অন্যায়ভাবে অসম থেকে বিতাড়িত হওয়ার আতঙ্কেএকের পর এক বাঙালীদের আত্মহত্যা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

অসমে ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানকার বসবাসকারী বাঙালীদের নাম এন.আর.সি তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ও ডি-ভোটার (অর্থাৎ ডাউটফুল ভোটার) তকমা দিয়ে তাদের বিদেশী বলে চিহ্ণিত করে হয়রানি, অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে৷ এই চরম হয়রানি, অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে অনেক বাঙালী একে একে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন৷

গত ১৯শে নভেম্বর অসমের কোকরাঝাড় জেলার শ্রীরামপুরের প্রয়াত উপেন্দ্রবর্মনের ছেলে সুরেন্দ্র বর্মন (২২) প্রায় এক বছর ধরে ডি-ভোটার হিসেবে চিহ্ণিত হয়ে বিদেশী ট্রাইব্যুনালে হয়রানি হতে হতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন৷

শেষ পর্যন্ত গত ১৯শে নভেম্বর একটি গাছে তার মৃতদেহ ঝুলতে দেখা যায়৷ এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে৷ বলা বাহুল্য মৃত যুবকের মা-বাবার নাম এন-আর-সি’তে রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও সুরেন্দ্রকে ‘বিদেশী’ বলা হচ্ছে৷

এইভাবে ডি-বোটার ঘোষণার প্রতিবাদ গর্জে উঠেছে এখানকার বিটিসি বাঙালী যুব-ছাত্র ফেডারেশন৷ তারা মরদেহকে সামনে রেখে রাস্তা অবরোধ করেছে৷

এর আগের দিন, ১৮ই নভেম্বরও অসমে এমনি একটি মর্মান্তিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে৷ এই ঘটনাটি ঘটেছে অসমের মঙ্গদৈ জেলায়৷ এদিন নীরদ কুমার দাস (৭৪) নামে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যিনি অবসর নেওয়ার পর ওকালতি করতেন তাঁরও নাম এন.আর.সি’র তালিকা থেকে বাদ পড়েছে৷ তিনি  একজন আইনজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও ও অনেক ঘোরাঘুরি করেও ও এখানকার তিনি যে বৈধ বাসিন্দা--- তার নথিপত্র পেশ করেও বিফল মনোরথ হন৷ শেষ পর্যন্ত তিনিও বিদেশী হিসেবে চিহ্ণিত হওয়ার অপমানে তাঁর নিজের ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন৷ বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রেও তাঁর স্ত্রী, কন্যা ও অন্যান্যদের এন.আর.সিতে নাম উঠেছে অথচ তাঁর নাম ওঠেনি৷ তাঁর পেশ করা তথ্যগুলিকেও মান্যতা দেওয়া হয়নি৷

স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে, ইচ্ছাকৃতভাবেই বাঙালীদের বিদেশী হিসেবে চিহ্ণিত করে তাড়াবার ষড়যন্ত্র চলছে৷ এর আগেও এভাবে প্রায় ২০ জন বাঙালী একই কারণে আত্মহত্যা করেছেন৷ কয়েকদিন  গত ১লা নবেম্বর তিনসুকিয়া জেলার ধলা এলাকায় ৫ জন নির্দোষ বাঙালীকে অসমিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে৷

অসমে এইভাবে বাঙালী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সারা রাজ্যে বাঙালীদের মধ্যে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে৷