আর্থিক  অধোগতি  অব্যাহত :  অর্থনীতির  করুণ চিত্র দেশে ঘনিয়ে আসছে অর্থনৈতিক  দুর্যোগ

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

ঠুনকো দেশপ্রেম আর ধর্মীয় উন্মাদনা জাগিয়ে ভোটে জেতা যায়, কিন্তু অর্থনীতির হাল ফেরান  যায় না৷  কেন্দ্রীয়  পরিসংখ্যান দপ্তর  প্রকাশিত ত্রৈমাসিক আর্থিক বৃদ্ধির  হার থেকে জানা যাচ্ছে গত ছয়  বছরে  বৃদ্ধির  হার সব থেকে  কম জুলাই-সেপ্ঢেম্বরে৷  যা পাঁচ শতাংশের নীচে নেবে গেছে৷ অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের  আশঙ্কা আর্থিক বৃদ্ধির  এই অধোগতি অব্যাহত থাকলে দেশে  আর্থিক  দুর্যোগ  ঘনিয়ে আসবে৷

বিশেষজ্ঞদের মতে অর্থনীতির এই দূরবস্থায় বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার মূল কারণ---শিল্পে লগ্ণী নেই, বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই, নতুন করে কর্মসংস্থান হচ্ছে না, প্রায় অর্ধ-শতাব্দীতে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ স্তরে, উৎপাদিত পন্যের ক্রেতার অভাব, কৃষি উৎপাদনও ব্যহত৷ তবে সরকারী পরিসংখ্যানে কারচুপি আছে বলে অনেকে মনে করছেন৷ মোদী ক্ষমতায় এসে জিডিপি মাপার পদ্ধতি পাল্টে দেয়৷ সেই নিয়েও বিতর্ক আছে৷ মোদী সরকারেরই প্রাক্তন আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ্র সুব্রহ্মন্যন বলেছেন---জিডিপি মাপার নতুন পদ্ধতিতে আর্থিক বৃদ্ধির তথ্য ২ থেকে ২.৫ শতাংশ  বেশী দেখাবে৷ সুব্রহ্মন্যের কথায় আর্থিক বৃদ্ধির হার ২ শতাংশে নেমে এসেছে৷ রাজকোষের ঘাটতিও ইতোমধ্যে ৭.২ লক্ষ কোটি টাকার পরিমাণ৷ যা বাজেটে নির্ধারিত বাৎসরিক ঘাটতিকে ছাড়িয়ে গেছে৷

অর্থনীতির বেহাল দশা কাটাতে কেন্দ্র  যেসব পদক্ষেপ  নিয়েছিল তাও বিফলে যাচ্ছে৷ যদিও এখনও আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে  কেন্দ্রীয়  সরকার৷  কিন্তু শিল্পমহল, অর্থনীতির  বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা মহামন্দার দিকেই যাচ্ছে অর্থনীতির বেহাল দশা৷

কেন্দ্রীয় সরকার বেহাল অর্থনীতির দশা ফেরাতে  যে সকল ব্যবস্থা  নিয়েছে  তা বিফলেই গেছে৷ রিজার্ভব্যাঙ্ক কয়েক দফায় ১.৩৫ শতাংশ সুদের হার কমিয়েছে৷ কর্পোরেট  সংস্থাগুলির আয়কর ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েও অবস্থার উন্নতির কোন  লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ কর্পোরেট  সংস্থাগুলি  কর ছাড়ের সুযোগেেক নিজেদের মুনাফা লোটার  কাজেই ব্যবহার  করছে৷ অর্থ মন্ত্রকের মতে লগ্ণির গতি বাড়াতে কর ছাড়  দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অরুণ কুমার মনে করেন  মানুষের  আয় কমেছে, বাজারে কেনাবেচা কমেছে, ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলি তাদের কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারছে না, এই অবস্থায় নূতন লগ্ণির চিন্তা  তারা করবে কেন?

অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে  সরকার ও বিরোধী পক্ষের তরজাও শুরু হয়েছে৷ কিন্তু সঠিক  দিশা কেউ দেখাতে পারছে না৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন  সিং বলেন --- অবিশ্বাস, আতঙ্ক ও হতাশার  বিষাক্ত মিশ্রণ আর্থিক উন্নয়ণের গতিরোধ করে দিয়েছে৷ অর্থনীতির  এই হাল গভীর  চিন্তার বিষয়৷

যদিও মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে. ভি.সুব্রহ্মন্যন বলেছেন--- অর্থনীতির  ভিত মজবুত  আছে৷ আগামী ত্রৈমাসিক  থেকে বৃদ্ধির হার বাড়তে  থাকবে৷  অর্থমন্ত্রীও সংসদে  জানিয়েছেন  অর্থনীতির হাল ভালই, মন্দা দেখা দেয়নি৷ বিজেপি  সরকারের প্রাক্তন  অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বলেন---অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য চূড়ান্ত বিরক্তিকর৷ সরকার অর্থনীতির বেহাল দশা স্বীকার  করছে না৷ রোগ না মানলে সমস্যার সমাধানও হবে না৷  মোদি সরকার  ২০২৪-২৫ এ ৫ লক্ষ ডলার অর্থনীতির  স্বপ্ণ দেখেছেন৷ কিন্তু সেই স্বপ্ণপুরণ এখন দূর অস্ত৷