‘বাবা নাম কেবলম্’ কীর্ত্তন কেন?

লেখক
আচার্য পরাবিদ্যানন্দ অবধূত

বাংলায় তথা পূর্বাঞ্চল ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে কীর্ত্তন নোতুন নয়৷ আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে এই কীর্ত্তনের মাধ্যমে শ্রী চৈতন্যদেব বাংলায় তথা পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে আর শ্রী শঙ্কর দেব সমগ্র অসমে একটা আধ্যাত্মিক বিপ্লব এনেছিলেন৷ সেই কারণে বাংলা তথা পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে এই কীর্ত্তন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে ৷ তাই তো বাংলার মরমী কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন---

 ‘‘কীর্ত্তনে আর বাউলের গানে আমরা দিয়েছি খুলি’,

 মনের গোপনে নিভূত ভুবনে দ্বার ছিল যতগুলি৷’’

তাই কীর্ত্তনের মাধ্যমে মানসভূমির অজানা প্রবেশ পথগুলো খুলে যায়৷ এর মনোবৈজ্ঞানিক দিক ব্যাখ্যা করে আনন্দমার্গের প্রবক্তা ও প্রবর্তক তথা আমাদের পরমারাধ্য গুরুদেব শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী বলেছেন, কীর্ত্তন হচ্ছে ‘সাধনা সহায়কম্’--- অর্থাৎ কীর্ত্তন সাধনা সহায়ক৷

সাধনা কী? --- মনকে একাগ্র করে পরমলক্ষ্যের দিকে ধাবিত করে দেওয়া ও তাতে লীন করে দেওয়া৷ এক্ষেত্রে কীর্ত্তন সাধনাকে সর্বতভাবে সাহায্য করে৷

কীর্ত্তনে হাত, পা, মুখ, কাণ ইত্যাদি শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয় সমূহ কীর্ত্তনের ছন্দে ছন্দায়িত হয়ে যায় বলে মন সহজেই একাগ্র হয়ে যায়৷ আর কীর্ত্তনের ভাবনা এমনই যে, সেই একাগ্র মন সহজেই পরম লক্ষ্যে ধাবিত হয়ে, তাতে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়৷

এখন প্রশ্ণ --- কীর্ত্তন কাকে বলবো? ইতিহাসে দেখা যায়, মহর্ষি নারদ বীণা ও বাজাচ্ছেন, গানও গাইছেন আবার নাচছেন ও আধুনিক যুগে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেবও এই তিনটিকে উৎসাহ দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন , এই যে গানটা হবে , তার ভাবটা হবে এমন যা প্রত্যক্ষভাবে পরমপুরুষ অর্থাৎ ভগবান সক্রান্ত ৷ আর প্রত্যক্ষভাবে পরমপুরুষ সংক্রান্ত যে গান সেইটারই নাম দেওয়া হয়েছে ‘‘কীর্ত্তন’’৷ তাই উচ্চস্বরে পরমপুরুষের নাম নেওয়ার অপর নাম হ’ল ‘কীর্ত্তন’৷ শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর রচিত ‘প্রভাত সঙ্গীতে’ প্রশ্ণ তুলেছেন ‘‘তোমায় কি নামে ডাকিবো গো?’’ পরমপুুরুষের বা ঈশ্বরের বা ভগবানের গুণের কোন সীমা পরিসীমা নাই৷ এমতাবস্থায় গুণবাচক নামে যদি তাঁকে ডাকি, তাহলে যেহেতু তাঁর গুণের কোন সীমা-পরিসীমা নেই, সেইহেতু তাঁর নামও অসংখ্য অর্থাৎ অনেক৷ যেমন--- তাঁর এক নাম ‘হরি’৷ ‘হরি’ মানে হরণ করা , হরণ করা মানে চুরি করা ৷ হ্যাঁ--- এক অর্থে তিনি চোর৷ কারণ তিনি ভক্তকে না জানিয়ে তার সব পাপ হরণ করে নেন ৷ তাই তিনি হরি৷ আবার তাঁর আর এক নাম কৃষ্ণ৷ ‘কৃষ্ণ’ মানে যিনি আকর্ষণ করেন৷ তিনি সমস্ত ভক্তদের আকর্ষণ করে চলেছেন৷ আর তাঁরই আকর্ষণে গ্রহ-উপগ্রহের মতো সবাই তাঁকে ঘিরে ঘুরে চলেছে, এটাই তাঁর ‘‘রাসলীলা’’৷ আবার তাঁর আর এক নাম ‘রাম’৷ ‘রাম’ মানে ‘রমন্তে যোগিনঃ যস্মিন্ স রামঃ’--- অর্থাৎ যার আরাধনা করে সাধক আনন্দলাভ করেন৷

একবার হনুমানকে জিজ্ঞেস করা হয়--- ‘‘পরম পুরুষের অনেক নাম, তবে তুমি সব নাম ব্যবহার কর না কেন? নারায়ণ , রাম--- আরও কত কি? যে সব ব্যবহার না করে তুমি সব সময় ‘রাম’ ‘রাম’ করছ৷ জানি রাম তোমার ইষ্ট, কিন্তু অন্য নামেরও তো মহত্ত্ব আছে৷’’ উত্তরে হনুমান বললেন---

‘‘ শ্রীনাথে জানকীনাথে চাভেদঃ পরমাত্মণি ৷

তথাপি মম সর্বস্বঃ রামঃ কমললোচনঃ৷৷’’

অর্থাৎ দার্শনিক বিচারে আমি জানি যে শ্রীনাথ মানে নারাায়ণ আর জানকীনাথ মানে রাম --- দুইয়ের মধ্যে কোন ভেদ নেই৷ আমি ভালোভাবেই জানি৷ এঁরা সবাই এক৷ কিন্তু আমি অনেক নামের পেছনে ছুটতে চাই না ৷ আমি এক নৌকাতেই থাকতে চাই৷ আর আমার কাছে রাম ছাড়া আর কেউ নেই৷ আমি আর কাউকে জানি না, মানি না৷ অনেক নামকে নিয়ে থাকলে মনের একাগ্রতা আসে না৷ পরে সাধনার অগ্রগতি ব্যাহত হয়৷

এক অখণ্ড অবিনশ্বর পরমপুরুষের সঙ্গে ভালোবাসায় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে৷ তাঁকে প্রিয়বাচক শব্দ ডেকে তাঁর ভাবে মনকে ডুবিয়ে দিতে হবে৷

 এখন প্রশ্ণ হচ্ছে তবে তাঁকে কি নামে ডাকবো? ‘হরি’ বলবো? ‘রাম’ বলবো? না তাঁকে ‘কৃষ্ণ’ বলবো? যখন ‘হরি’ বলছি তখন ‘রাম’ আর ‘কৃষ্ণর’ ভাব আসছে না৷ আবার ‘কৃষ্ণ’ বলছি তখন ‘হরি’ আর ‘রামে’র ভাব আসছে না ৷ আবার যখন তাঁকে ‘রাম’ বলছি, তখন ‘হরি’ ও ‘কৃষ্ণের ভাব আসছে না৷ আর তর্কের খাতিরে যদিও ধরে নিয়ে, এই তিনটি ভাবই একসঙ্গে আসছে--- তাহলেও তাঁর যে আরও অসংখ্য অগুন্তি গুণাবলীর ভাব তো আসছে না! তিনি তো অধরা থেকেই যাচ্ছেন৷

পরমপুরুষ বা ঈশ্বর আমাদের সকলের পিতা৷ এখন প্রশ্ণ হলো, তাঁর স্নেহের সন্তান-সন্ততিরা তাদের পিতাকে কি তাঁর গুণ অনুযায়ী ডাকবে? এটা কি বাস্তব সম্মত? এটাতো বাস্তব সম্মত নয়৷ যেমন ধরুন আমাদের এই সংসার জীবনে কোন এক সন্তানের পিতা সকালবেলা ছাত্র পড়ান , দুপুর বেলা ওকালতি করেন আর সন্ধ্যাবেলা ডাক্তারি করেন৷ তাহলে সেই সন্তান কি তার বাবাকে সকালবেলা মাষ্টার মহাশয়, দুপুর বেলা উকিলবাবু , সন্ধ্যেবেলা ডাক্তার বাবু বলে ডাকবে? আর যদি তর্কের খাতিরে ডাকেও তার বাবা কি সেটা মেনে নেবেন ? বা অসন্তুষ্ট হবেন না? কিন্তু এক্ষেত্রে সে যদি তার পিতাকে ‘বাবা’ বলে ডাকলে তার মধ্যে মাষ্টার মহাশয়, উকিলবাবু, ও ডাক্তারবাবু সবাই এসে যায়৷ সেই জন্যে সমস্ত সৃষ্টির জনককে কোন গুণবাচক নামে না ডেকে প্রিয় সম্বোধন বাচক শব্দে ‘‘বাবা’’ বলাই শ্রেয়৷

সাধনার ক্ষেত্রে ‘‘বাবা’’ বলার মধ্য দিয়ে ‘হরি’ ‘কৃষ্ণ’ ও ‘রাম’সহ তাঁর সব নামকে ডাকা হয়ে যায়৷ আর নামে নামে না ডাকায় বা বিশেষ কোন নামে না ডাকায় যে কোন ধর্র্মবলম্বী মানুষই এই ইউনিবার্র্সল নামে ঈশ্বর বা ভগবান বা পরমপুরুষকে ডাকতে কোন কুণ্ঠা বা সংকোচ বোধ করবেন না৷ সেই জন্যে আনন্দমার্গের প্রবক্তা, প্রবর্ত্তক ও আমাদের পরমারাধ্য গুরুদেব শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী বহুল প্রচলিত কীর্ত্তনকে প্রাধান্য দিয়েও কীর্ত্তন মন্ত্রকে বদলে দিয়ে ইউনিবার্র্সল মন্ত্র ‘বাবা নাম কেবলম্’ করায় তা সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মমতাবলম্বীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে৷ কেবল আসমুদ্র হিমাচল নয় বিশ্বের প্রতিটি কোণায় এই কীর্ত্তন পৌঁছে গেছে৷

আর ‘কেবলম্’ মানে কেবল ‘তাঁর’ নাম নেওয়া, এই কেবল এক পরমাত্মা ভাবটি থাকার জন্যে সাধক কিছুক্ষণ কীর্ত্তন করতে করতে তার মধ্যে একটা কেবলা ভক্তির উদয় হয়৷ কেবলা ভক্তি তখনই হয় যখন সেই পরমপুরুষ ছাড়া আর কিছুই তার মধ্যে থাকে না৷ যেমন ভগবান ‘কৃষ্ণ’ যখন একদিন বিদুরের বাড়ীতে গিয়েছিলেন তখন বিদুর বাড়ীতে ছিলেন না৷ বাড়ীতে ছিলেন তাঁর সহধর্মিনী৷ বিদুর যেমন জানতেন যে ‘কৃষ্ণ’ ভগবান ঠিক তেমনি তাঁর সহধর্মিনীও জানতেন ‘কৃষ্ণ’ ভগবান৷ এখন সেই ভগবান তাঁর ঘরে কৃপা করে এসেছেন৷ কী করে যে তাঁর আপ্যায়ন করবেন--- এই ভেবে ভেবে তাঁদের ঘরে যে কলা ছিল সেই কলা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে তিনি কৃষ্ণকে খাওয়াতে লাগলেন৷ একই সময় তাঁর মন ও প্রাণকৃষ্ণের ভাবে থাকায় তিনি কলা ছাড়িয়ে কলার খোসাটা কৃষ্ণ ভগবানকে খাওয়াতে লাগলেন৷ আর ‘‘কৃষ্ণ’’ ভগবানও তা মহা আনন্দ উপভোগ করতে লাগলেন৷ এই যে কলা বা তার খোসা---সে দিকে মন না থাকায় --- কলার বদলে খোসা ভগবান কৃষ্ণের হাতে তুলে দেওয়া--- এটা এই কারণে সম্ভব হয়েছিল যে, তাঁর মন তখন কলা বা কলার খোসার দিকে ছিল না --- ছিল একমাত্র ভগবান ‘কৃষ্ণে’র দিকে৷ এই অবস্থাকে বলা হয় ‘‘কেবলা ভক্তি’’৷ আর এই অবস্থা বেশীক্ষণ স্থায়ী হলে হয় ‘কৈবল্য সমাধি’৷ ‘বাবা নাম কেবলম্’ কীর্ত্তন ক্রমশঃ মানুষের মনকে সেই কেবলা ভক্তির দিকে নিয়ে যায়৷

সাধনার দ্বারা মানুষ তার নিজের প্রচেষ্টায় ভগবানের দিকে এগিয়ে যায়৷ কিন্তু সেই অগ্রগতি দ্রুততর হয় যদি সাধনা করার আগে কীর্ত্তন করে নেওয়া হয়৷ কারণ কীর্ত্তনে ভগবান ভক্তের কাছে এগিয়ে আসেন, কীর্ত্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর দিব্য রাজধানী স্থাপন করেন৷ কারণ তিনি তো কথা দিয়েছিলেন---

‘‘নাহং তিষ্ঠামি বৈকুন্ঠে যোগিনাং হৃদয়ে ন চ৷

মদ্ভক্তা যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্ঠামি নারদ৷৷’’

নারায়ণ নারদকে এই কথা বলেছিলেন৷ ‘নার’ শব্দের একটি অর্থ নীর অর্থাৎ জল, দ্বিতীয় অর্থ প্রকৃতি, প্রকৃতির যিনি আশ্রয় (অয়ন) তিনি হলেন নারায়ণ৷ পরমপুরুষের আর এক নাম নারায়ণ৷ ‘নার’ শব্দের অপর অর্থ হলো ‘ভক্তি’ ‘নার’ অর্থাৎ ভক্তি যিনি বিতরণ করেন তিনি হলেন নারদ৷ নারদকে নারায়ণ বলেছেন--- আমি বৈকুন্ঠে থাকি না৷ পুরাণে বৈকুন্ঠ হলো তথাকথিত শব্দের সবচেয়ে উঁচু জায়গা৷ আসলে স্বর্গ ও নরক বলে আসলে কিছুই নেই ৷ অনুচিত কাজ করলে মানুষ কুন্ঠিত হয়৷ অর্থাৎ তার মন সংঙ্কুচিত হয়৷ সেই সংকোচ যখন থাকে না অর্থাৎ কুন্ঠা যখন থাকে না --- সে তখন বৈকুন্ঠ হয়ে যায়৷ ভক্তর হৃদয়ই যথার্থ বৈকুণ্ঠ৷ যাইহোক এখানে নারায়ণ বলছেন, তিনি তথাকথিত বৈকুন্ঠে থাকেন না৷ এমন কি যোগিদের হৃদয়েও থাকেন না৷

শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী বলছেন, ‘‘যোগীদের ব্যাপারটা কী? ‘যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধ্’৷ সমস্ত চিত্তবৃত্তিকে নিরুদ্ধ করাই যোগের প্রক্রিয়া৷ এই ধরণের অর্থ নিলে যোগীর হৃদয় দুয়ার তো বন্ধ৷ পরমপুরুষ তাতে ঢুকবেন কী করে? তাই বলছেন, ‘যোগীনাং হৃদয়ে ন চ’৷ পরমপুরুষের প্রতি প্রেম ভালবাসা না থাকলে সে হৃদয় তো নীরস৷ তাই সে শুঙ্ক কঠোর হৃদয়ে পরমপুরুষ অধিষ্ঠান করেন না৷ পরমপুরুষের সবচেয়ে প্রিয় অধিষ্ঠান-স্থল হ’ল ভক্ত-হৃদয়৷’’

তাই কীর্ত্তন করার পরে সাধনা করলে অথবা ঘুরিয়ে বললে সাধনা করার আগে কীর্ত্তন করলে সহজেই ভগবানকে পাওয়া যায়৷

এখানে একটা প্রশ্ণ আসে যে, তিনি তো সবত্র বিরাজমান৷ তিনিতো এখানে ওখানে, অনলে-অনিলে , ধূলিকণায় সর্বত্র বিরাজমান৷

 তিনি যে আছেন , সেই উপলদ্ধি আমাদের সহজে হয় না৷ সেই পরম পুরুষকে পেতে গেলে, জানেেত গেলে কী করতে হবে? ---না, নিজের মনটকে ভালো ভাবে মন্থন করতে হবে৷ এই মন্থনটা কী রকম? কিভাবে তা করতে হবে? দুধের মধ্যে যেমন মাখন লুকিয়ে থাকে পরমপুরুষও তেমনি আমাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছেন৷ তাই আমাদের মনকে মন্থন করে মাখন সদৃশ পরমপুরুষ অর্থাৎ ভগবানকে পেতে হবে, জানতে হবে৷ এই যে মন্থনটা কিভাবে করতে হবে৷ কীর্ত্তন ও সাধনার দ্বারা মনকে শান্ত অচঞ্চল করতে হবে৷ মন যদি ধীর, স্থির, অচঞ্চল, শান্ত সংহত না হয় তাহলে কিছুই হবে না৷ তাই কিছুক্ষণ এক মনে দুই হাত তুলে , মনকে সহস্রার চক্রে একাগ্র করে’ কীর্ত্তন করলে পরমপুরুষ আমাদের মনের নিভৃত ভুবনে গোপনে চলে আসেন৷ এইখানেই কীর্ত্তনের মাহাত্ম্য৷ তাই সাধনা করার আগে কীর্ত্তন করুন৷ কীর্ত্তন করার পরে যদি সাধনা না করেন তাহলে, কীর্ত্তন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু ভক্তের মিলিত কীর্ত্তনের ঐকতানে ছন্দায়িত ইন্দ্রিয় সমূহ যার যার নিজস্ব ছন্দে কাজ করতে থাকবে৷ কীর্ত্তন করার কালে মন স্বাভাবিকভাবে উচ্চাবস্থা পআপ্ত হয়৷ এখন কীর্ত্তনের পর সাধনা না করলে মন সেই উচ্চাবস্থা থেকে সরে এসে অতি দ্রুত নীচে নেমে যাবে৷ কীর্ত্তনের পর যদি সাধনা করা হয়, তাহলে ভগবানের ভাবনায় নিবিষ্ট মন ভগবৎ ভাবনা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করবে না৷ সাধনা করার পরেও বহুক্ষণ ধরে মন ঈশ্বরমুখী হয়ে থাকবে৷ তাই ঈশ্বর প্রাপ্তির সহজ পথ হ’ল সাধনার আগে ভকিতভরে কীর্ত্তন করা৷ সেই কারণে আনন্দমার্গের প্রবক্তা ও প্রবর্তক শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী বহুল প্রচলিত কীর্ত্তন মন্ত্রের পরিবর্তন ও যুগপোযোগী করে ‘‘ বাবা নাম কেবলম্’’ অষ্টাক্ষরীয় সিদ্ধমন্ত্র প্রদান করেছেন ও এই মন্ত্রকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন৷ ফলে বিভিন্ন ধর্মমতাবলম্বী মানুষও এই কীর্ত্তনের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ‘বাবানাম কেবলম্’ কীর্ত্তনে যোগদান করে আনন্দলাভ করছেন৷