লোকসভার বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী দাবী করেছিলেন--- তাঁর সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন৷ এ কৃতিত্ত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের৷ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বড় গলায় বলেছিলেন দেশে এখন মূল্যবৃদ্ধি নেই৷
কিন্তু অর্থমন্ত্রীর দাবী যে কতটা অসার ভোটের দিকে তাকিয়ে তা তথ্য দিয়ে প্রমাণ করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস৷ গত ৮ই ফেব্রুয়ারী শক্তিকান্ত দাস জানান রেপোরেট কমবে না৷ এই নিয়ে টানা ছয়বার রেপোরেট থাকছে ৬.৫ শতাংশ৷ এর কম সাধারণ মানুষের ঘাড়েই পড়বে৷ একদিকে মূল্য বৃদ্ধি আবার ব্যাঙ্ক ঋণের চড়া মাসিক কিস্তি---মধ্যবিত্তের দুরাবস্থা দূর হচ্ছে না৷ অর্থমন্ত্রীর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের দাবীর বিপরীতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর বলেন--- মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও এখনও স্বাভাবিক নয়৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেবে মূল্যবৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশে নামলে স্বাভাবিক বিবেচনা করা যায়৷ কিন্তু এখনও ৪.৫ শতাংশে আসতে অনেক দেরী৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে চলতি অর্থবর্ষে মূল্য বৃদ্ধির হার সাড়ে পাঁচ শতাংশ থাকবে৷ সেই কারণেই রেপোরেট কমছে না৷ মূল্যবৃদ্ধির হার স্বাভাবিক হলেই রেপোরেট কমবে৷ অর্থমন্ত্রীর জিডিপি বৃদ্ধি হারের দাবীকেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নস্যাৎ করলো৷ অর্থমন্ত্রীর দাবী আগামী বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে ৭.৩ শতাংশ৷ কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবি ৭ শতাংশ পার হবে না৷
শুধু রিজার্ভ ব্যাঙ্কই নয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরম্ গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী দিল্লী স্কুল অব ইকোনমিকসে্ আর্থিক বিষয়ে আলোচনা সভায় বলেন মূল্যবৃদ্ধির অবসান হয়নি৷ লড়াই এখনো চলবে৷ তিনি বলেন মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম সমস্যা হল খাদ্যপণ্যের চাহিদার সঙ্গে যোগান পাল্লা দিতে পারছে না৷ চাহিদার তুলনায় যোগান কম৷ মূল্যবৃদ্ধির এটা অন্যতম কারণ৷ আর্থিক নীতি নির্র্ধরকদের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা ভাবতে হবে৷ মূল্যবৃদ্ধি আপাতত আমাদের নিয়তি৷ এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে চাহিদা অনুযায়ী যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে৷
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর অর্থমন্ত্রী এই সামাজিক সমস্যার বিষয়ের কথা কিন্তু একবারও বলেননি৷ ভারত সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা সেই সমস্যাটাই সামনে আনলেন৷ আর্থিক উপদেষ্টার কথায় চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার অবস্থা ভারতের নেই৷ কারণ দুই দেশের আর্থিক নীতির চরিত্র ও অগ্রগতি পৃথক৷
আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও ভারত সরকারের আর্থিক উপদেষ্টার বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই বিরোধীরা প্রচারে নামবে৷ অর্থমন্ত্রী মূল্যবৃদ্ধির দায় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু সরকারেরই আর্থিক নীতির নিয়ন্ত্রকরা ভিন্ন সুরে কথা বলায় সরকার কিছুটা অস্বস্তিতে পড়বেই৷