আনন্দমার্গের প্রবক্তা ও প্রবর্তক শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ৯৭তম জন্মজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষ্যে ২৬শে মে থেকে ২৮শে মে পর্যন্ত পুরুলিয়ার আনন্দনগরে আনন্দমার্গের ধর্মমহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হ’ল৷ মার্গগুরুদেবের প্রতিনিধি রূপে ধর্মমহা–সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংঘের পুরোধা প্রমুখ আচার্য কিংশুকরঞ্জন সরকার৷ এই ধর্মমহাসম্মেলনে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে ও অসম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আনন্দমার্গীরা যোগ দিয়েছিলেন৷ বহির্ভারতের বেশ কিছু দেশ থেকেও আনন্দমার্গের অনুগামীরা এই ধর্মমহাসম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন৷ বর্তমানে সমাজের সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগত জীবনের কী আদর্শ হওয়া উচিত সে সম্পর্কে তিনি তাঁর তিন দিনের প্রবচনে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন৷
তাঁর বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার হল ঃ কিছু না থেকে কিছু আসতে পারেনা (something can not come from nothing)পরম চৈতন্য সত্তা---যাঁকে পরমপুরুষ বলা হয়---তাঁর থেকেই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুর সৃষ্টি হয়েছে। সেই পরম চৈতন্য সত্তার ওপর প্রকৃতির সত্ত্ব, রজ, ও তমো গুণের প্রভাবে প্রথম সৃষ্ট হয়েছে ভূমামন, এরপর অধিকতর তমোগুণের প্রভাবে ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে পঞ্চভূতের অর্থাৎ ব্যোম্, মরুৎ, তেজ, অপ ও ক্ষিতিতত্ত্বের অর্থাৎ এই বস্তু জগতের এই পঞ্চভূতের ওপর প্রকৃতির ক্রমবর্ধমান চাপের ফলে বস্তুর অভ্যন্তরে অন্তর্মুখী ও বহিমুখী শক্তি-সংঘর্ষ থেকে সৃষ্ট হয়েছে অণু মন ও ক্ষুদ্র মন। এইভাবেই সৃষ্টি হয়েছে এককোষী জীবের, এককোষী জীব থেকে ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে উন্নত পশুপক্ষী, বানরজাতীয় প্রাণী ও সবশেষে মানুষের সৃষ্টি।
পরম চৈতন্য সত্তা থেকে অর্থাৎ পরম পুরুষ থেকে সৃষ্টির যে ধারায় সুক্ষ্ম চৈতন্য থেকে স্থূল জড়াভিমুখে এগিয়ে বস্তু জগতের সৃষ্টি হয়েছে একে বলা হয় সঞ্চরধারা এরপর অণুমন থেকে বিবর্তনের পথে মানুষ পর্যন্ত যে বিকাশ ও মানুষের যে অগ্রগতি তা হল সৃষ্টির প্রতিসঞ্চর ধারা।
মানুষকে এই প্রতিসঞ্চর ধারার পথ ধরে সৃষ্টির উৎসে পৌঁছতে হবে--- যে পরমপুুরুষ আমাদের আদি উৎস আবার সেখানেই ফিরে যেতে হবে।
সাধনার দ্বারা ও সৎকর্মের দ্বারা মানুষের অগ্রগতি হয় তাই মানুষের মনের ধর্ম হল মন যেমন চিন্তা করে তেমনি হয় তাই জপ-ধ্যানের মাধ্যমে পরমপুরুষের চিন্তা করতে করতে একদিন সাধকের মন পরম পুরুষের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় এই হচ্ছে মোক্ষলাভ।
সাধনার পথে এগুতে সাধককে সাহায্য করে সৎকাজ কীর্ত্তনও সাধনা সহায়ক।
তাই প্রতিটি আনন্দমার্গীকে একদিকে যেমন খুব করে সৎ কাজ করতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে কীর্ত্তন ও সাধনাও করতে হবে।