পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করার আয়োজন চলছে৷ বর্ষশেষের বিদায়লগ্ণ ঘনিয়ে এসেছে৷ নতুনবর্ষকে বরণ করতে সবে নবসাজে সেজে উঠেছে৷ পিছনের দিকে ফিরে তাকাবার সময় নেই৷ যা গেছে তা যাক্৷ কিন্তু যাক বললেই কি ছেড়ে আসা যায়! নতুনের আকর্ষণ যত শক্তিশালীই হোক পশ্চাতের বন্ধনটাও দুর্বল খুব নয়৷ বেশীরভাগ মানুষের এই দুইয়ের পাকে পড়ে জীবনের অনেকটা সময়ই বৃথা চলে যায়৷ বাজে কাজে, বাজে কথায়, বাজে ভাবনায় আমাদের জীবনের বেশীর ভাগ সময় পার করে দিই৷ সময় তো একটি মানসিক পরিমাপ, পল-অনুপল, সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা দিন, সপ্তাহ মাস বছর যুগ-সময়ের হিসাব রাখা যায়, সময়কে ধরে রাখা যায় না---
‘‘দিন যায় ক্ষণ যায়
সময় কাহারো নয়---
বেগে ধায় নাহি রয় স্থির
আয়ু যেন পদ্মপত্রে নীর৷’’
সময়ের স্ত্রোতে মানুষের ভেসে চলা খুব দীর্ঘ নয়, বড় সংক্ষিপ্ত৷ এই সংক্ষিপ্ত স্রোত রেখাকে মানুষ দীর্ঘ করতে পারে একমাত্র কর্মের দ্বারা, ত্যাগের দ্বারা, সাধনার দ্বারা৷ রক্ত মাংসের শরীর একদিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু মানুষতো শুধু রক্ত-মাংসের শরীর নয়৷
‘মোর নয় শুধুমাত্র প্রাণ
সর্ববিত্ত রিক্ত করি যার হয় যাত্রা অবসান৷
যাহা ফুরাইলে দিন শূন্য অস্থি দিয়ে শোধে
আার নিদ্রা শেষ ঋণ৷
যে আমার সত্য পরিচয়
মাংসে তার পরিমাপ নয়৷
পদাঘাতে জীর্ণ তাহ নাহি করে দণ্ড-পল গুলি
সর্বস্বান্ত নাহি করে পথপ্রান্তে ধূলি৷
মানুষের জীবনে রক্ত-মাংসের শরীরের মূল্য মনুষ্যত্বের দায় বহন করতে৷ মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েও মনুষ্যত্ব যদি অর্জিত না হয়, তবে তার মানব জীবনই বৃথা৷ দুহাত, দুপা নিয়ে জন্মালেই মানুষ মানুষ হয় না৷ মনুষ্যত্ব লাভের দুঃসাধ্য সাধনার মধ্যে দিয়ে মানুষকে মানুষ হতে হয়৷ মানব জীবনে সময়ের মূল্য এখানেই৷ কতবর্ষ শেষ হয়, কত বর্ষ শুরু হয়, মনুস্যত্বও অর্জনের দুর্লভ সাধনায় তার কতটুকু ব্যবহার করে! যতটুকু ব্যবহার করে সেইটুকুই তার জীবনের মূল্য৷
আমাদের জীবন থেকে আর একটা বছর চলে গেল, তার জন্যে বৃথা হাহাকার না করে নতুনকে বরণ করে নেব এই ব্রত নিয়ে, মনষ্যত্ব অর্জনের দুঃসাধ্য সাধনায় যেন প্রতিটি পল অনুপলকে ব্যবহার করতে৷
বাঙলার পথে দিল্লি
মহামতি গোখলে বলেছিলেন বাঙলা আজ যা ভাবে ভারত ভাবে কাল৷ ৬৫ বছরের বাম কংগ্রেস রাজত্বে মানুষ প্রবাদটি তুলতে বসেছিল৷ মমতা বন্দোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রবাদটি এখন অনেকেরই মনে পড়ছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনাকেই অনুকরণ করে ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন, মহারাষ্ট্রে বিজেপি নির্বাচনে বাজিমাত করেছে৷ আগামী বছর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন, তার আগে কেজরিওয়াল দিল্লিতে দুয়ারে সরকার ঘোষনা করে দিলেন৷ অবশ্য এর আগেই পশ্চিমবাঙলার তৃণমূল সরকারের অনুকরণে প্রথমে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুরূপ মহিলা সম্মান যোজনা ও বয়স্কদের জন্যে সঞ্জীবনী যোজনা৷ মহিলা সম্মান যোজনায় আপতত ১০০০ টাকা করে দেওয়া হবে৷ পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় ফিরে আসলে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করা হবে৷ বাঙলার স্বাস্থ্যসাথীর ধাঁচে সঞ্জীবনী যোজনায় ৬০বছরের উর্দ্ধে বয়স্ক ব্যষ্টিরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন৷ এই দুই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করতেই বাঙলার পথ ধরে দুয়ারে সরকার শুরু হবে দিল্লিতে৷