ত্রিপুরার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বিশ্বের জাঠ ও পঞ্জাবিদের জাতীয়তা বোধ দেখে আমি ব্যষ্টিগতভাবে গর্ববোধ করছি৷ এর পিছনে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ধারণাটি হলো ভারতের স্বাধীনতায় বাঙালীর অবদান যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি পঞ্জাবিদের অবদানও কম নয়, অন্যদিকে ভারতের স্বাধীনতায় রাজনৈতিকভাবে বিভাজন হয়েছিল এই দুটি রাজ্য৷ ভারত ভাগের বলি হওয়া পঞ্জাবিদের পূর্নবাসন হয়েছিল পঞ্জাব, হরিয়ানা উত্তরখণ্ডের একটি লাগোয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে৷ এরফলে তাদের ভাষা সংস্কৃতি ও জাত্যভিমান রক্ষা করতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়নি৷ অন্যদিকে অর্থনৈতিক পূর্ণবাসনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে কোন খামতি ছিলো না৷ যে জাতির জীবনে অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা পূর্ণ মাত্রায় গ্যারান্টির সুষ্টুভাবে পেয়েছে তাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা ও ভাবনার বিকাশ ঘটবে ও প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবেই৷ অন্যদিকে বাঙালীদের আত্মত্যাগ ও বলিদানের কোন মূল্যই দেয়নি ভারতীয় সরকার কারণ তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালী জাতিসত্তাকে ভয় করতো তাদের বৈপ্লবিক কর্মতৎপরতা ও চেতনার জন্য৷ তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালীকে পূর্ণবাসনের নামে নানা রকমের অজুহাতে বাঙালী জাতিসত্তাকে বার বার অপমান করছে৷ যেমন বৈধ ও অবৈধ উদ্বাস্তু সিলমোহর দিয়ে, দেশভাগের কষ্টকে গুরুত্ব না দিয়ে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে শুখা অঞ্চলে ও বনাঞ্চলের, এছাড়াও আন্দামান নিকবরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে দায় সারা ভাবে সাময়িক কিছু খয়রাতি দিয়ে হাত পা ঝেড়ে ফেলে৷ অথচ সেই সময় বাঙালীস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কোন লোকবসতি ছিলো না৷ আজ সেই সকল অঞ্চলে অবাঙালীরা বলপূর্বক অনুপ্রবেশ করে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের হাতিয়ার হয়ে বসবাস করছে ও নানা ধরনের অসামাজিক কাজকর্ম করে চলেছে৷
পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত গৃহহারা বাঙালীরা আজও ভারতের ৭২ বছর পরেও পূর্ণাঙ্গ ভাবে ভারতীয় হতে পারছে না৷ তাদেরকে ভারতের নাগরিক মানা হচ্ছে না৷ এর একটি বড় প্রমাণ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী বলেছেন বাঙালীদের উইপোকার মতন মারবেন ৷ কত বড় সাহস৷ ভারতের স্বাধীনতা যে জাতিটার সবচেয়ে বেশী অবদান তাদের প্রতি এত ঘৃণা৷ অথচ যিনি বলেছেন তাদের জাতীয়তাবোধ মানেই শোষণ আর শাষণ৷ ভারতের স্বাধীনতায় তার রাজ্যের কতজন শহীদ হয়েছে অথবা স্বাধীনতার পর কতজনকে চীন বা পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে মারা গেছে? এরাই তুলছে সারা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বাঙালীরা আজ বহিরাগত, ঘুসপেটিয়া, অনুপ্রবেশকারি, শরণার্থী---বিভিন্ন তাদের উপাধি৷ তৎকালীন আমলের ভারতের সরকার বিভিন্ন প্রদেশে যাদের পূর্নবাসন দিয়েছে সেইসব প্রদেশেও আজ আওয়াজ উঠেছে--- বাঙালীরা ভারত ছাড়ো৷ অসমের এক মন্ত্রী যিনি ও তার পূর্ব পুরুষেরা মঙ্গোলীয় কোন দেশ থেকে খাদ্যের অভাব এসেছিলো৷ ব্রিটিশরা বাঙালীস্তান অংশ কেটে অসম নামে একটি রাজ্য পত্তন করে ছিলো৷ আজ সেই বিদেশী অসমিয়ারা বাঙালী জাতিসত্তাকে অপমান করে বলছে৷ বাঙালী খচ্চর জাতি৷ অথচ সারা ভারতের সকল বাঙালীকে এমন অপমান ও আঘাত করছে অথচ কোন বাঙলার সুশীল (বুদ্ধিজীবি) সমাজের কোন প্রতিক্রিয়া দুরের কথা, প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে না৷ তবে ‘‘আমরা বাঙালী’’ একমাত্র দল যে শুধু প্রতিবাদ করেই থেমে থাকে নি, বারাসাত আদালতে ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি কেইস করেছেন৷ কেন বাঙালী জাতি আজ নীরব ও বধির হয়ে আছে? ভারতের বিট্রিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালীর ক্ষাত্রতেজ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা জেনে গেছে, তাই এই জাতিকে ব্রিটিশদের মত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ভাবে, ধীরে ধীরে নানাভাবে শোষণ করে অবক্ষয়ের পথে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত করেছে৷ এছাড়া বাঙালীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার আর কোন পথ নেই৷ তাই বাঙালীকে এক জায়গায় রাখলে এরা আন্দোলন মুখী হয়ে পড়বে তাই স্বাধীনতার পর পঞ্জাবিদের মত একই জায়গায় বসতি না দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান থাকে যারা এসেছিলেন তাদের নানা প্রদেশে ছড়িয়ে দেয়, সেখানে তারা নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়, এছাড়াও তাদের ওপর অর্থনৈতিক নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়৷ এরফলে অন্ন জোগাড় করতেই তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে, তাই তাদের মানসিক বিকাশের, উন্নতির কোন সুযোগ পায় না৷ যারা পশ্চিম বাংলায় থাকলো তারা নানা স্থানে ঝুপড়ি করে বসবাস করতে বাধ্য হয়৷ এদের মধ্যে মানসিক শোষণ হওয়ার ফলে বৈপ্লবিক চেতনাকে হারিয়ে ফেলে৷ এর থেকে বাঙলায় বড় সর্বনাশ হয়েছে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের দ্বারা৷ বাঙালীকে নানান কিছু পাইয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক ফন্দি নিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরী করা ছাড়া আর কিছুই করেনি ভারতের কংগ্রেস সিপিএম বিজেপি ও তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ৷ যে যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে পরিবর্তনের বা বৈপ্লবিক চেতনা পাওয়া যায় তাদের বেশীর ভাগই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই আসে৷ আজ বাঙালীর রাজনৈতিক নেতারা সেই যুব সমাজকে সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিকভাবে সচেতন না করে তাদের মধ্যে হিন্দি অসংস্কৃতি, নাচ, গান মদসহ নানা রকমের নেশার বস্তু হাতে তুলে দিয়ে সেই যুবসম্প্রদায়কে অন্ধকার জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যাতে তারা বৈপ্লবিক চেতনা হারিয়ে ফেলে৷ আর মীরজাফর বাঙালীদের রাজনৈতিক স্বার্থকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলিকে ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷
কিন্তু এইভাবে বাঙালী আর কতকাল ঘুমিয়ে থাকবে? আজ সারা বাঙালীস্তানের বাঙালীরা জীবিকার তাগিদে সকাল সন্ধ্যা দিনপাত করতে গিয়ে তাদের মানসিক ও বৈপ্লবিক চেতনাকে তৎসহ প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হারিয়ে ফেলেছে৷
‘‘আমরা বাঙালী’’ নিরলসভাবে সারা বাঙালীস্তানের এই যুবসম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে টেনে তুলতে, মানসিক চিন্তা ভাবনা উন্নত করতে নানা ভাবে কাজ করে চলছে৷ আমরা বাঙালী, বাঙালী ছাত্র যুব সমাজ সারা বাঙালীস্তান জুড়ে এই যুবসম্প্রদায়কে সৎপথে এনে শোষণমুক্ত বাঙালীস্তান গড়তে প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগী তত্ত্ব)-এর প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় মানব জীবনের সাধুতা, সরলতা, তেজস্বীকতা ও নৈতিকতায় প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াস করে চলছে৷ অর এর ফলে বাঙালী জাতিসত্তা আবার তার বৈপ্লবিক চেতনায় প্রতিষ্ঠা পাবার সাথে সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৎব্যবহার করে ও বাঙালীর বিরুদ্ধে অসুরিক মন্তব্য বন্ধ করতে এগিয়ে আসবে৷
- Log in to post comments