গত ২১শে জুন, ২৩ আনন্দনগরে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস আনন্দমার্গ বয়েজ হাইসুকল ও আনন্দমার্গ গার্লস হাইসুকল, উমানিবাস,আনন্দমার্গ প্রাইমারী সুকল, পগরোতে পালন করা হয়৷ আনন্দমার্গের প্রবক্তা ও প্রবর্তক শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ‘আসন’ ও ‘যোগ’ সম্বন্ধে বলেছেন---
আসন--- শরীর ও মনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ৷ মনের অভিপ্রকাশ বৃত্তির মাধ্যমে হয় আর বৃত্তির প্রাবল্য শরীরের গ্রন্থির উপর নির্ভর করে৷ শরীরে বহু গ্রন্থি রয়েছে আর প্রত্যেকটি গ্রন্থি থেকে বিশেষ বিশেষ রস ক্ষরিত হয় ৷ রসক্ষরণে কোন গোলযোগ থাকলে কিংবা গ্রন্থির স্থানে কোন ত্রুটি থাকলে বিশেষ বিশেষ বৃত্তির প্রাবল্য দেখা যায়৷ এই কারণেই দেখা যায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই নীতিজ্ঞান মেনে চলতে পারে না, সাধনা করা উচিত বোঝে কিন্তু সাধনায় মন একাগ্র করতে পারে না, কোন-না কোন বহির্মুখী বৃত্তির তাড়নায় তার মন ছুটে চলে৷ বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তার গ্রন্থির ত্রুটি দূর করতে হবে৷ আসন বহুল পরিমাণে এই কাজে সাধককে সাহায্য করে, তাই আসন সাধনার একটা বড় অঙ্গ৷ আসন একপ্রকার ব্যায়াম৷ এর নিয়মিত অভ্যাসের দ্বারা শরীর সুস্থ ও কর্মঠ থাকে আর বহু রোগ নিরাময় হয়৷ যে অবস্থায় সুখে থাকা যায় তার নাম আসন---‘স্থিরসুখমাসনম্’৷
‘যোগ’ সংসৃকত মূল ধাতু ‘যুনজ’এর সঙ্গে ‘ঘঞ্’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যোগ শব্দ নিষ্পন্ন হয়৷ অথবা ‘যুজ’-এর সঙ্গে ‘ঘঞ’প্রত্যয় যুক্ত হয়েও যোগ শব্দ পাওয়া যায়৷ *যদি যুজ্ ঘঞ্ যোগ হয়, সেক্ষেত্রে যোগ সেক্ষেত্রে যোগ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় যোগ করা, যেমন +২ সংখ্যা মিলে ৪ সংখ্যাটি পাওয়া গেল৷ *কিন্তু যদি যুনজ ধাতুর সঙ্গে ‘ঘঞ্’ যুক্ত হয় তখন ‘যোগ’ শব্দটির অর্থ হয়ে দাঁড়ায় সংযুক্ত করা বা হওয়া, যেমন চিনি আর জলের সংযোগে যে বস্তুটি পাওয়া গেল তা যখন চিনি আর জল একত্রে মিলিয়ে দেওয়া হল তখন তার মধ্যে চিনির পৃথক অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায় না৷ কিন্তু প্রথমটি ক্ষেত্রে ২ ও আর একটি ২---এদের যোগ করা হলেও প্রথম ২ ও দ্বিতীয় ২--- এদের পৃথকত্ব থেকেই যায়৷ দুটি আম ও আরও দুটি আম যোগ করে চারটি আম পেলুম৷ কিন্তু পৃথকভাবে চারটি আমের অস্তিত্ব থেকেই যাচ্ছে৷ যোগের এই দুটি ছাড়াও অন্যান্য সংজ্ঞাও আছে৷ মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের ব্যাখ্যা করেছেন, যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধ্* অর্থাৎ মনের সমস্ত বৃত্তিকে সম্পূর্ণভাবে নিরুদ্ধ করে দেওয়াই হচ্ছে যোগ৷ মানুষের মনে আছে পঞ্চাশটি বৃত্তি৷ যদি কোন বিশেষ উপায়ে এই বৃত্তিগুলিকে নিরুদ্ধ করা যায়, তাদের অভিব্যক্তিকে বা ক্রিয়াশীলতাকে যদি আটকে দেওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে মন কাজ করা বন্ধ করে দেবে৷ মনের এই নিরুদ্ধাবস্থাই হচ্ছে যোগ৷ কিন্তু আমরা ওপরে যোগের যে ব্যাখ্যা পেয়েছি তা হচ্ছে সংযোগ৷ বৃত্তি-নিরোধ বললে কোন অর্থেই বৃত্তিগুলির সংযুক্তিকরণ হতে পারে না৷ এই ব্যাখ্যায় কার সঙ্গে কার সংযুক্তিকরণ হচ্ছে তা স্পষ্ট হয় না৷ তাই এই সংজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়৷ * দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে--- ‘সর্বচিন্তা পরিত্যাগ নিশ্চিন্তো যোগ উচ্চতে৷* এর অর্থ যখন মন সমস্ত রকমের চিন্তা থেকে মুক্ত থাকে সেই অবস্থাই হচ্ছে যোগ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে মন চিন্তা থেকে মুক্ত হলেও তার ফলে মহত্তর কোন সংযুক্তিকরণ হয় না৷ যখন মানুষ গভীর নিদ্রায় থাকে, কোন স্বপ্ণও সে দেখছে না, মন চিন্তামুক্ত অবস্থায় আছে বা অচেতন অবস্থায় আছে, সেই অবস্থাটাকে কী যোগ বলব? না, যোগ বলব না৷ * ভগবান সদাশিব প্রদত্ত আর একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে --- ব্যষ্টি-আত্মা অর্থাৎ জীবাত্মা যখন ভূমাসত্তা তথা পরমাত্মার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে, সেটাই হচ্ছে যথার্থ যোগ৷ এটাই হচ্ছে যোগের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞান-সম্মত ব্যাখ্যা৷