কোশলরাজ প্রসেনজিৎ ছিলেন মগধরাজ বিম্বিসারের শ্যালক৷ মগধরাজ বিম্বিসার বিয়ে করেছিলেন কোশলরাজ প্রসেনজিতের বোনকে৷
বিয়ের পর একদিন প্রসেনজিৎ বেড়াতে গেলেন বোনের বাড়ীতে৷
ভগ্ণীপতি বিম্বিসারের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রসেনজিৎ জানতে পারলেন, মগধে পাঁচজন ধনকুবের কোটিপতি শ্রেষ্ঠী আছেন৷ সেই সময় রাজ্যে কোটিপতি শ্রেষ্ঠী থাকা রাজার পক্ষে গর্বের বিষয়৷ তাই রাজারা শ্রেষ্ঠীদের খুব সন্মান দিতেন৷ কিন্তু কোশলে অনেক ধনী শ্রেষ্ঠী থাকলেও কোটিপতি একজনও নেই৷ তাই প্রসেনজিৎ বিশ্বিসারের কাছে অনুরোধ করলেন, ভদ্রে ! আমার রাজ্যে একজনও কোটিপতি শ্রেষ্ঠী নেই৷ আপনার রাজ্যে তো পাঁচজন আছেন৷ অন্ততঃ একজনকে আমার রাজেয পাঠান-না৷ বিম্বিসার হেসে বললেন, প্রসেনজিৎ! তাঁরা প্রত্যেকেই স্বাধীন এবং প্রভাবশালী৷ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার কিছু কোরবার নেই৷
প্রসেনঞ্জিৎ বললেন, আপনি যদি তাঁদের একটু অনুরোধ করেন তো কিছুটা সুফল হতে পারে৷
স্বভাবসুলভ মৃদু হেসে প্রসেনজিতের হাতখানা সসোহাগে আপন হাতে তুলে বিম্বিসার বললেন’ তাই করবো প্রসেনজিৎ৷ তোমার কথামতো আমি তাঁদের প্রত্যেককে অনুরোধ করবে! তোমার রাজ্যে বসবাস করতে৷ তারপর একদিন মেণ্ডক শ্রেষ্ঠীর ছেলে ধনঞ্জয়কে বিম্বিসার ডেকে পাঠালেন৷
ধনঞ্জয় এলেন গিরিব্রজে৷
বিম্বিসার বললেন, শ্রেষ্ঠী! আপনি নিশ্চই শুনেছেন কোশলরাজ প্রসেনজিৎ এসেছেন গিরিব্রজে ৷ তাঁর রাজ্যে একজনও কোটিপতি শ্রেষ্ঠী নেই৷ তাঁর ইচ্ছে, আমার রাজ্যের পাঁচজন শ্রেষ্ঠীর যে কেউ একজন তাঁর রাজ্যে বাস করেন৷ এ-ব্যাপারে আমি আপনাকেই অনুরোধ করছি৷
ধনঞ্জয় ভাবলেন, এখানে পাঁচজন কোটিপতির মধ্যে সে একজন৷ অপর চারজনের সাথে সব সময়ই তাকে প্রতিযোগিতা করে বাঁচতে হয়৷ নচেৎ প্রভাব প্রতিপত্তি ক্ষুণ্ণ্ হবার সন্তাবনা৷ কিন্তু কোশল রাজের রাজত্বে গেলে হবে একক কোটিপতি৷ সর্বেসর্বা৷ তাই তিনি সহজেই রাজী হয়ে গেলেন.. বিম্বিসারের প্রস্তাবে৷ বললেন, মহারাজ! আপনার অনুরোধ রক্ষায় আমার কোন আপত্তি নেই৷
বিম্বিসার খুশী হয়ে বললেন, তবে আপনি প্রস্তুত হোন৷ প্রসেনজিৎকে আপনার যাবার সংবাদ জানিয়ে দিচ্ছি৷ দিন কয়েক বাদে প্রসেনজিৎ সাগ্রহে এবং সাড়ম্বরে প্রস্তুত হলেন কোটিপতি শ্রেষ্ঠী ধনঞ্জয়কে নিজের রাজ্যে নিয়ে যাবার জন্যে৷ রাজগীর থেকে প্রসেনজিৎ ধনঞ্জয় এবং তার পরিবার-পরিজনদের নিয়ে রওনা হলেন কোশল রাজ্যের উদ্দেশ্যে৷ রাজা আর শ্রেষ্ঠীর নানারকম কথাবার্তা, নিজ নিজ জীবনের বিভিন্নমুখ্য অভিজ্ঞতা, আলাপ আলোচনা আর হাস্য পরিহাসের মধ্য দিয়ে পথে পথেই কেটে গেলো একদিন৷ পরদিন সন্ধ্যায় তাঁরা এসে পৌঁছালেন.এক বিশাল উন্মুক্ত প্রান্তরে
প্রসেনজিৎ বললেন, শ্রেষ্ঠী আজ আমরা এইখানেই তাবু ফেলবো৷ অপুর্ব মনোমুগ্দকর নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত, অগাধ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং শান্ত সমাহিত এই প্রান্তরটি কোন্ রাজ্যের সীমানায়?
প্রসেনজিৎ বললেন, এটি আমার রাজ্যের সীমানায়! কিন্তু কেন বলুনতো?
কিন্তুর কোন জবাব না দিয়ে ধনঞ্জয় আবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন ঠিক করেছেন? শ্রাবস্তীতে? প্রসেনজিৎ বললেন, হ্যাঁ৷ তখন ধনঞ্জয় বললেন, মহারাজ! শ্রাবস্তী লোকজন পরিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী৷ আমার এতো লোকজন নিয়ে সেখানে বসবাস করা অসুবিধা হবে৷ আমি ভাবছি যে এইখানেই আমার আস্তানা গাড়বো৷ অবশ্য তাতে যদি আপনার সম্মতি থাকে৷
ধনঞ্জয়ের সৌজন্যপুর্ণ ব্যবহারে প্রসেনজিৎ খুব সন্তুষ্ট হলেন৷ তৎক্ষণাৎ তিনি মত দিয়ে দিলেন ধনঞ্জয়ের প্রস্তাবে৷ তখন পশ্চিমাকাশে সূর্য গেছে অস্ত৷ সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে এসেছে৷ প্রসেনজিৎ বললেন, শ্রেষ্ঠী আপনার যদি এ জায়গাটি মনে ধরে তো এখানে আপনি স্বচ্ছন্দে বাস করতে পারেন৷ আমার কোন আপত্তি নেই৷ আমি আজই আমার কর্মচারীদের আদেশ দিচ্ছি এখানে নগর পত্তন কোরবার জন্যে৷ আপনিই হবেন এ-নগরের শাসন কর্ত্তা৷ ঠিক সন্ধ্যের সময় প্রসেনজিৎ এ-নগরটির নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন ৷ তাই নগরটির নাম রাখা হয়েছিল সাকেত৷ এই সাকেতই পরবর্ত্তীযুগে পরিচিত হলো অযোধ্যা নামে৷