গত ১লা বৈশাখ তিলজলা আনন্দমার্গ আশ্রমেরজাগৃতি ভবনে সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী ‘স্পান্দনিকে’রউদ্যোগে বাংলা বর্ষবরণঅনুষ্ঠানসাড়ম্বরেপালিতহয়৷ অনুষ্ঠানেরপ্রথম পর্বে সকালে৩ ঘন্টাব্যাপীঅখন্ড কীর্ত্তনের পর মিলিতসাধনা অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপরপ্রাউট-প্রবক্তাশ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার প্রদত্ত ‘বাংলার নববর্ষ’ শীর্ষক প্রবচনটি পাঠকরে শোনান গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য৷ এই প্রবচনে প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয়শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার বাংলা ও বাঙালীর ইতিহাস সম্পর্কে বলেন বাঙালী জনগোষ্ঠীর ইতিহাস তিন হাজার বছরের বেশি৷ কারণ অথর্ব বেদে বাঙলার উল্লেখ আছে৷ তিনি বলেন, ঋগ্বেদ ১৫ হাজার থেকে ১০ হাজার বছর পূর্বে রচিত হয়েছে৷ যজুর্বেদের রচনা ১০ হাজার থেকে পাঁচ হাজার বছর পর্যন্ত৷ আর অথর্ব বেদ ৫ হাজার থেকে ৩ হাজার বছরের পুরোনো৷ তাছাড়া বাঙলার নিজস্ব পোষাক আছে, মেয়েদের শাড়ী পরবার নিজস্ব পদ্ধতি আছে, যা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন, বাঙলায় নিজস্ব পঞ্জিকা আছে, নিজস্ব লিপি আছে, নিজস্ব উচ্চারণ রীতি রয়েছে৷ প্রাউট-প্রবক্তা বলেছেন এত গুলো বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর আর কোনো জনগোষ্ঠীর নেই৷
প্রাউট-প্রবক্তা আরও বলেছেন,বাঙলার সন-সাল বাঙলার রাজা শালিবাহনের প্রবর্তন৷ রাজা শালিবাহানকে এই নূতন পঞ্জিকা রচনায় সাহায্য করেছিলেন প্রাচীন দন্ডভুক্তির (বর্তমানে যাকে মেদিনীপুর বলা হয়) প্রসিদ্ধ জ্যোতিষী জয়ন্ত পাণিগ্রাহী৷
প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানের পর জলযোগ ও তারপরে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়৷ এই পর্বে আয়োজিত বিশেষ সাংস্তৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রভাত সঙ্গীত অবলম্বনে উদ্বোধনী নৃত্য প্রদর্শন করে নরেন্দ্রপুর আনন্দমার্গ শিশুসদনের শিশুশিল্পীবৃন্দ ওস্পান্দনিকের পক্ষেস্বাগত ভাষণ দেন শ্রী শুভেন্দু ঘোষ৷ তিনি সবাইকে নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানান৷ এরপর প্রভাত সঙ্গীত(সুরের ধারাএগিয়ে চলে..., নয়নে থাক প্রভু...) পরিবেশন করেন সুরশ্রী মাইতি৷ সঙ্গে তবলায় সঙ্গতকরেন সৌভিক বারিক৷ তারপর শ্রী বকুলচন্দ্র রায় তাঁর ভাষণে বলেন, নববর্ষ ব্রত স্মরণের দিন৷ তিনি বলেন, ঐতিহ্যপূর্ণ বাঙালী জাতির তথা বাঙালীর সংস্কৃতির আজ নানান দিক থেকে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে৷ আজ এই অবক্ষয় রোধ করে বাঙলা ও বাঙালীর ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি --- সর্বক্ষেত্রে নবজাগরণ আনতে সমস্ত বাঙালীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে চলতে হবে৷
অনুষ্ঠানে প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করেন, অবধূতিকা আনন্দ অভীষা আচার্যা, মোহন অধিকারী, ঝংকৃতা সরকার, অরুণিমা ভট্টাচার্য, অংশুমান ভট্টাচার্য প্রমুখ৷
এরপর আচার্য সর্র্বত্মানন্দঅবধূত তাঁর ভাষণে বলেন, মহান দার্শনিক ঋষি শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার তার ‘বাংলা ও বাঙালী’ গ্রন্থে বাঙলাও বাঙলীর বহু অজানা ইতিহাস ও ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরেছেন৷ আজ এক ভয়ানক অবক্ষয়ের যুগে বাঙলার জাতিসত্তা বোধের নবজাগরণ আনতে এই ‘বাঙলা ও বাঙালী’ গ্রন্থটি প্রতিটি বাঙালীর পাঠ করা উচিত৷ তিনি তাঁর গভীর আশা ব্যক্ত করেন, এই ‘বাংলা ও বাঙালী’ গ্রন্থটি বাঙালীর জাতিসত্তাবোধকে পুষ্ট করবে ও বাংলাকে নবজাগরণের বাহন হিসেবে কাজ করবে৷
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘নববর্ষবরণ’ গীতি আলেখ্য৷ এটির রচনায় ছিলেন বকুল চন্দ্র রায়, নৃত্য নির্দেশনায় অক্ষি মুখার্জী ও দেবজিৎ পাল৷ অংশগ্রহণে অন্তরা মুখার্জী, অনুসূয়া দাস, রুমেলা আদক, কঙ্গনা শীল, দেবজিৎ পাল ও অক্ষি মুখার্জী৷ এই গীতি আলেখ্যটি দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে৷ এরপর মিলিত প্রীতিভোজের পর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রী গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য৷