বার্ণ স্ট্যাণ্ডার্ডের মত কারখানাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে রাজ্য সরকার, শ্রমিক ও জনগণ সজাগ হোন

লেখক
প্রভাত খাঁ

একি ধরণের গণতন্ত্র! একি ধরণের জনসেবা! কেন্দ্রীয় সরকার তো আর্থিক দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গকে শ্মশানে পরিণত করার কাজে অতীতের সকল সরকারকে ছাপিয়ে গেছেন! ভারত বিখ্যাত বার্ণ স্টণ্ডার্ড কারখানাকে বন্ধের নোটিশ জারী করা হয়েছে৷ কারখানার সি এম ডি মহম্মদ আজাদ কারখানায় বন্ধের নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছেন৷ শ্রমিকগণ এই কাজে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ৷ বর্তমানে চরম আর্থিক মন্দার বাজারে শ্রমিকরা অত্যন্ত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন৷

বর্তমানে শ্রমিকদের রুখে দাঁড়াতে হবে বেঁচেথাকার জন্যে৷ কারখানাকে চালু রাখতে কাজ চালিয়ে যেতে হবে৷ প্রয়োজনে শ্রমিকগণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে সমবায পদ্ধতিতে কারখানাকে রক্ষা করুন৷ সকল শ্রমিক নেতা সিটু, আই এন টি ইউ সি প্রভৃতি একযোগে কেন্দ্রে তানাশাহীর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করার পথেই এগোচ্ছেন৷ কারখানাটিকে বন্ধের জন্যে আসানসোলের বিজেপি নেতা ও সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কেই দায়ী করেছেন বিরোধী দলগুলির ইয়ূনিয়ন নেতৃবৃন্দ৷

গণতান্ত্রিক সরকারকে স্মরণে রাখতে হবে বর্তমান সমাজব্যবস্থায় পুরাতন চিন্তাধারাকে নিয়ে বসে থাকলে চলবে না৷ শ্রমিক নিছক উৎপাদনের ফ্যাক্টার নয়৷ হাজার হাজার নাগরিক সারাটি জীবন ঘাম ঝরিয়ে ইষ্পাত শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রেখে দেশের আর্থিক উন্নয়নের কাজ করে গেল৷ হঠাৎ কারখানা বন্ধের নোটিশ দেওয়ায় দীর্ঘ ৭০ বছরের গণতন্ত্রের মুখে যে ভয়ানক এক থাপ্পড় মারা হ’ল সেটা কি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার নজির নয়? কিসের কারণে সরকার বড় বড় অফিসার ও সরকারী কর্মচারিদের বেতন লক্ষ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে চলেছেন! সাংসদদের সাম্মানিক অর্থ বাড়িয়ে দেশের হত-দরিদ্র জনগণের কাছে  কিসের নজিরটা সৃষ্টি করেছেন!

দেশের অর্থনৈতিক ভিত দাঁড়িয়ে আছে কর্ষক ও শ্রমিকদের রক্তজল করা পরিশ্রমের ওপর৷ সেই শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে মন্দার বাজারেও৷ আর সেই শ্রমিকদের উৎসাহ দিতে হবে যাতে উৎপাদন ক্ষেত্রে আর্থিক মন্দাকে মোকাবিলা করা যায়৷ প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক ভাবনাকে উৎসাহ দিয়ে তাদের সঙ্গে বসে তাদের অংশীদার করে তাদের আন্তরিকভাবে মর্যাদা দিয়ে উৎপাদনের হাল ফেরাতে হবে৷

আমরা বর্তমান নোংরা দলতন্ত্রের রাজনৈতিক কারসাজির তীব্র প্রতিবাদ জানাই৷ সবার ওপর মানুষ, বিশেষ করে দেশের মর্যাদা সম্পন্ন নাগরিকগণ৷ কারখানা বন্ধ হলে তারা পরিবারের লোকজনকে নিয়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়বেন৷ যেটা মনে করি গণতন্ত্রের শাসন ব্যবস্থার কলঙ্ক বিশেষ৷ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এই গণতন্ত্র এমনই দুর্নীতিগ্রস্ত যা কহতব্য নয়৷ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্থ৷ ইংরেজ আমলে কলিকাতা ছিল সারা ভারতের রাজধানী৷ আর অখণ্ড বাঙলা ছিল ভারতের রাজ্যগুলি প্রধান৷ এখানে তাই ইংরেজ আমলে শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি হয়৷ আধুনিক যুগের নবজাগরণ ও শিল্প-বিপ্লব হয় সর্বপ্রথম এই বাঙলায়৷ বার্ণ স্ট্যাণ্ডার্ড ছিল সেই শিল্প বিপ্লবের যুগের স্মরণীয় শিল্প কারখানা৷ তখন শ্রমিকগণ এখানে কাজ করতেন সম্মানের সঙ্গে৷ শ্রমিক ইয়ূনিয়ন ছিল প্রকৃত শ্রমিক কল্যাণের জন্যে৷ ইয়ূনিয়নের পরিচালকগণ ছিলেন মনেপ্রাণে শ্রমিকবন্ধু৷ সেদিন নোঙরা রাজনৈতিক দলীয় নীতির বালাই ছিল না৷ তবে ইংরেজ শাসনের অবসানের পর যে দেশীয় সরকার আসে তাতে যে দল ক্ষমতায় আসত সেই দলের হোমরা-চোমরাগণ শ্রমিকদের বোটব্যাঙ্কে নিজেদের অধিকার বজায় রাখতে ইয়ূনিয়ন তৈরী করতে থাকেন৷ ফলে ইয়ূনিয়নের সংখ্যা যেমন বাড়ে তেমনই বিরোধীও বাড়ে ফলে মালিকের বশংবদ অনেক ইয়ূনিয়ন হয়ে যায়৷ স্বভাবতই অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ্ হত৷

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে তাদের  দলীয় রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করতেই মনে হয় কারখানায় তালা ঝুলিয়ে অশান্তি পাকাবার ব্যবস্থা করছে৷ এই রাজ্যে বিরোধীদের বার্ণ স্ট্যাণ্ডার্ডে যাতে তালা না ঝোলে সেদিকে নজর দেওয়াটা জরুরী৷ অন্যদিকে শ্রমিকরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান৷ এটা শ্রমিকভাইদের বেঁচে থাকার লড়াই৷ সমস্ত শ্রমিকশ্রেণী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্মরত ভাইয়েরাও এদের পাশে দাঁড়িয়ে এদের বাঁচার আন্দোলনকে জোরদার করুন৷ যারা পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক সংকটকে আরো সমস্যা-সংকূল করে তুলতে ষড়যন্ত্র করছে তাদের সম্বন্ধে সচেতন হোন৷

শ্রমিক ভাইগণকে স্মরণে রাখতে হবে যে মেকী রাজনৈতিক স্বাধীনতাতে পেট ভরে না৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা পশ্চিমবাঙলার বড় বড় কারখানাগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷ ফলে  প্রচণ্ড বেকার সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে৷ তাই সারা রাজ্যকে প্রতিবাদে অংশ নিতে হবে৷ আশা করি রাজ্য সরকারও এ ব্যাপারে সজাগ হবেন ও কলকারখানাগুলিকে খোলা রাখতে ও উৎপাদন সচল করতে জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসবেন৷