গত ১৪, ১৫ই মার্চ কলিকাতায় প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের কর্মীদের এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়৷ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এই প্রশিক্ষণ শিবিরে কর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রশিক্ষক ছিলেন প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের সেক্রেটারী জেনারেল আচার্য রবিশানন্দ অবধূত ও কেন্দ্রীয় সংঘটন সচিব আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷
শিবিরে বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণগুলি বিশ্লেষণ করেন আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷ তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাউটের বাস্তবোচিত পরিকল্পনা রূপায়নের মাধ্যমে কীভাবে সংকট থেকে ত্রাণ পাওয়া যাবে তা বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে বলেন৷ তিনি বলেন বর্তমান অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মূল কারণ করোনা নয়, করোনা ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগে থেকেই ভারতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে৷
করোনার মত দুর্যোগ এই প্রথম নয়৷ গত চারশ’ বছরের ইতিহাসে এই ধরণের বিপর্যয় বার বার এসেছে ও আসবে৷ অর্থনীতিবিদদের এই ধরণের বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলাবার আগাম ব্যবস্থা থাকা দরকার৷ কিন্তু কেন্দ্রীত অর্থনীতির পক্ষে সেই প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়, কারণ বর্তমান আর্থিক বিপর্যয়ের মূল কারণই পুঁজিবাদের স্বার্থ নির্ভর কেন্দ্রীত অর্থনীতি৷ একথা ঠিক করোনার প্রভাবে বিশ্বের অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে, তবে করোনার প্রাদুর্ভাব না হলেও ভারতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিত৷
আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূতের কথায়---প্রাউটের অঞ্চলভিত্তিক বিকেন্দ্রীত ও সুসন্তুলিত পরিকল্পনাই এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রতিষেধক ও পরিত্রাণের পথ৷ তিনি প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন মানুষকে সজাগ ও সচেতন করতে হবে প্রাউটের আদর্শ তুলে ধরে৷
প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের সেক্রেটারী জেনারেল আচার্য রবিশানন্দ অবধূত প্রাউটের বিকেন্দ্রিত অর্থনীতির ব্লক পর্যায়ের পরিকল্পনাগুলি---বিশেষ করে কৃষি ও শিল্পের সমন্বয়ে একটি বলিষ্ঠ অর্থনীতি গড়ে উঠতে পারে তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন৷ তিনি বলেন এই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নই মানুষকে উপার্জনক্ষম করে তুলবে ও ক্রয় ক্ষমতার অধিকারী করবে৷ তবে তিনি এসব পরিকল্পনা রূপায়নের ব্যাপারে সদ্বিপ্র নেতৃত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন৷ তিনি বলেন কোন পরিকল্পনাই সে যতই বাস্তবোচিত হোক, আধ্যাত্মিক নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত উপযুক্ত নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত না হলে সর্বসাধারণের কল্যাণ সম্ভব নয়৷ বর্তমান বিপর্যয়ের কারণ শুধুমাত্র কেন্দ্রীত অর্থনীতি নয়, দুর্নীতিপরায়ণ আমলা ও রাজনীতিবিদরাও এই বিপর্যয়ের দায় অস্বীকার করতে পারবে না৷ আজ অর্থনীতির নিয়ামক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বাসা৷ তাই মানুষের ও সমাজের সার্বিক কল্যাণ করতে হলে এই দুর্নীতির বাসা ভাঙতেই হবে৷ সেই জন্যেই প্রাউট তত্ত্বের প্রবক্তা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গেই সদ্বিপ্র নেতৃত্বের বিধান দিয়েছেন৷ আধ্যাত্মিক নীতিবাদের প্রতিষ্ঠিত এই নেতৃত্ব হবে শারীরিক দিক দিয়ে সক্ষম, কঠোর দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও আধ্যাত্মিক বলে বলীয়ান৷ কোন প্রলোভনের কাছেই এরা মাথা নত করবে না৷ প্রাউট প্রবক্তা এদেরই সদ্বিপ্র নাম দিয়েছেন৷ এই সদ্বিপ্রের হাতেই সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার দিতে হবে৷ তবেই সার্থক মানব সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে৷ শিবিরের শেষে প্রাউটের এই আদর্শকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বেশ কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়৷