২১শে জুন ঃ আনন্দমার্গের পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে সর্বত্র যোগ দিবস পালন করা হচ্ছে৷ আনন্দমার্গের প্রচারকগণ বিভিন্ন স্কুল, কলেজে ও বিভিন্ন স্থানে মঞ্চ তৈরী করে যোগের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার জন্যে সভাসমিতি করছেন ও যোগাসন ও যোগসাধনা শেখাচ্ছেন৷ আচার্য বিশুদ্ধাত্মানন্দজী বলেন, মানুষের তিনটি দেহ---স্থূল দেহ হ’ল আমাদের ভৌতিক (Physical) শরীর, এরপর মন হ’ল সূক্ষ্ম দেহ, আর আত্মা হ’ল অতি সূক্ষ্ম কারণ দেহ৷ আমাদের শরীরকে যেমন সুস্থ রাখতে হবে, মনকেও সুস্থ রাখতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে মনের বিকাশ প্রয়োজন৷ যে মনের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করি, এই মন হ’ল স্থূল মন৷ এই মন ইন্দ্রিয়গুলির মাধ্যমে কাজ করে ও খাওয়া-পরা প্রভৃতি স্থূল চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে৷ এই মনটিকে মনের কামময় কোষও বলা হয়৷ এরপরে মনের যে সূক্ষ্ম স্তর এটিকে বলা হয় মনোময় কোষ৷ মনোময় কোষের বিকাশ যতই হয় ততই মানুষের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ এর চেয়ে সূক্ষ্মতর হ’ল মনের অতিমানস কোষ৷ যে কোষে মন নান্দনিক আনন্দ অনুভব করে ও অতিন্দ্রিয় আধ্যাত্মিক আনন্দের প্রতিও আকৃষ্ট হয়৷ এর পরের স্তর হ’ল মনের বিজ্ঞানময় কোষ৷ মনের এই কোষের বিকাশ হলে মানুষের মধ্যে বিবেক জাগ্রত হয় ও আধ্যাত্মিক আকর্ষণ প্রবল হয়৷ মানুষের মধ্যে লোভ, ক্রোধ প্রভৃতি স্থূল বৃত্তির প্রভাব থাকে না বললেই চলে৷ এরও পরে মনের যে সূক্ষ্ম স্তর তা হ’ল হিরন্ময় কোষ৷ এই হিরন্ময় কোষে মানুষ আধ্যাত্মিক আনন্দে বিভোর থাকে৷ এরপর হ’ল আত্মার অধিষ্ঠান যা বিশুদ্ধ চৈতন্য স্তর৷ বৈবহারিক ক্ষেত্রে আত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে কোনও তফাৎ নেই৷
যোগ সাধনার নিয়মিত অনুশীলনে মানুষের শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি মনের সূক্ষ্ম স্তরগুলির বিকাশ ঘটে৷ ও ধীরে ধীরে আত্মজ্ঞান লাভ করে৷ এইভাবে যোগ সাধনা মানুষের জীবনে পূর্ণত্ব এনে দেয়৷ মানুষের জীবনকে সার্থক ও আনন্দময় করে তোলে৷ আজকের সমাজে যে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি দেখা দিয়েছে, মানুষের জীবনে বিশৃঙ্খলা, সমাজে যে ব্যাপকভাবে অন্যায়-অবিচার-ব্যাভিচার চলছে, এই সংক্রামক ব্যাধি থেকে সমাজকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হ’ল যোগ৷ এখানে বলা বাহুল্য যোগ বলতে কেবল যোগ-ব্যায়াম বা যোগাসন বোঝায় না, অষ্টাঙ্গিক যোগসাধনা বোঝায়---যার মধ্যে যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান, সমাধি ইত্যাদি অঙ্গ রয়েছে৷ এক কথাতেই বলতে হয় অষ্টাঙ্গিক যোগ সাধনা পীড়িত মানবতার মুক্তির পথ৷