দমার্গীরা দধীচি দিবস পালন করেন৷ কলিকাতা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৩ ঘন্টা অখণ্ড ‘‘বাবা নাম কেবলম্ কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনার পর আচার্য সুতীর্থানন্দ অবধূত ওই দিনের বিবরণ দিয়ে বক্তব্য রাখেন ৷ আচার্য সুতীর্থানন্দ অবধূত ওই সময় আনন্দনগরে ছাত্র ছিলেন ও কম্যুনিষ্ট ঘাতকদের প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ এর সকলে উপবাস ভঙ্গ করেন৷ নোতুন পৃথিবী কার্যালয়ে দধীচি দিবস এই দিন নোতুন পৃথিবীর কার্যালয়েও দধীচি দিবস পালিত হয়৷ নোতুন পৃথিবীর সকল কর্মী ও আবাসিকরা সারা দিন অনশনে থেকে সন্ধ্যায় কীর্ত্তন ও মিলিত ঈশ্বর প্রণিধানের পর আচার্য অভিব্রতানন্দ অবধূত ওই দিনের বিষয়ে ও দধীচি দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখেন৷ এরপর সকলে মিলিতভাবে অনশন ভঙ্গ করে৷