চেতলা, কলকাতা ঃ গত ১১ই অগাষ্ট ২০১৮ দঃকলকাতার চেতলা অঞ্চলের অহীন্দ্রমঞ্চের সামনে আমরা বাঙালী কলিকাতা জেলার শাখার উদ্যোগে এক বিরাট পথসভার আয়োজন করা হয়৷
সভা শুরু হয় বৈকাল ৪টা৷ চলে রাত ৮টা পর্যন্ত৷ সভার প্রারম্ভে বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন সংঘটনের কর্মীগণ৷ এরপর ১মিনিট শহীদদের উদ্দেশ্যে নিরবতা পালন করা হয়৷ দেশমাতৃকার শৃংঙ্খলমোচনে তাঁর আত্মবলিদানের ইতিহাসের উপর বক্তারা বক্তব্য রাখেন৷
নতুন নাগরিকপঞ্জী তৈরীর নামে অসম থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙালীর নাাগরিকত্ত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে সমস্ত বাঙালীর গর্জে ওঠার ডাক ছিল এইদিনের মূল অনুষ্ঠান৷
গত ৩০শে জুলাই অসমে নাগরিকপঞ্জীর (এন.আর.সি) চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হওয়ার ৪০ লক্ষেরও অধিক বাঙালীর নাম বাদ পড়ার আমরা বাঙালীর সংঘটনের কর্মীরা দিকে দিকে পথসভার মাধ্যমে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন৷
চেতলা অহীন্দ্রমঞ্চের সামনে আমরা বাঙালীর পথসভার সেই বিক্ষোভেরই ইঙ্গিত দেয়৷ পথসভার বক্তারা ছিলেন সুনীল চক্রবর্তী, জয়ন্তদাস, বাপি পাল, অরূপ মজুমদার, বিকাশ বিশ্বাস, গোপাল রায় চৌধুরী প্রমুখ৷
বক্তারা বলেন নাগরিকপঞ্জী (এন.আর.সি) থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙালীর (ভূমিপুত্র ও কন্যা) নাম বাদ দিয়ে তাদের অসম থেকে বিদেশী আখ্যা দিয়ে বিতাড়ন করা চলবে না৷ অসমসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি বাঙালীর নায্য নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে৷ তাঁরা এও বলেন অবিলম্বে ভারতের সংবিধানের ধারা মেনেই বাঙালীর নিজ স্বভূমি ‘বাঙালীস্তান’ গড়ে তুলতে হবে৷ তারা বলেন অসমের ঘটনা আজ নতুন নয়৷ পঞ্চাশের দশক থেকে চলে আসছিল ‘বঙ্গাল খেদাও’ আন্দোলন আশির দশকে তা বীভৎসরূপ নেয়৷ ১৯৮৩ সালে অসমে প্রায় দশহাজার বাঙালীকে হত্যা করা হয়েছিল৷ আর ‘আমরা বাঙালী’ সংঘটন দীর্ঘদিন ধরে অসমে বাঙালী হত্যা, বঞ্চনা, বিতাড়ন ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে৷
সভার শেষে নাগরিকপঞ্জীকরনের্ নামে বাঙালী বিতাড়নের প্রতিবাদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী ও ভারতীয় জনপার্টির সভাপতি অমিত সাহের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়৷
বক্তাদের জোরাল বক্তব্য শুনতে বেশ ভীড় জমে যায়৷ রাত ৮টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়৷
বনগাঁ ঃ মহকুমায় ঝাউডাঙ্গা ও চাঁদপাড়া বাজারে ১০ই অগাষ্ট ও ১২ই অগাষ্ট বিকাল ৫ টা থেকে ‘আমরা বাঙালী’র গাইঘাটা বকের উদ্যোগে অসমে বাঙালী বিতাড়নের চক্রান্তের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়৷
উক্ত সভায় --- বক্তব্য রাখেন ‘আমরা বাঙালী’র কেন্দ্রীয় সাংঘটনিক সচিব জয়ন্ত দাস, বিকাশ বিশ্বাস, বাপী পাল, অরূপ মজুমদার, বশ্বেশ্বর মন্ডল বাঙালী মহিলা সমাজের পক্ষে নমিতা দেবী, শ্যামল বিশ্বাস ও বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট ও তাত্ত্বিক নেতা অনিমেশ বিশ্বাস প্রমুখ৷ বক্তারা সম্প্রতি অসমের জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণের নামে ৪০,০৭,৭০৭ জনকে বিদেশী চিহ্ণিতকরণ করে অসম থেকে বিতাড়ন করার কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে তাঁরা সরব হন৷ শুধু অসমে নয় উত্তর পূর্র্বঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে এন.আর.সি-র নামে বাঙালী বিতাড়নের ছক কষছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ জাতীয় জনতাপার্টির পঃবঙ্গের নেতারা ইতমধ্যে আওয়াজ তুলেছেন পশ্চিম বাঙলায় তারা ক্ষমতায় এলেই এন.আর.সির নামে বাঙালী বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু করবে৷ আমরা বাঙালীর বক্তারা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ তাঁরা বর্তমান এই পরিস্থিতিতে বাঙালীকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এই সভাগুলিতে বাঙালী জনমানসে ব্যাপক সাড়া পড়েছে৷
মুর্শিদাবাদ ঃ মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী থানার অন্তর্গত নরসিংহপুর বাজার মোড়ে ‘আমরা বাঙালী’র মুর্শিদাবাদ শাখা এক পথসভার আয়োজন করে৷ সভা শুরু হয় ৫টা৷
উক্তসভার প্রারম্ভে বিপ্লবী বীর ক্ষুদিরাম বসুর ১১১তম আত্মবলিদান দিবস পালিত হয়৷ ক্ষুদিরাম বসুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদাান করার পর ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়৷ সভায় স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসুর আত্মত্যাগের ইতিহাসের উপর আলোকপাত করেন মুর্শিদাবাদ জেলার ‘আমরা বাঙালীর নেতৃবৃন্দ৷
সম্প্রতি অসমে নাগরিকপঞ্জী (এন.আর.সি) করণের নামে ৪০,০৭৭০৭ জনকে বিদেশী আখ্যা দিয়ে অসম থেকে বিতাড়ন করার কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে বক্তারা গর্জে ওঠেন৷
শুধু তাই নয় পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব আওয়াজ তুলেছেন যে এখানে তারা ক্ষমতায় এলে এন.আর.সি. চালু করবেন৷ এর সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করে ‘আমরা বাঙালী’ মুর্শিদাবাদ শাখার নেতৃবৃন্দ৷ তারা বলেন এ কাজ আমরা কখনই হতে দেব না৷ তারা বলেন এসব হলে সারা বাঙলায় আগুন জ্বলবে৷
বক্তারা ছিলেন বিশ্বরূপ প্রামাণিক, সুবীর মণ্ডল, দিব্যেন্দু চৌধুরী, জেলা সচিব স্বপন কুমাার মন্ডল প্রমুখ৷