বাংলার ওপর হামলার প্রতিবাদে শিলচরে গণধর্ণা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

বিগত দূর্গাপূজার সময় রাজ্যের কয়েকটি স্থানে উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী সংঘটনগুলি বাংলায় লেখা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, হামলা ও হুমকির প্রতিবাদে আজ শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে গণ ধর্ণা কার্যসূচি পালন করা হয়৷ ধর্ণা চলাকালে সেখানে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্য, আইনজীবী অজয় রায়, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংসৃকতি সম্মেলনের গৌতম প্রসাদ দত্ত, আইনজীবী ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, সমাজকর্মী সাধন পুরকায়স্থ, প্রাক্তন বিধায়ক মৌলানা আতাউর রহমান মাঝারভূঁইয়া, নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত, হিউম্যানিটি ফাউণ্ডেশন-এর সভাপতি সিহাব উদ্দিন আহমেদ, প্রাক্তন পৌর সভাপতি তমালকান্তি বনিক, বিডিএফএর সভাপতি প্রদীপ দত্ত রায় প্রমুখ৷ বিক্ষোভ চলাকালে বক্তারা বলেন বিগত অক্টোবর মাসে, দুর্গা পূজার সময় নগাঁও, বিশ্বনাথ, ডিব্রুগড় প্রভৃতি স্থানে কয়েকটি পূজা মণ্ডপে বাংলা ভাষায় লেখা পূজা সম্পর্কিত ফেস্টুন, ব্যানার উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী সংগঠন যথাক্রমে লাচিত সেনা,আসু,অসমীয়া যুব মঞ্চ ইত্যাদির সদস্যরা বেনার ছিঁড়ে ফেলে ও টেনে নামিয়ে দিয়ে পূজা কমিটির বঙ্গভাষী মানুষদের ধমক দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে৷ স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের ও সার্বিকভাবে দেশের বাঙ্গলাভাষী মানুষ এতে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন৷

বক্তারা এও বলেন যে কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন নগরে বিভিন্ন সূত্রে বসবাসকারী অসমীয়াভাষী মানুষ অত্যন্ত আনন্দের সাথে বিহু উৎসব পালন করেন ও সর্বত্রই অসমীয়া ভাষায় ব্যানার ইত্যাদি লাগানো হয়৷ বরাক উপত্যকা সহ অসমের বাঙালী প্রধান অঞ্চলগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়৷ কোথাও কখনো অন্য ভাষাভাষী মানুষেরা অসমীয়া ভাষায় লিখিত ওইসব ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন নি৷ বাঙলাভাষী প্রধান কলকাতায়, গুজরাটি প্রধান আহমেদাবাদ অথবা তামিল প্রধান চেন্নাইয়ে ‘বিহুর ব্যানার অসমীয়া ভাষায় লেখা হয়’-এতে কি কেউ প্রশ্ণ তুলেছেন?

তারা বলেন বাংলা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ভাষা হিসেবে পৃথিবী জুড়েই সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত ও স্বীকৃত৷ ভারতের সংবিধানের ৩৪৭ নম্বর ধারায় দেশে ভাষার বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতাকে স্বীকার করে নিয়ে সেগুলির নিরাপত্তা, সংরক্ষণ ও উন্নতি সাধনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে৷ ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী অসমের ৩.১২ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে কম বেশী এক কোটি বাংলাভাষী মানুষ বসবাস করেন৷ সেই হিসাবে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা বাংলা৷ এই প্রেক্ষিতে বাংলাভাষী মানুষেরা যদি দুর্র্গেৎসবের মতো এক আবেগপ্রবণ পরিবেশে বাংলা ভাষায় ব্যানার ব্যবহার করে থাকেন, তা হলে সেটা কোন যুক্তিতে অপরাধ৷

বক্তারা এও বলেন যে অসমীয়াভাষী লক্ষ লক্ষ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এ ধরণের উশৃঙ্খল আচরণকে সমর্থন করেন না, বরং এসব ঘৃণার চোখে দেখেন৷ বরাক উপত্যকার সকল ভাষাভাষী মানুষ বাংলা ভাষার উপর অন্যায় আক্রমণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান এবং এসব ঘটনার সাথে জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান৷ ধর্ণা শেষে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নিকট সকল মানুষের নিরাপত্তা ও নাগরিক, সামাজিক , ভাষিক, সাংবিধানিক অধিকার সমূহ সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে একটি  স্মারকপত্র প্রদান করেন৷ এছাড়াও বাংলা সহ রাজ্যের সমস্ত ভাষাভাষী মানুষের সংবিধান প্রদত্ত সমস্ত অধিকারগুলি নস্যাৎ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের দীর্ঘদিনের সদ্ভাব ও সৌহার্দ্যকে যারাই বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উত্থাপন করেন৷ যাতে রাজ্যের সকল মানুষ তাদের ভাষা, কৃষ্টি, সাহিত্য, নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন৷

স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেন কিশোর কুমার ভট্টাচার্য, রূপম নন্দী পুরকায়স্থ, সীমান্ত ভট্টচার্য, মধুসূদন কর, রফিক আহমেদ,, সমর পাল, রঞ্জিত চৌধুরী, খাদেজা বেগম লস্কর, নবদ্বীপ দাস, অরুন কুমার দে, আশীষ ভৌমিক, কৃষাণু ভট্টাচার্য, চিত্রভানু ভৌমিক, নিখিল পাল, রাজু দেব, মৌমিতা বিশ্বাস, মধুমিতা রায়, রথীন্দ্র দাস, ঋষিকেশ দে, জয়দীপ ভট্টাচার্য, প্রমোথেশরঞ্জন দেব, হায়দার হোসেন চৌধুরী, অরুন্ধতী গুপ্ত, মজলুম হক মজুমদার৷