আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাঙালী মহিলা সমাজের মিছিল  ও স্মারকলিপি  প্রদান

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

শিলিগুড়ি ঃ গত ৮ই মার্চ বাঙালী মহিলা সমাজের  পক্ষ থেকে শিলিগুড়িতে  বিভিন্ন কর্মসূচীর  মাধ্যমে  আন্তর্জাতিক  নারী  দিবস পালিত হয়৷  পণপ্রথা, নারী নির্র্যতন, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার প্রভৃতির প্রতিবাদে বাঙালী মহিলা সমাজের  পক্ষ থেকে এক  মিছিলের  আয়োজন  করা হয়৷ ওই মিছিলটি শহর পরিক্রমা করে মহকুমা শাসকের দফতরে এলে  মহকুমা শাসক মারফৎ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর  নিকট বিভিন্ন দাবীতে এক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়৷ এই স্মারকলিপি  প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন বাঙালী মহিলা সমাজের  জেলা সচিব জয়া সাহা, কার্যালয় সচিব কমলা সাহা, রাণু সাহা, শুক্লা সাহা ও আরও অনেকে৷ স্মারকলিপি প্রদানের পরে মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে  নারীদের  স্বাধিকার  রক্ষার  দাবীতে  একটি  পথসভাও করা হয়৷ পথসভায় বক্তব্য রাখেন জয়া সাহা, কমলা সাহা, শুক্লা সাহা প্রমুখ৷

বাঙালী মহিলা সমাজের প্রদত্ত স্মারকলিপির বয়ান

মহামান্য মুখ্যমন্ত্রী,

পশ্চিমবঙ্গ সরকার

মহাশয়া,

৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক  নারি দিবসে  উপলক্ষ্যে  বাঙালী সমাজের  পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি  আপনার  নজরে  আনতে চাই৷ আমাদের বিশ্বাস, এব্যাপারে  আাপনি যথোচিত ব্যবস্থা  নিয়ে  আমাদের বাধিতে করবেন৷

মানব ইতিহাসে আমরা দেখছি নারীরা  কেবল নারীত্বকে গৌরবান্বিত করেননি৷  সমস্ত মানব জাতিকে গৌরবান্বিত করেছে৷  দর্শনে , আধ্যাত্মিকতায়, সমাজ সংস্কারে , শিক্ষা ক্ষেত্রে , বিজ্ঞানে , প্রযুক্তিতে  কোথাও নারীরা পুরুষের  চেয়ে পিছিয়ে নেই৷ জটিল দার্শনিক তত্ত্বের  সমাধানই হোক বা সামাজিক শিক্ষানৈতিক  সংস্কারই হোক  সর্বক্ষেত্রেই  মেয়েরা পুরুষের মতোই  সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে৷

কিন্তু আজও পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীর স্থান প্রায় দাসীর মতোই৷ নারী-সমাজের  উপর শোষণ জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে৷ পণপ্রথা, বাল্য বিবাহ, নারীর সমস্যা, পতিতাদের পূনর্র্বসন সমস্যা, দেবদাসীদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবনের হাহাকার, নারীদের শ্লীলতাহানি সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষিত নারিদের  বেকারত্ব, কন্যাশিশুর ভ্রুণহত্যা, আজ সমাজের  জলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

প্রতিটি সমস্যার মূল উৎস  মানুষের ভোগবাদী মানসিকতা এই মানসিক ব্যাধিই মানুষের  মনকে  বিকৃত  করেছে৷ আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক মহান দার্শনিক  শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার কর্ত্তৃক  প্রবর্ত্তিত  প্রাউট  নির্দেশিত সমসমাজ  তত্ত্বই নারী  পুরুষের  মধ্যে সমত্ববোধ এনে দেবে৷ বৈয়ষ্টিক ও সামূহিক জীবনে সার্বিক বিকাশের পথ  ধরে বিশ্বৈকতাবাদে  পৌঁছনোর প্রয়াসই হলো মানবজীবনের যথার্থ প্রগতিশীলতা ঃ-

বাঙালী মহিলা সমাজের দাবী

১) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মমতের কুসংস্কার  রুখতে তথা সার্বিক শোষণমুক্ত নারী সমাজ গড়তে প্রাউটের প্রতিষ্ঠা চাই৷

২) প্রতিটি নারীর  অর্থনৈতিক  নিরাপত্তার ব্যবস্থা চাই৷

৩)      চলচ্চিত্রে, নাটকে, বিজ্ঞাপনে ,দূরদর্শনে অনাবৃত নারীদের প্রদর্শনকারীর কঠোর শাস্তি দিতে হবে৷

৪) সাংসৃকতিক অবক্ষয় রুখতে  বিকৃত ক্যাবারে, পপ, ডিসকো নৃত্য, চিত্ত চাঞ্চল্যকর সমস্তরকম সঙ্গীত, অশ্লীল পত্র- পত্রিকা নিষিদ্ধ করতে হবে৷

৫) শিক্ষার সর্র্বেচ্চস্তর  পর্যন্ত নারীশিক্ষাকে অবৈতনিক  ও বাধ্যতামূলক করতে হবে৷

৬) প্রাথমিক শিক্ষকতার কাজ শুধু মহিলা শিক্ষিকাদের  হাতে তুলে দিতে হবে৷

৭) ব্লকে ব্লকে  অক্ষম নারী, নিবাস , প্রসৃতি পরিচর্র্য কেন্দ্র খুলতে হবে৷

৮)      নারীদের আত্মরক্ষার্থে জুডো-ক্যারাটে প্রশিক্ষন শিবির সরকারী উদ্যোগে খুলতে হবে৷

৯) সমস্ত রাজ্যজুড়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি নারীদের উত্যক্ত করা, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার নিত্যকার ঘটনা৷ এই সব ক্ষেত্রে দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দিতে হবে৷

আশা করব বর্তমান সমাজে নারীর এই দুরবস্থার কথা ভেবে আপনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন৷

          ধন্যবাদান্তে-----

          আপনার বিশ্বস্ত

          জয়া সাহা

          সচিব ও জেলা               কমিটির সদস্যবৃন্দ

          দার্জিলিং জেলা ,

          বাঙালী মহিলা সমাজ