প্রাচীনকালের মানুষ জামার পকেট রাখত সাধারণতঃ দুটি কারণে৷ একটি কারণ ছিল শীতের সময় হাত দু’টোকে পকেটে ভরে এই ব্যথার জগতেও খানিকটা স্বর্গসুখ ভোগ করা আর দ্বিতীয় কারণ ছিল–টাকা–পয়সা বা যেসব নেশার জিনিস আর পাঁচ জনকে দেখানো যায় না সেগুলোকে লুকিয়ে রাখা৷ ইংরেজীতে যাকে ‘পকেট’ বলি ফার্সীতে তাকেই বলি ‘জেব’, ভাল বাংলায় ‘কোষ্ঠক’৷ উত্তর ভারতে এই ফার্সী ‘জেব’ শব্দটি আজও ভাল ভাবেই চলে–উর্দুতে তো চলেই৷ স্থানীয় লোকভাষাগুলিতে যেমন অঙ্গিকা, মৈথিলী, ভোজপুরী, মগহী, অবধী প্রভৃতি ভাষাতেও ‘জেব’ শব্দটি ভালভাবেই চলে৷
আমার ব্যষ্টিগত জীবনেও ‘জেব’ শব্দটি অতীতের এক সোণালী স্মৃতিতে মাখানো রয়ে গেছে৷ সে সময় আমাকে যিনি ফার্সী পড়াতেন তাঁর নাম ছিল মউলবী হিদায়েতুল্লা৷ মানুষটি ছিলেন বড়ই ভাল৷ আমাদের মুঙ্গের জেলা তথা অঙ্গদেশের সাধারণ মানুষ খুব সোজা ক্ষুদ্ধির হয়৷ তিনি তার ব্যতিক্রম ছিলেন না৷ তিনি ইংরেজী জানতেন না কিন্তু উর্দু, আরবী, ফার্সীতে ছিলেন সুপণ্ডিত৷ মাতৃভাষা অঙ্গিকা ছাড়া বাংলাও জানতেন৷ আমি তাঁর ছিলুম অত্যন্ত স্নেহের পাত্র৷ ক্লাসে সবাইকার সামনেই আমাকে ববুয়া (খোকা) বলে ডাকতেন৷ একবার পরীক্ষার পরে দেখা গেল আমি ফার্সীতে একশ’র মধ্যে একশ’ তিন নম্বর পেয়েছি৷ গোটা ইসুক্লে হল্লা...হৈ হৈ ব্যাপার....রৈ রৈ কাণ্ড৷ মওলবী সাহেব একচোখোমি করেছেন৷ একশ’র মধ্যে এক’শ তিন নম্বর দিয়েছেন৷ কেউ কেউ ক্ষললে–জানতুম, মওলবী সাহেব খুবই ভাল–এখন দেখছি একটু আদিখ্যেতাও করেন৷ একশ’ এর মধ্যে একশ’ তিন নম্বর কি দেওয়া যায়?
আমাদের ইংরাজী সাহিত্য ও ফোনেটিক্স পড়াতেন মিঃ বি সি মিটার৷ তিনি মউলবী সাহেবকে শুধোলেন–মওলবী সাব, ইয়ে’ আপনে ক্যা কিয়া? একশো মেঁ একশো তিন নম্বর আপনে কৈসে দিয়া? মিটার সাহেব মওলবী সাহেবকে কথাটা জিজ্ঞেস করেছিলেন স্কুলের মাসড্রিলের সময়ে অর্থাৎ সে সময়ে স্কুলের সমস্ত ছাত্র মাঠে জড় হয়েছিল মিলিত ড্রিল করবার জন্যে৷ মওলবী সাহেব কিছুমাত্র বিস্মিত হলেন না....বিন্দুমাত্র ঘাবড়ালেন না.....তিলমাত্র হতচকিত হলেন না৷ বরং তিনি জোর গলায় সবাইকে শুণিয়ে শুণিয়ে বললেন–মাটার সা’ব, ম্যাঁ ক্যা কহুঁ৷ বাচ্চা ইতনা উম্দা লিখা হৈ জো মেঁনে আপনে জেব সে তিনি লম্বর দে দিয়া৷