এই সমাজে পুরুষেরা বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে৷ পুরুষদের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতার জন্যে পরিত্যক্তা নারীদের একাংশ পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতে ৰাধ্য হয়৷ যখন সমাজে নারীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও পুরুষের সমান মর্যাদা পাবে তখন এই ধরণের বৃত্তি ৰন্ধ হয়ে যাবে৷ যে সব নারী ওই জঘন্য বৃত্তি পরিত্যাগ করে নিজের চরিত্র শুধরে নেবেন, সেই সব নারীকে উপযুক্ত মর্যাদা সমাজকে দিতে হবে৷ পতিতাবৃত্তি সামাজিক–র্থনৈতিক ব্যবস্থার কুফল৷
পণপ্রথার কারণ মুখ্যতঃ দুটি – একটি অর্থনৈতিক অর্থাৎ নারী–পুরুষের একের অন্যের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা অপরটি নারী–পুরষের সংখ্যাগত তারতম্য৷ ৰার্মাতে নারীরা অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাধীন৷ বিয়েতে সেখানে পুরুষকেই পণ দিতে হয়৷ পঞ্জাৰে পুরুষের সংখ্যা নারীদের সংখ্যার চেয়ে বেশী, তাই সেখানে পণপ্রথার সমস্যা বা বিধবা–বিবাহের সমস্যা নেই৷ নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক, আন্তর্জাতিক ও অসবর্ণ বিবাহকে উৎসাহ দিয়ে এই সামাজিক অবিচার দূর করা যাবে৷ বর্ত্তমানে এই ধরণের আন্দোলন একান্ত জরুরী৷ (‘‘প্রাউটের ওপর কয়েকটি প্রবচন’’, ‘কণিকায় প্রাউট’, ৪থ খণ্ড)
আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে জমির ওপর বেশী লোকের মিছিমিছি চাপ পড়বে না৷ সেই উদ্বৃত্ত লোকেদের অন্য কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতি করা যাবে৷ অবশ্য এর জন্যে সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগ ক্ষেত্র তৈরী করে দিতে হবে৷ কম লোক দিয়ে কাজ করা হ’লে মজুরের জন্যে যে খরচ হ’ত তা’ বাঁচবে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ীর মেয়েরা মাঠে জলখাবার জোগানো, খাবার পাঠানো প্রভৃতি ভারী ভারী কাজ করা থেকে রেহাই পেয়ে নিজেদের উন্নতির সময় পাবে৷ তাছাড়া, যন্ত্রীকরণের ফলে শহর ও গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হবে৷ ফলে পল্লীবাসীদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে৷
(‘‘কৃষিবিপ্লব’’, ‘অভিমত’, ২ য় খণ্ড)
গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশের জন্যে কেবল কুটীর শিল্পের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা উচিত নয়৷ তা’ করলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নতি ব্যাহত হবে৷ কুটীর শিল্পকে যদি যথাযথভাবে সংঘটিত করা হয়, তাতে গ্রামের মেয়েরা স্বচ্ছন্দ জীবিকার জন্যে পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়ে যাবে৷ স্থানীয় সমবায় সংস্থাগুলোকে ও প্রশাসনকে কুটীর শিল্পগুলোতে কাঁচামাল সরবরাহের দায়িত্ব বহন করতে হবে, দেখতে হবে যাতে কখনও কাঁচামালের যোগানে ঘাটতি দেখা না দেয়৷
Decentralised Economy, PROUT in a Nutshell, Part-21)
দক্ষিণ বাঙলার ঘরে ঘরে ক্ষুদ্রায়তন কুটির শিল্পের প্রবর্ত্তন করা যেতে পারে৷ তাতে চাষী পরিবারের মেয়েরাও শিল্লোন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে৷ এই উপায় অবলম্বন করলে ব্যাপক বেকার সমস্যার সমাধান হবে৷
(South Bengal, Prout in a Nutshell, Part-20)
নিজের শক্তিতে প্রত্যেকে এগিয়ে চলবে আর সামূহিক জীবনকে চরিতার্থ করবে–এটাই হ’ল ইতিহাসের মুল মন্ত্র৷ ইতিহাস লিখতে গিয়ে আমাদের এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে মানুষের জীবনে বহুতর দিক রয়েছে আর ইতিহাসে যেন সব দিকেরই যথোপযুক্ত নির্দেশনা থাকে৷ কোন বিশেষ যুগে মানুষের শিক্ষা–ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক মান, ভাব–ভাবনা, পোশাক–পরিচ্ছদ, নারী জাতির অবস্থা, সামাজিক তথা অর্থনৈতিক বিধি ব্যবস্থায় নারীর ভূমিকা, সমাজে দুর্বল অনুন্নত সম্প্রদায়ের অবস্থা–ইতিহাসে এগুলোই আলোচিত হওয়া দরকার৷ ইতিহাস লিখতে গিয়ে যদি এগুলোর কোন একটা বাদ পড়ে যায় তাহলে সেটা যথার্থ ইতিহাস হবে না৷
(‘‘ইতিহাস কেমন হওয়া উচিত’’, অভিমত’, ৪থ খণ্ড, ‘আনন্দবাচনামৃতম্’, ৯ম খণ্ড)