যখন কেউ কোন কাজ করে তাকে কিছু বিধি নিয়ম মেনে চলতে হয়। যাঁর এই নিয়ম কানুন তৈরি করার অধিকার আছে তাঁকে বলা হয় নিয়ন্ত্রক সত্তা।আমাদের এই মহাবিশ্বে অনেক কর্ম সংঘটিত হচ্ছে, অনেক রকমের অভিব্যক্তি নিরন্তর প্রকাশিত হয়ে চলেছে।বিভিন্ন তরঙ্গধারা নানা উৎস থেকে উৎসারিত হয়ে চলেছে। তাই এসবের জন্য একজন বেশ শক্তপোক্ত নিয়ন্ত্রক সত্তা থাকতেই হবে। কিন্তু সেই সত্তা একটা যন্ত্রের মত কাজ করে চলবেন না। তিনি অবশ্যই হবেন ভালোবাসার মূর্ত্ত প্রতিরূপ।
জীবনের নানা ক্ষেত্রে অনেক রকমের নিয়ন্ত্রক সত্তা আছে। বিভিন্ন অভিব্যক্তির বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক তত্ত্বও থাকে। কিন্তু সবকিছুর উপরে আছেন পরমনিয়ন্তাকর্তা। সংস্কৃতে নিয়ন্তাকর্তাকে বলা হয় ঈশ্বর। পরমনিয়ন্তাকর্তা হলেন মহেশ্বর। এখন অন্যান্য নিয়ন্তা কর্তাদের দ্বারা প্রস্তুত বিধি নিয়ম নির্ভুল নাও হতে পারে, কিন্তু পরম নিয়ন্তাকর্তার ক্ষেত্রে সেগুলি নিখুঁত হতেই হবে, তা না হলে বিশ্বের ভারসাম্য বা সাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হবে।
তাই মানুষ হিসেবে, শৃংখলাবদ্ধ জীব হিসেবে, আমাদের প্রথম কাজ হলো সেই মহেশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী চলা। এটা সাধকের আবশ্যিক কর্তব্য।কিন্তু তাকে সর্বাবস্থায় মান্য করে চলার সময় এটা মনে রাখতে হবে যে তিনি কোন একজন বস নন, তিনি স্নেহময় পিতা। সম্পর্কটা এখানে ব্যষ্টি গত, অফিশিয়াল বা প্রথাসিদ্ধ সম্পর্ক নয়।
তুমি যদি এটা বোঝো যে কোন এক নৈর্ব্যষ্টিক সত্তা এই বিশ্বের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন কিন্তু তোমার সঙ্গে তার কোনো রকমের সম্পর্ক নেই, তাহলে শৃঙ্খলাবোধ বা তদসংক্রান্ত মানসিকতাই তৈরি হবে না। কেননা সে ক্ষেত্রে আদেশ প্রতিপালিত হবে এক ধরনের ভিত্ম্মন্যতা বোধ থেকে। কিন্তু আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে কোন ভীতমন্যতা, লজ্জা-শরম এইসব কমপ্লেক্স থাকতে পারে না।তাই যেসব শাস্ত্র বলছে--- তুমি যদি তাকে মান্য না করো তাহলে তুমি নরকে যাবে--- সেই সব শাস্ত্র মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রু।এই ধরনের শাস্ত্রসমূহ মানুষের মনে ভীতমন্যতা তৈরি করে দিয়ে সমাজে শুধু ভেদ-বিভেদই সৃষ্টি করে চলবে।
এই মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য। একে বিভাজিত করা যায় না।আমরা কোনভাবেই কোনরকম বিভেদকামী তত্ত্ব কে প্রশ্রয় দেবো না।
মানুষ আধ্যাত্মিক জীবনে যা করে তা পরপুরুষকে অন্তর থেকে ভালবাসে বলেই করে। এই ভালোবাসাই হলো মূল শব্দ! সেটাই আদি বিন্দু তথা অন্তিম বিন্দু। মনে রাখবে যে মানুষের মনে ভীতমন্যতা তৈরি করার কোন নৈতিক অধিকার কোন শাস্ত্রেরই নেই।
ফিয়েস, সুইজারল্যান্ড, ৯ই মে,১৯৭৯