ইতিহাসে আমরা দেখেছি যখন কোন মহাপুরুষ-- ধর্মপ্রবর্তক, সমাজ- সংস্কারক, বিজ্ঞানী জ্ঞানের নূতন আলোয় জগতকে উদ্ভাসিত করতে চেয়েছেন তখনই প্রাচীনপন্থী, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, প্রতিক্রিয়াশীল লোকদের দ্বারা অপমানিত হয়েছেন৷ অনুরূপভাবে আনন্দমার্গের সর্বাত্মক জীবনাদর্শ যে নানাদিক থেকে বাধাপ্রাপ্ত হবে এটাই স্বাভাবিক৷ পৃথিবীব্যাপী সংস্থা, মরণপণ করা শিক্ষিত শত-সহস্র ত্যাগব্রতী আনন্দমার্গের কর্মীগণ কায়েমী, স্বার্থান্বেষী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের কাছে বিপজ্জনক৷ তাই পাপচক্রীরা, মানবতার শত্রুরা মার্গের কর্মীদের প্রতি অত্যাচার, আঘাত ও হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না৷
আচার্য অসীমানন্দ অবধূত,ছিলেন আনন্দমার্গের ইতিহাসে এক উজ্বল জ্যোতিষ্ক৷ ইনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী৷ যে সবুজায়ন আজ আনন্দনগরের মুখ্য প্রাকৃতিক ভূমিকা, তার মূলে এই নিষ্ঠাবান ত্যাগী কর্মী ছিলেন অগ্রণী৷ কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতকস্তরে প্রথম স্থান অধিকারের জন্য স্বর্ণপদক পান৷ পড়াশোনা শেষ করার পর সব লৌকিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে সংঘের সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন৷
গুরুদেবের চরণে জীবনকে সমর্পন করে তাঁর আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করার ব্রত গ্রহণের পর গুরুদেব তাঁকে আনন্দনগরের কৃষি সংক্রান্ত প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব অর্পণ করেন৷ আশির দশকে মধ্য আনন্দনগরকে কেন্দ্র করে আনন্দনগরের প্রত্যন্তের গ্রামগুলোতে আনন্দমার্গের সেবামূলক গ্রামোন্নয়ন প্রকল্প ব্যাপকভাবে শুরু হয়৷ এছাড়াও আনন্দমূর্ত্তিজীর নির্দেশনায় আনন্দমার্গের রুক্ষ পাথুরে জমিতে কৃষিবিজ্ঞানী অসীমানন্দজীর নেতৃত্বে শুরু হয় পরিকল্পিত বৃক্ষরোপন বনসর্জন ইত্যাদি৷ লক্ষ্য আনন্দনগরের সবুজায়ন ও স্থানীয় জনসাধারণের স্বনির্ভরতা যা তৎকালীন শাসকদল কম্যুনিষ্ট পার্টির শিরপীড়ার কারণ হয়৷ এছাড়া আনন্দমার্গের আধ্যাত্মিক মানবতাবাদ তথা নব্যমানবতাবাদ ও প্রাউটের প্রচারে তারা ত্রুটিপূর্ণ ও প্রমাদগ্রস্ত মাকর্সবাদের অবলুপ্তির সম্ভাব্য আশংকায় ভীত হয়ে পড়ে৷ নাগরুপী কম্যুনিষ্টদের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে শুধু আনন্দনগরের বাতাসই জর্জরিত হয়নি, তারা অসীমনন্দজীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল৷ সাধারণ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের নেশার দ্রব্য ও অর্থের লোভ দেখিয়ে তাদের মনকে বিষাক্ত করে ঘৃণ্য পাপ কাজে লিপ্ত করাতো৷
১৯৯০ সালের ২রা এপ্রিল স্থানীয় কয়েকজন মার্গী ভাইয়ের সাথে পরিদর্শনে গেছিলেন ডিমডিহা জলবন্ধ প্রকল্প ও ডিমডিহা কৃষি ফার্মে অগ্রগতি দেখতে৷ ফিরে আসার পথে ছটকা গ্রামে পথ আটকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ক্লাব ঘরে ঢুকিয়ে অসীমানন্দ অবধূত সহ স্থানীয় কোষাঙ্গি গ্রামের অর্জুন সিং ও দারা সিং, চিৎমু গ্রামের রাধু গরাঞ ও উত্তর প্রদেশের দীনবন্ধু সিং সহ চারজন মার্গীকে তদানীন্তন শাসকদল মদতপুষ্ট কমিউনিষ্ট গুণ্ডারা নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে৷
আনন্দনগরে অসীমানন্দজীকে হত্যার পর তাঁর কাজের পরিকল্পনা ও প্রগতি আরও দ্রুত বেগে বাস্তবায়িত হতে থাকে৷ তাঁর স্মৃতি রক্ষায় ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবৎসর নভেম্বর মাসে ‘আচার্য অসীমানন্দ অবধূত’’ স্মৃতি নক্আউট ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ ২রা এপ্রিল ডিমডিহা আনন্দমার্গ জাগৃতিতে অখণ্ড ‘ৰাৰা নাম কেবলম্’ নাম সংকীর্ত্তন, মিলিত ঈশ্বর প্রণিধান, বর্ণাঘ্যদান, স্বাধ্যায়, স্মৃতিচারণ ও নারায়ণসেবার আয়োজনের মাধ্যমে তাঁর আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করা হয়৷