বিশ্বব্যাপী জলসংকটের ভয়াবহ পরিণতি উপলব্ধি করে, গুরুদেব শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী বহু পূর্বেই বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়ো -জনীয়তা নিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন ছোট ছোট বাঁধ, পুকুর ও সায়র খননের মাধ্যমে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ও তা কার্যকরভাবে ব্যবহারের৷ জলসংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে, আশির দশকের গোড়া থেকেই তিনি বনসৃজন ও জল সংরক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন৷ আনন্দনগরের প্রতিটি প্রকল্পের সঙ্গে একটি সায়র সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি৷ সায়রের জল ধারণ ক্ষমতার (গ্যালন) ওপর ভিত্তি করে সেখানে নানা ধরনের গাছ ও জলজ উদ্ভিদ রোপণের নির্দেশ দেন৷ যেমন, সায়রের জলে লোমা Loma) অথবা ওয়াপা Wapa) প্রজাতির শালুকের রঙ-বেরঙের ফুল সঙ্গে পানিফল আবশ্যিক হবে, আর তার পাশাপাশি সায়রের পাড়ে খেজুর, সুপারি, ল্যাভেন্ডার, ঔষধি লতা, তাল, নারকেল, যুঁই-বেলি ফুল, গোলমরিচ ইত্যাদি উদ্ভিদের উপস্থিতি থাকবে৷
আনন্দনগরের বাঁশগড় আনন্দমার্গ ফার্ম হাউসে গুরুদেবের নির্দেশ অনুযায়ী, একটি সায়রের সংস্কার কার্য সম্পন্ন করা হয়, যা গ্রীষ্মকালে দৃষ্টান্তমূলকভাবে সম্পন্ন হয়েছিল৷ বর্ষার জল সংরক্ষণ করে সায়রটির বর্তমান দৃশ্য নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়৷
আনন্দনগরে মাল্টা-মোসাম্বি চাষের সফল উদ্যোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ রাঢ় বাংলার পাথুরে, রুক্ষ পুরুলিয়ার মাটিতে উর্বরতার অভাব সুস্পষ্ট৷ এখানকার জমি জল সংরক্ষণে অক্ষম, ফলে শুধুমাত্র নীচু জমিতে বছরে একবার চাষ হয়, তাও আবার বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল৷ এই কঠিন বাস্তবতায় বসবাসরত স্থানীয় বেশীরভাগ মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার৷ এমন প্রতিকূল পরিবেশেও এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগের সাক্ষী হল আনন্দনগর৷
আনন্দমার্গ ফার্ম বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় ও নদীয়া জেলার চাকদার প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শ্রী শক্তিপদ সরকার ও তাঁর সহধর্মিনী শ্রীমতী গোপা সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ও নিরলস শারীরিক পরিশ্রমের ফলে ২০২১ সালের সেপ্ঢেম্বর মাসে আনন্দনগরের বাঁশগড় মৌজার তিন একর জমিতে রোপণ করা হয় ১২০০ মাল্টা-মোসাম্বির চারা গাছ৷ তিন বছরের নিরন্তর পরিচর্যার পর প্রকল্পটি সাফল্যের মুখ দেখেছে৷
উৎপাদিত ফলের গুণগত মান এতটাই উৎকৃষ্ট ও স্বাদে খুবই মিষ্টি যে, বাইরে থেকে বহু মানুষ ৬০ টাকা কেজি দরে বাগান থেকে সরাসরি ফল সংগ্রহ করছেন৷ তাঁদের এই উদ্যোগকে সর্বত্র সাধুবাদ জানানো হচ্ছে, তাই এটি হয়ে উঠেছে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত৷