অমর ১৯শে মে

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ২১শে ফেব্রুয়ারী এক গৌরবোজ্জ্বল বেদনাদায়ক ইতিহাস৷ মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগ রক্তদান ব্যর্থ হয়নি৷ মুখের ভাষা-মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে জন্ম নিল স্বাধীন বাংলাদেশ৷ শুধু ভাষার দাবীতে রাষ্ট্রঘটনই নয়, দ্বিজাতিতত্ত্বের দোহাই দিয়ে যে উর্দু ও হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা দেশ ভাগ করেছিল তাদের মুখে ঝামা ঘষে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীরা বুঝিয়ে দিয়েছিল তথাকথিত ধর্মমতের গোঁড়ামি অপেক্ষা বাঙালীর কাছে তার ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির মর্যাদা অনেক বেশী৷ সেই মর্যাদা রক্ষা করতেই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম৷ ২১শে ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রসংঘের সৌজন্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস৷

পিছিয়ে থাকেনি এপারও৷ ১৯৬১ সালের ১৯শে মে বরাকবঙ্গের শিলচর শহরে রচিত হয় মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আর এক আত্মত্যাগের ইতিহাস৷ স্বাধীন দেশের স্বাধীন সরকারের সেনার বুলেটে রক্তাক্ত হলো স্বাধীন দেশের নাগরিক, লুটিয়ে পড়ে ১১টি তরুণ তাজা প্রাণ৷ কি অদ্ভুদ মিল শাসকের চরিত্রে! ওপারে উর্দু সাম্রাজ্যবাদী শাসক, এপারে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী শাসক বাংলাভাষার প্রতি আতঙ্ক উভয়ের৷ কারণ বাংলা শুধু মুখের ভাষা নয়--- বাংলা যে শোষণ, দমন পীড়নের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার ভাষা, প্রতিবাদের ভাষা৷ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বাংলা ভাষায় রচিত নীলদর্পন, পথের দাবী, আনন্দমঠ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল৷

স্বাধীনতা লাভের জন্য যারা সবথেকে বেশি রক্ত দিয়েছিল, ত্যাগ স্বীকার করেছিল তারাই হল স্বাধীন দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক৷ কথায় আছে ‘চোরা না শোণে ধর্মের কাহিনী’৷ শাসক বদলায় কিন্তু শাসকের চরিত্র বদলায় না, সে শাসক স্বদেশী হোক আর বিদেশী হোক৷ ২১শে ফেব্রুয়ারী সার্থক হলেও ১৯শে মে’র আত্মত্যাগের ঋণ আজও শোধ হয়নি৷ স্বাধীন ভারতে বাংলাভাষা আজও অবদমিত পশ্চিম বাঙলাতেও বাংলাকে অপাংক্তেয় করে রাখা হচ্ছে স্বদেশী শাসকের প্ররোচনায়৷ ১৯শে মে ১১টি ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধায় স্মরণে মুখর হবে বরাকবঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গ---শিলচর থেকে কলিকাতা, সেই মুখরতার মাঝে আর একটা শপথ--- আর একটা ২১শে ফেব্রুয়ারী--- এপারেও....৷