শিলচর ঃ অসমে ‘এন.আর.সি’-র নাম করে এখানকার শাসক বিজেপি দল ও অসম গণ পরিষদের ছাত্র সংঘটন আসু অসম থেকে যেন তেন প্রকারেণ বাঙালী তাড়াবার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে৷ অসমে নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরও প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি৷ এরা বেশিরভাগই বাঙালী ও অসমের স্থায়ী বাসিন্দা৷ প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ রাজত্বের সময় বাঙলার বিস্তীর্ণ এলাকা যেমন কাছাড়, নওগাঁ, লামডিং, বরপেটা, গোয়ালপাড়া এই সমস্ত বাঙলারাই অংশ অসম প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে৷ তাই এদের নাগরিকত্ব প্রশ্ণাতীত৷ আর স্বাধীনতার বলি হিসেবে যারা আগেকার পূর্ব বাঙলা (বর্তমান বাঙলাদেশ) থেকে এপারে উদ্বাস্তু হয়ে এসেছে তাদেরও নাগরিকত্ব নিয়েও কোনো প্রশ্ণ থাকতে পারে না---কারণ ভারত সরকার তাদেরও নাগরিকত্ব দানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আর তাছাড়া তারা যে উদ্বাস্তু হয়ে এসেছে --- তা তো ভারতের নেতাদেরই কারণে৷ এ সত্ত্বেও অসমের উগ্র অহমিয়া জাতীবাদীরা বাঙালীদের তাড়াবার জন্যে নানান্ কৌশল ফাঁদছে৷
অসমের নাগরিকপঞ্জীতে নাম ওঠানোর জন্যে সরকারের নির্দেশ মত এখানকার বাসীন্দা হিসেবে পুরোনো নথিপত্র, বংশবৃক্ষ প্রভৃতি জমা দেওয়ার পরও নাগরিকপঞ্জীতে যাদের নাম আসেনি, কোর্টের নির্দেশ অনুসারে তাঁরা পুনরায় এন.আর.সি সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়েও তাদের নাম বাদ দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতে গেলে তারা কোনো কারণ বলছে না, অযথা হেনস্থা করছে৷
কাউকে বা বলা হচ্ছে ডি-ভোটার (ডিফেক্টিভ্ ভোটার) হওয়ার জন্যে নাগরিকপঞ্জী থেকে নাম বাদ গেছে৷ তাদের প্রশ্ণ কী করে তারা ডি-ভোটার হ’ল? আগে তারা ভোট দিয়েছে৷ আর নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো নোটিশও আসেনি৷ নিয়ম অনুসারে, এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আগে নোটিশ দেবে, নাগরিকত্ত্ব সংক্রান্ত নথিপত্র দেখতে চাইবে, তারপর ওই নথিপত্র দেখাতে না পারলে ডি-ভোটার হিসেবে ঘোষণার প্রশ্ণ উঠে৷
এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো নোটিশই আসেনি৷ তাহলে ডি-ভোটার কেন? কোনো উত্তর নেই, করিমগঞ্জ এলাকায় নাম বাদ পড়া ওইসব বাঙালীরা করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের শরণ নিয়েছেন ৷ বিধায়ক কমলাক্ষ পুরকায়স্থ বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাঙালীদের না জানিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ডি-ভোটার করা হচ্ছে৷ এর পেছনে এন.আর.সি কর্তৃপক্ষের গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে বিধায়ক কমলাক্ষ পুরকায়স্থ এন.আর.সি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
এদিকে যে সমস্ত বাঙালী তাদের নথিপত্র জমা দিয়ে নাগরিকপঞ্জীতে নাম তুলতে পেরেছেন, তাদের পুনরায় নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্যে অগ্ণিপরীক্ষা মুখে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ এ ব্যাপারে আসুও বিজেপি সমনিত কিছু উগ্র অসমিয়া সংঘটন নোতুন করে প্যাঁচ কষছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ তারা নাগরিকপঞ্জীতে নাম ওঠা বাঙালীদের বিরুদ্ধে ভুয়ো নথিপত্র জমা দেওয়ার অভিযোগ তোলার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এই কারণে নাগরিকপঞ্জীতে নাম ওঠা বাঙালীরাও বর্তমানে নানান্ আশঙ্কায় ভুগছেন৷