পৃথিবী গ্রহের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় জল হল এক অত্যাবশ্যকীয় তত্ত্ব৷ আজ এই জল ছাড়া মানুষ, জীবজন্তু, গাছপালার জীবনধারণ আর সমগ্র পৃথিবী গ্রহের অস্তিত্বের কথা চিন্তাই করা যায় না৷ বৃষ্টিপাত যেখানে হচ্ছে, ঠিক সেই জায়গায় জলকে সংগ্রহ করে রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ পুকুর, খাল ছোট বাঁধ, জলাধার, হ্রদ তৈরী করে বৃষ্টির জলকে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে হবে৷ পরিবেশ ধবংসের আর একটি কারণ হচ্ছে ভূ-নিম্নস্থ সম্পদের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার৷
খরা হওয়ার প্রধান তিনটি কারণ হল, ব্যাপকভাবে গাছপালা ও বন ধবংস করা৷
সমাধান---বন উচ্ছেদ খরার জন্ম দেয় কেননা এর ফলে গাছপালা মাটিকে সরস রাখতে পারে না. সাধারণ অবস্থা গাছের ছোট ছোট আঁশযুক্ত শিকর মাটি থেকে প্রচুর জল শুষে নেয় ও তা ধরে রাখে৷ যখনই জলস্তর নীচে নেমে যায় তখন গাছের শিকর ধীরে ধীরে মাটিতে জল ছাড়তে থাকে৷
তাই গাছপালা দিয়ে ঘেরা পুকুরের জল কখনই সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাবে না৷ গাছের পত্ররাজী জলের বাষ্পীভবনের মাত্রাকেও কমিয়ে রাখে৷ এছাড়া গাছের পাতায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে যা মেঘকে আকর্ষণ করে৷ এই ভাবে গাছ বৃষ্টিপাত বাড়াতে সাহায্য করে৷
নিবিড় বনসর্জন আর বিস্তৃতভাবে বনসর্জন ঃ দুইভাবে এই কাজ করতে হবে৷ সবচেয়ে ভাল উপায় হ’ল শীঘ্র বাড়ে ও ধীরে ধীরে বাড়ে এই দু’ধরণের গাছই একসঙ্গে লাগানো৷ দুবছরের মধ্যে গহন সবুজ বনানী তৈরী করে দেয়৷ যেসব গাছ বর্ধিত হতে বেশী সময় নেয় কিন্তু তারাও গহন বনানী তৈরী করে৷ অবিলম্বে নিবিড়ভাবে ও বিস্তৃতভাবে, দুইভাবেই বন রচনায় কাজ করতে হবে৷ পুকুর-বাঁধ-খাল-সায়র বা জলাশয়ের পাড়ে বন রচনা করা উচিত৷ এই পদ্ধতিতে কোনো অঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য দ্রুত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে৷
দ্বিতীয় কারণ ঃ সমুদ্র ও মহাসাগরের উপর নিম্নচাপ তৈরী হওয়ার প্রাকৃতিক নিয়ম৷ সমাধান ঃ খরার দ্বিতীয় ও তৃতীয় কারণ বর্তমানে মানুষের নিয়ন্ত্রনের বাইরে৷ ভবিষ্যতে আবহ বিজ্ঞান সামুদ্রিক বিজ্ঞানের উন্নতি হলে মানুষ আংশিকভাবে দ্বিতীয় কারণকে প্রভাবিত করতে পারবে বা তা থেকে নিস্তার পেতে পারবে৷
তৃতীয় কারণ ঃ সূর্য-সহ অন্যান্য জ্যোতিষ্ক, যেমন---ধুমকেতু-নেবুলা বা গ্যালাক্সির কৌণিক গতির হঠাৎ পরিবর্তন৷
এক্ষেত্রে সমাধান খরার তৃতীয় কারণ একমাত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন পরম চৈতন্যসত্তা৷ অবশ্য মানুষ যদি পজিটিভ মাইক্রোবাইটার (ধনাত্মক অনুজীবতের) পথ আর পরম চৈতন্যসত্তার কৃপা পায়, তাহলে মানুষও তৃতীয় কারণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে যদি তারা যম ও নিয়মে প্রতিষ্ঠিত হয়৷
আনন্দনগরে প্রকল্প রূপায়ন ঃআনন্দনগরের বন্ধ্যা-অনুর্বর-নুড়িপাথর সমৃদ্ধ ট্যাঁড় জমিতে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী তথা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের নির্দেশে ও প্রত্যক্ষ পরিচালনায় বিগত রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে ১৯৮৩ সাল থেকে সীমিত ক্ষমতার মধ্যে বহুমুখী সেবা প্রকল্প ছাড়াও ১২৫ হেক্টর বা তিনশত এককের অধিক জমিতে নিবিড় বনসর্জন,রকমারি ফল-ফুলের বাগান, ছোট মাঝারি মোট ৮টি জলবন্ধ (নদী বাঁধ), সায়র-বাঁধ সৃষ্টি করে সবুজায়ন ও জল সংরক্ষণ অর্থাৎ এক অনন্য পরিবেশ ও সংবর্দ্ধনের কাজ করেছে ও করে চলেছে৷ আনন্দনগরের ৮৫টি সেঞ্চয়ারী, শতাধিক কানন, সহস্রাধিক সায়র তৈরীর প্রকল্পের কাজ সকলের সহযোগিতায় এগিয়ে চলেছে৷ বর্তমানে আনন্দনগরে ২৪টি নতুন সেঞ্চুয়ারী তৈরী ও উন্নয়ন ছাড়াও একটি নতুন জল বন্ধ প্রকল্প তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ ( শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘‘প্রাউটের অর্থনীতি-আর্থিক মুক্তির নবদিগন্ত’’ থেকে অবলম্বনে সম্পাদিত)