গত ২৯শে ফেব্রুয়ারী ও ১লা মার্চ বাঙালী বাহিনীর রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় কাঞ্চনপুর দশদা কমিউনিটি হলে৷ সম্প্রতি উগ্রপন্থি হামলায় কাঞ্চনপুর এলাকার শতাধিক বাঙালী পরিবার নিঃস্ব হয়ে ঘরবাড়ী ছেড়ে আনন্দবাজার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে৷ ‘আমরা বাঙালী’ কর্মী ছাড়া কোন রাজনৈতিক দল ও সরকার এখনও পর্যন্ত অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু করেনি৷ সরকার বরং উগ্রপন্থিদের পাশে দাঁড়ানোয় স্থানীয় মানুষ আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে৷ এই অবস্থায় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে ও জনমনে সাহস জোগাতে পথে নাবে ‘বাঙালী বাহিনী’৷
দুদিনব্যাপী সম্মেলনে বাঙালী জনগোষ্ঠীর বর্তমান দুরাবস্থার কারণ, সিএএ, এন.আর.সির ভয়াবহতা ও সংঘটনের আশুকর্তব্য বিষয়ে আলোচনা হয়৷ দু’দিনের সম্মেলন শেষে এক বিশাল শোভাযাত্রা দশদা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ থেকে বার হয়ে দশদা বাজার, রাধামাধবপুর, সাতনালা, ও খানছড়া প্রভৃতি স্থান হয়ে প্রায় ১৫ কিমি পথ পরিক্রমা করে কাঞ্চনপুর সানরাইজ বাজার সংলগ্ণ স্থানে শেষ হয়৷
দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় এত বিপুল সংখ্যক যুবকের সমাবেশ দশদা কাঞ্চনপুরের মানুষ আগে দেখেনি৷ বাঙালী বাহিনীর পোষাকে সজ্জিত কয়েক হাজার যুবকের ঘুরে দাঁড়ানো অনড় মনোভাব আতঙ্কিত জনমনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে৷
শাসক দলের প্রচ্ছন্ন মদতে কিছু উগ্রপন্থির হামলা ও হুংকারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছিল৷ এদিনের পথ পরিক্রমার পর জনগণ অনেকটা ভয়মুক্ত হবে বলে মনে করেন বাঙালী বাহিনীর নেতৃবৃন্দ৷
দীর্ঘপথ পরিক্রমার পর কাঞ্চনপুর বাজারে এক জনসভা হয়৷ সভায় বক্তব্য রাখেন ‘আমরা বাঙালী’ সংঘটনের ত্রিপুরা রাজ্য সচিব গৌরাঙ্গরুদ্রপাল, অ্যাডভোকেট ও রাজ্যনেতা গৌতম ঘোষ, ছাত্রযুবনেতা রঞ্জিত বিশ্বাস প্রমুখ নেতৃবৃন্দ৷ বক্তাদের অভিযোগ কাঞ্চনপুরে উগ্রপন্থি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালীদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে সরকার৷ যে বাঙালীর রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ সেই বাঙালী জনগোষ্ঠীকে এন.আর.সি, সিএএ- প্রয়োগ করে দেশছাড়া করতে চাইছে বাঙালী বিদ্বেষী হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী সরকার৷ বাঙালী জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধের আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ৷ তাঁদের স্পষ্ট কথা-ত্রিপুরার বুকে একটি বাঙালীর ওপর আঘাত হানলে ‘আমরা বাঙালী’ ছেড়ে কথা বলবে না৷
ত্রিপুরার মানুষ এই ধরনের পথ পরিক্রমা আগে দেখেননি ৷ এই পথ পরিক্রমা বাঙালীর মনে আশার সঞ্চার করেছে৷ দীর্ঘ বঞ্চনা ও অত্যাচারের পর ত্রিপুরার বাঙালী এবার রুখে দাঁড়াতে পায়ের নীচে শক্ত জমি খঁুজে পেয়েছে৷ হার না মানা হাজার কয়েক যুবকের দৃঢ়চেতা অঙ্গীকার বাঙালীর চেতনা ফেরাবে এমনটাই মনে করছে ‘আমরা বাঙালী’ নেতৃবৃন্দ৷
চড়িলাম থেকে শ্রী শংকর দাসের সংযোজন---
বাঙালী জাতির ওপর অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের প্রতিবাদে বাঙালী ‘স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী’র দশদা থেকে কাঞ্চনপুর দীর্ঘ পনেরো কিমি পদযাত্রা হ’ল ১লা মার্চ রবিরার দিন৷ বিশাল সংখ্যক যুবকের স্বতঃস্ফূর্ত সেই পদযাত্রা জনমানসে বিপুল সাড়া ফেলে৷
ঠিক তার পরের দিন সোমবার তড়িঘড়ি করে বিজেপি সরকারের প্রশাসন বহিরাগত উদ্বাস্তুদের দ্বারা আক্রান্ত ৯৩টি বাঙালী পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ঘরে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ অথচ প্রায় তিনমাস যাবৎ এই পরিবারগুলো নিরন্ন, রোগে ভূগে অসহায়ের মতো পড়ে ছিল৷ তারা আন্দোলনে নাবতে বাধ্য হয়েছিল৷ তবুও কারোর কোনো হেলদোল ছিল না৷ কিন্তু যেই বাঙালী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর রোডমার্চ সারা ত্রিপুরার বাঙালীকে সজাগ করে তুলল অমনি বিজেপি সরকারের প্রশাসনের টনক নড়ল৷ একেই বলে ‘ঠেলার নাম বাবাজী’৷